লংকাবাংলার রাইট শেয়ারে বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্ত

এসএসসি হোল্ডিংস মনোনীত পরিচালক মির্জা এজাজ আহমেদের ২ শতাংশের কম শেয়ার ধারণ নিয়েই লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ২০১২ সালে রাইট শেয়ার ইস্যু করার অনুমোদন পায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি’র ২০১১ সালে জারিকৃত শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত নোটিফিকেশনটি কোন বাধা হয়নি। তবে ২০১৭ সালে এসে কোম্পানিটিকে রাইট শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখিন হতে হয়েছে। একই বিষয়ে দুই সময়ে বিএসইসি দুই রকম সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

জানাগেছে, এসএসসি হোল্ডিংস লিমিটেডের মনোনিত লংকাবাংলার অন্যতম পরিচালক মির্জা এজাজ আহমেদ। তিনি বা তার প্রতিষ্ঠান (এসএসসি হোল্ডিংস) দীর্ঘদিন ধরে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ১.০৭ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন। এতে শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর বিএসইসির জারিকৃত নোটিফিকেশনের ‘ডি’ ধারা পরিপালন না হওয়ার কারণ দেখিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের রাইট শেয়ার প্রত্যাখান করেছে। অথচ ২০১২ সালে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স যখন রাইট শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন পায়,  তখনও এসএসসি হোল্ডিংস মনোনিত এই পরিচালক মির্জা এজাজ আহমেদের  শেয়ারের পরিমাণ একই অর্থাৎ ১.০৭ ছিল । এ ছাড়া তিনি ওই সময় থেকেই পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তখনো বিএসইসিতে বর্তমানের কমিশনারগণ ছিলেন।

২০১১ সালের ২২ নভেম্বর জারিকৃত বিএসইসির নোটিফিকেশন নং এসইসি/সিএমআরআরসিডি/২০০৯-১৯৩/১১৯/এডমিন/৩৪ এর ‘এ’ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রত্যেক তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে মোট পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারন করতে হবে। অন্যথায় কোম্পানি রাইট শেয়ার ও রিপিট আইপিও’র মাধ্যমে মূলধন বাড়াতে পারবে না বলে ‘সি’ ধারায় বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের উদ্যোক্তা/পরিচালকদের কাছে সম্মিলিতভাবে ৩৪.৬৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

অপরদিকে একই নোটিফিকেশনের ‘ডি’ ধারায় বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রত্যেক পরিচালককে (ইন্ডিপেন্ডেন্ট বা স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যাতিত) মোট পরিশোধিত মূলধনের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। তা না হলে তিনি পরিচালকের পদ হারাবেন।

একই নোটিফিকেশনকে কেন্দ্র করে ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর বিএসইসি আরেকটি নোটিফিকেশন জারি করে। এক্ষেত্রে স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচালক ব্যতীত অন্য পরিচালকদেরকে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে বলা হয়েছে। এ হিসাবে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সে এসএসসি হোল্ডিংস লিমিটেড মনোনীত পরিচালক মির্জা এজাজ আহমেদের জন্য ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক নয়।

বিএসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের একজন পরিচালক ২ শতাংশের কম শেয়ার ধারন করায়, শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত নোটিফিকেশনের ‘ডি’ ধারায় কোম্পানিটির রাইট শেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখান করা হয়েছে। কিন্তু এই ধারায় রাইট শেয়ার নিয়ে কিছু বলা হয়নি এমন প্রশ্নে জানান, কমিশন এটাকেই রাইট শেয়ার ইস্যুর জন্য বিবেচ্য বলে মনে করেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, উদ্যোক্তা/পরিচালকদের কাছে ৩০ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকায় লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের রাইট শেয়ার অনুমোদনে শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত নোটিফিকেশনটি কোন বাধা হওয়ার কথা না। এক্ষেত্রে নোটিফিকেশনের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। কারণ নোটিফিকেশনের কোথাও বলা হয়নি যে, কোন পরিচালক ২ শতাংশের কম শেয়ার ধারণ করলে রাইট অনুমোদন পাবে না। এ ছাড়া নোটিফিকেশনটি মনোনীত পরিচালকদের জন্য প্রযোজ্য না।

বিএসইসির সাবেক এক কমিশনার বলেন, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের রাইট শেয়ার প্রস্তাব নাকোচের বিষয়টি নিয়ে বিএসইসিই ভালো বলতে পারবে। তবে একই পরিমাণ শেয়ার ধারণ নিয়ে ২০১২ সালে রাইট অনুমোদন ও ২০১৭তে প্রত্যাখান হলেতো বিষয়টি ইন্টারেস্টিং।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের রাইট শেয়ার প্রস্তাব নাকোচের অর্ডারটি দেখিনি। তাই না দেখে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব না।

এদিকে শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যে রাইট শেয়ার ইস্যুর ঘোষণাকে কেন্দ্র করে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের শেয়ারে চাহিদার সৃষ্টি হয়। গত বছরের ২৬ অক্টোবর রাইট শেয়ার ঘোষণার সময় কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২৭.৭ টাকা। যা চলতি বছরের ৩ আগস্ট লেনদেন শেষে ৫৭ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

বিএসইসি গত ১ আগস্ট লংকাবাংলা ফাইন্যান্স কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে রাইট শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব নাকোচের বিষয়টি জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, কোম্পানিটি ২টি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে ১টি রাইট শেয়ার ছাড়ার জন্য গত ৩ জানুয়ারি বিএসইসিতে আবেদন করেছিল। এক্ষেত্রে প্রতিটি শেয়ার শুধুমাত্র অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দরে ইস্যু করতে চেয়েছিল।

আজকের বাজার: আরআর/ ০৩ আগস্ট ২০১৭