শীতে কাতর গাইবান্ধার বাস্তুহারা মানুষ

গাইবান্ধার তিস্তা,যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ সবগুলো নদীর বাঁধে আশ্রিত নদী ভাঁঙ্গা লক্ষাধিক পরিবারকে উচ্ছেদ করার লাল নোটিশ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো)। কোথাও কোথাও উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ায় উৎকন্ঠায় আছেন ছিন্নমূল পরিবারের এই মানুষগুলো। ঠাঁই হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে প্রচণ্ড শীতে বাস্তুহারা ও অসহায় মানুষদের কষ্ট অনেক বেড়ে গেছে।

সারা দেশে নদী রক্ষা, পানি প্রবাহ ঠিক রাখা, নদী দুষণ রক্ষা ও বাঁধের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ফলে গাইবান্ধার তিস্তা,যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রসহ সবগুলো নদীর বাঁধে বসবাসকারী লক্ষাধিক সর্বহারা নদী ভাঁঙ্গা পরিবার পথে বসবেন। কোথায় যাবেন আর কোথায় হবে তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই এ নিয়ে ভাবনার অন্ত নেই তাদের। ইতোমধ্যে গাইবান্ধার ঘাঘট ও আলাই নদীর বাঁধের ঘরবাড়ি সরানো শুরু হয়েছে। গতবছরের ২৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান।পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ঘাঘট নদীর দুষণ রক্ষায় ২৪২ কিলোমিটার বাঁধ এলাকা খালি করা হবে। ঘাঘট নদীর দুই তীরে ১২০ ফিট জায়গা তারা খালি করবেন। আর তিস্তা,যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বাঁধের দুই পাশে ২৭৫ ফিট জায়গা খালি করবেন। এই খালি করার অংশে পড়েছে অন্তত লাখ খানেক ঘরবাড়ি। ঘাঘট নদীর বাঁধে যারা বাস করতেন তারা ভেঙ্গে দেয়ার ভয়ে সরিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু কোথায় যাবেন তা তারা জানেন না!

সরেজমিনে দেখা যায়, বাসিন্দারা ঘরবাড়ির চালা, বেড়া খুলে নদীর পাশেই রেখে দিয়েছেন। যাওয়ার জায়গা নাই অথবা জায়গা কিনে বাড়ি করার মত টাকাও তাদের হাতে নেই। ফলে ঘরের চালা ভেঙ্গে একখানে জড়ো করে রেখেছেন। বাধ্য হয়ে কনকনে শীতেও রাতে ভাঁঙ্গা চালার নিচে শুয়ে বসে থাকেন।

ঘাঘট বাঁধের বাসিন্দা হযরত আলী। তিনি কাকডাকা ভোরে দিনমজুর হিসাবে কাজ করেন মহাজনের দোকানে। সারাদিন বস্তা ও তেলের ড্রাম মাথায় ও ঘাড়ে নিয়ে গোডাউনে নিয়ে যান। সারাদিন কাজ করে কোনদিন ৫০০, কোনদিন ২০০ টাকা আয় করেন। আবার কোনদিন কাজ থাকেও না। যেদিন কাজ থাকেনা পরিবারের কষ্ট আরও বেড়ে যায়।

তিনি জানান, কামারজানিতে বাড়ি ছিল। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদীর ৪ বার ভেঙ্গে যাওয়ায় পথে বসেছেন। বাবা মাকে সাথে নিয়ে আসেন হাতিয়ার বিলে। দুটি ছাপড়া তোলেন ঘাঘট নদীর বাঁধে। এখানেও এসে পড়লেন বিপাকে। খাওয়ার চিন্তা করবেন না মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজবেন এই চিন্তায় হতাশ। ১১ দিন ধরে ঘরভেঙ্গে দেয়ায় ৩টি টিন দিয়ে অন্যের জমির আইলে ছাপড়া করে বাবা মা ও বউ সন্তানদের নিয়ে আছেন। পরিাবরে সদস্যরা শীত, বৃষ্টি, ঘনকুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় জড়াজড়ি করে থাকেন।

হাতিয়া গ্রামের আরেক বাসিন্দা ঠান্ডা মিয়া আফসোস করে বলেন,‘বাপ মায়ে কিছু রাখি যায় নাই। তাই জায়গা না পায়া বউ ছাওয়া নিয়া ভালোই আছিলাম। কিন্তু কি হলো বুঝবার পালেম না। হামার দুঃখ আর কষ্টের কথা কেউ শোনেনা।’

খোলাহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বলেন, ঘাঘট নদীর তীর ঘেঁষে সোজা পূর্ব দিকে নদীর বাঁধ ঘেষে অসংখ্য ঘরবাড়ি করে দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করে আসছিলেন। এদের সংখ্যা সহস্রাধিক। অধিকাংশ পরিবার একাধিকবার নদী ভেঙ্গে খালি হাত পায়ে শহরে আসে। কিন্তু থাকার জায়গা হিসাবে দিনমজুরি অথবা রিকশা চালিয়ে রোজগার করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে টিনের ছাপড়া তোলেন। ছেলে মা-বাবা, ভাই-বোন নিয়ে কোনমতে ছিলেন নদীর বাঁধে। কিন্তু কপালে সইলো না। এখন কোথা যাবেন আর কোথায় ঘর তুলবেন বলতে পারেন না।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, নদী ও বাঁধ রক্ষায় এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। নদীর দুই পাশে পর্যায়ক্রমে সরকারি জায়গা অবমুক্ত করা হবে। এতে কে গৃহহীন হলো তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাববার বিষয় নয়। সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/আথনূর রহমান