শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উসকানির দায়ে ৫২ মামলা, গ্রেপ্তার ৯৯

শিক্ষার্থীদের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনে উসকানির দেওয়ার অভিযোগে বিভিন্ন থানায় ৫২টি মামলায় দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এসব মামলার মধ্যে দণ্ডবিধি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মোট ৪৩ মামলায় ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিগুলো আইসিটি আইনে দায়ের করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ(ডিএমপি) সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

পুলিশের ভাষায়, সহিংসতা ও গুজবে জড়িত থাকার অভিযোগে তারা রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দুই সপ্তাহের মাঝে (২৯ জুলাই-১৫ আগস্ট) ৫২টি মামলা দায়ের করেছে।

দুই বেপরোয়া বাসের পাল্লায় পড়ে দুই কলেজগামীর জীবন হারানোকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। বহুলাংশে তা শান্তিপূর্ণ থাকলেও এক পর্যায়ে এসে হামলার অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ এবং গুজবের কারণে সেটি বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে।

গত ২৯ জুলাই উত্তরাগামী জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে বিমানবন্দর সড়কের পাশে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের চাপা দেয়। এতে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজিব নিহত হয়।

মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ কলেজ শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে এবং দুপাশে ব্যারিকেড দেয়। এতে দুই ঘণ্টাব্যাপী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত এই বিক্ষোভে সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী যোগ দিলে তা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে রূপ নেয়।

পরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি হেলমেট পরা ও দেশীয় অস্ত্রবাহী যুবকদের দল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালে আন্দোলনকারীরা আরো তেতে উঠে। সেই হেলমেট পরা যুবকদের কেউ এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।

মূলত নিরাপদ সড়কসহ নয় দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাঝে পুলিশ ৫ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ পালন শুরু করে এবং সমাপ্ত করার পূর্বনির্ধারিত সময় ১১ আগস্ট তা শেষ না করে আরো তিন দিন বাড়ানো হয়।

এসময় ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করার দায়ে মোট ১ লাখ ৮০ হাজার ২৪৯টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা এবং ৫ হাজার ৪১৮টি গাড়ি জব্দ করা হয়। সেই সাথে ৭৪ হাজার ২২৪ জন চালকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা এবং জরিমানা হিসেবে ৭ কোটি ৮ লাখ টাকা আদায় করা হয়।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান বলেন, ১১ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় দায়ের করা ৫১টি মামলায় ৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দণ্ডবিধি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৪৩টি মামলায় ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর আইসিটি আইনে দায়ের করা ৮টি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাকি ১৬ জনকে।

সিআইডির বিশেষ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, ১৫ আগস্ট (বুধবার) দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পল্টন থানায় আইসিটি আইনের ৫৭(২) ধারায় মামলা হয়েছে। তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার ও কামরাঙ্গীরচর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর রমনা বিভাগের বিভিন্ন থানায় মোট ১৪টি মামলা হয়েছে এবং এতে ৩১ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। লালবাগ বিভাগে একটি মামলা হয়েছে এবং তাতে একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। ওয়ারি বিভাগের আরেক মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

মতিঝিল বিভাগের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে ছয়টি এবং তাতে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তেজগাঁও বিভাগে দুই মামলায় ছয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। মিরপুর বিভাগের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে পাঁচটি।

এছাড়া গুলশান বিভাগে দায়ের করা হয়েছে নয় মামলা এবং সেগুলোতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ২৬ জনকে। উত্তরা বিভাগে চার মামলায় তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

আজকের বাজার/এমএইচ