রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান চায় বাংলাদেশ, ঢাকা আসছেন সু চির মন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.এইচ. মাহমুদ আলী বলেছেন, বাংলাদেশ সদ্য সমাপ্ত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্থাপিত পাঁচ দফা প্রস্তাব অনুযায়ী যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচ দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী। আমরা যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে চাই।

১ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে স্মার্ট প্লেজেসের ওপর প্রস্ততিমূলক সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মিজ লিসা এম. বুট্টেনহেই।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা নিজ দেশে জাতিগত নিধনের শিকার হচ্ছেন। স্থান ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা পাঁচ লাখের বেশি মিয়ানমার নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছি। ইতোমধ্যেই বিগত তিন দশকে মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে থাকা সত্ত্বেও মানবিক কারণে আমরা নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের ঠাঁই দিয়েছি।’

মাহমুদ আলী বলেন, ‘আমাদের দেশে মায়ানমারের এই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত নাগরিকদের উপস্থিতি বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করছে।’

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী অভিযানের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের জন্য আগের দিনের তুলনায় বর্তমানে শান্তি অভিযান অনেক বেশি জটিল। তিনি জানান, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীকে আরো কার্যকর করে তুলতে জাতিসংঘ এই বাহিনীতে বেশকিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

মন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর অন্যতম সৈন্য ও পুলিশ প্রেরণকারী দেশ হিসেবে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে জাতিসংঘের সব ধরনের পদক্ষেপে অবদান রাখছি। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষার দায়িত্ব পালন করা এখন আরো জটিল হয়ে পড়ায় চাহিদা ও ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ তার বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে।

ঢাকা আসছেন সু চির মন্ত্রী

এদিকে, মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনা করতে ২ অক্টোবর সোমবার ঢাকা আসছেন দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির দপ্তরবিষয়ক মন্ত্রী উ কিয়া তিন্ত সোয়ে।

মায়ানমারের মন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। আলোচনা শেষে সোমবারই ঢাকা ত্যাগ করবেন তিন্ত সোয়ে।

এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থং তুন রোহিঙ্গা ইস্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন।

গত ২৫ আগস্টে শুরু হওয়া নির্যাতনের জের ধরে পাঁচ লাখ এক হাজার ৮০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু ও নারী। রোহিঙ্গাদের ওপর চলা নির্যাতনে নিন্দা জানায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। গত বৃহস্পতিবার এ সংকট সমাধানে মিয়ানমার সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানান জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ।