শীঘ্রই আসছে লেনদেনের নতুন প্লাটফর্ম এটিবি

সিকিউরিটিজ লেনদেনে আসছে নতুন প্লাটফর্ম। অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) নামে একটি বিকল্প লেনদেন প্লাটফর্ম গড়ে তুলতে চাইছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ড ও স্বল্প মূলধনি কোম্পানির প্লাটফর্মের বাইরে থাকা সব ধরনের সিকিউরিটিজ নতুন এ বিকল্প প্লাটফর্মে হাতবদল হবে। জনমত যাচাইয়ের জন্য এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত আইনের খসড়া প্রকাশ করেছে বিএসইসি।

এটিবি প্লাটফর্মের আওতায় পুঁজিবাজারের মূল বোর্ড ও ন্যূনতম ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত মূলধন রয়েছে, এমন স্বল্প মূলধনি কোম্পানি বাদে বাকি সব ধরনের সিকিউরিটিজ লেনদেন করতে পারবে। এক্ষেত্রে ১৯৬৯ সালের দ্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্সে সিকিউরিটিজের সংজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।

অর্থাৎ ১৯২০ সালের সিকিউরিটিজ আইনে সংজ্ঞায়িত যেকোনো ধরনের সরকারি সিকিউরিটিজ, কোম্পানির বন্ধকিকৃত সম্পদ, হস্তান্তরযোগ্য শেয়ার, স্ক্রিপ, নোট, ডিবেঞ্চার, ডিবেঞ্চারস স্টক, বন্ড, বিনিয়োগ চুক্তি, ডেরিভেটিভ, কমোডিটি ফিউচারস কন্ট্রাক্ট ও অপশনস কন্ট্রাক্ট নতুন এ প্লাটফর্মের আওতায় লেনদেন করা যাবে।

তবে মূলধন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এটিবিতে তালিকাভুক্ত হওয়া যাবে না। অর্থাৎ এ প্লাটফর্মে তালিকাভুক্ত হলে শেয়ার সংখ্যা বাড়বে না। শুধু একটি লেনদেন প্লাটফর্ম হিসেবে বিক্রেতার অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি ক্রেতার শেয়ারপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করবে এটিবি। এ প্লাটফর্মের সিকিউরিটিজকে এটিবিতে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ হিসেবে অভিহিত করা হবে। মূল বোর্ডের মতো এখানে দ্বৈত তালিকাভুক্তির কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (অল্টারনেটিভ ট্রেডিং প্লাটফর্ম) রুলস ২০১৮, নামে নতুন এ আইনটি কার্যকর হলে এর আগের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ওভার দ্য কাউন্টার) রুলস ২০০১ বাতিল হয়ে যাবে। ফলে এখন থেকে আর কোনো কোম্পানিকে এর পারফরম্যান্সের কারণে ওটিসিতে পাঠানো হবে না। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে তালিকাচ্যুত করা হবে।

প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে, এ প্লাটফর্মের আওতায় লেনদেনের সুবিধা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ইস্যুয়ারকে স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে আবেদন করতে হবে। এজন্য ইস্যুয়ার একজন মার্চেন্ট ব্যাংকারকে নিয়োগ করতে পারবে। আবেদন পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে স্টক একচেঞ্জ আবেদন গ্রহণ কিংবা প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। কমিশন পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে শুনানির সুযোগ প্রদানসাপেক্ষে এটিবি প্লাটফর্মে থাকা যেকোনো সিকিউরিটিজের লেনদেন স্থগিত করতে পারবে।

স্টক ডিলার কিংবা স্টক ব্রোকারের মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদিত প্রক্রিয়ায় এটিবিতে থাকা সিকিউরিটিজের লেনদেন সম্পন্ন হবে। সিকিউরিটিজের ধরন অনুসারে স্টক এক্সচেঞ্জ এটিবির লেনদেন প্লাটফর্মের শ্রেণীকরণ করবে। এক্ষেত্রে অকশন ও নেগোশিয়েশন নামে দুটি শ্রেণী থাকবে। শংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে, খুব শীঘ্রই এটিবি প্লাটফর্ম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জের।

স্টক এক্সচেঞ্জ এটিবির সিকিউরিটিজের জন্য প্রযোজ্য সব ধরনের ফি, কমিশন ও চার্জ নির্ধারণ করবে। কমিশনের অনুমোদনক্রমে এক্সচেঞ্জ এটিবির সিকিউরিটিজের জন্য প্রতিবেদন জমা, ডিসক্লোজার ও তথ্য প্রদানের শর্তাবলি নির্ধারণ করবে। কমিশনের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে এক্সচেঞ্জ এ আইনের আওতায় এটিবি অপারেশনাল হ্যান্ডবুক প্রকাশ করবে, যা এ আইনের একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।

প্রস্তাবিত খসড়া অনুসারে, এ আইনের কোনো বিষয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে সে বিষয়ে কমিশন ব্যাখ্যা প্রদান করবে। কমিশন প্রয়োজনবোধে এ আইনের আওতায় নির্দেশনা ও গাইডলাইন তৈরি করবে। এছাড়া যেকোনো যুক্তিসঙ্গত কারণে কমিশন বিধিনিষেধ কিংবা শর্ত আরোপ করতে পারবে। এ আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে কমিশন। তাছাড়া বিশেষ ক্ষমতাবলে কমিশন এ আইনের যেকোনো বিধান পরিপালন থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে পারবে।

প্রস্তাবিত খসড়ার বিষয়ে বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর ফলে পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা অসংখ্য কোম্পানি, বন্ডসহ সব ধরনের সিকিউরিটিজের শেয়ার লেনদেনের একটি আইনি প্লাটফর্ম তৈরি হবে।

এছাড়া মূল বোর্ডের তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের তুলনায় এটিবিতে রেগুলেশন পরিপালনের ক্ষেত্রেও অনেকাংশেই ছাড় দেয়া হয়েছে। যথাযথভাবে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে এটিবি প্লাটফর্ম মূল বোর্ডের চেয়েও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা তাদের।

আজকের বাজার/জাকির/আরআইএস