সমুদ্র উন্নয়নে বাধা হচ্ছে দূষণ: মন্ত্রী

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বৃহস্পতিবার বলেছেন, সমুদ্রের টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে মানুষের তৈরি দূষণ, ভেজাল ও প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক সামুদ্রিক সম্পদ রয়েছে। সেই সাথে দূষণ, প্রতিকূল পরিবেশ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো অনেকগুলো বাধাও রয়েছে।’

অ্যান আউটলুক ফর সাসটেইনেবল মেরিটাইম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স: চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড ওয়ে এহেড’ র্শীষক একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তব্যকালে তিনি এ কথা বলেন।

রাজধানীর একটি হোটেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি (বিএসএমআরএমইউ) এ সেমিনারের আয়োজন করে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত রয়েছে। ‘আমদের মেরিটাইম নিয়ে অনেক আগ্রহ রয়েছে। সরকার গত এক দশকে অনেক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ব্লু-ইকোনমি নিয়ে আমরা অনেক কাজ করেছি এবং বিএসএমআরএমইউ প্রতিষ্ঠা করেছি।’

এমএ মান্নান বলেন, প্লাস্টিক দূষণ আমাদের জন্য একটি বড় হুমকি।

মন্ত্রী বলেন, টেকসই মেরিটাইম উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে সকল বাধা রয়েছে তা মোকাবিলা করতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয় প্রয়োজন। আমরা আশা করছি সেমিনারটি এ ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নৌ বাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম সম্পদের ওপর জোর দিয়েছিলেন এবং তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ব্লু-ইকোনমির ওপর জোর দিয়েছেন।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল।

তিনির মেরিটাইম উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ও দক্ষ জনবল সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও ভবিষ্যত কার্যক্রমের ওপর আলোকপাত করার পাশাপাশি সেমিনারে উপস্থিত মেরিটাইম পেশাজীবী, শিক্ষাবিদ, গবেষক, নীতি নির্ধারক ও স্টেকহোল্ডারদেরকে ধন্যবাদ জানান।

সেমিনারে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, ইংল্যান্ড, শ্রীলংকা, সুইজারল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের মেরিটাইম বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদরা তাদের প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সেমিনারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনসহ (ইউজিসি) অন্যান্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি, মেরিটাইম সংস্থা এবং মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্রিনউইচ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও গ্লোবাল মেরিটাইম সিকিউরিটি অ্যান্ড ডিফেন্সের উপদেষ্টা প্রফেসর ক্রিস বেলামি। তিনি তার প্রবন্ধে ব্লু-ইকোনমি ও বঙ্গোপসাগরের ভবিষ্যত উন্নয়নের সম্ভাবনার ওপর আলোকপাত করেন।

ব্রিটেনের সাউদাম্পটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এন্ড্রু সার্ডি সার্বিক সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় বিশ্বব্যাপী প্রচলিত মেরিটাইম আইন এবং তার উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ পাশ্ববর্তী দেশের সাথে সমুদ্র সীমানা সমাধানে সফলতার কথা তার প্রবন্ধে তুলে ধরেন।

যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. পিয়েরে ফেইলার তার প্রবন্ধে সুনীল অর্থনীতি ও সমুদ্র প্রশাসনের সমন্বয়ে গঠিত নতুন এক ধারণা হিসেবে ব্লু-গভর্নেন্সের কথা তুলে ধরেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বঙ্গোপসাগরে প্রাকৃতিক জ্বালানি উত্তোলনের বর্তমান অবস্থা উল্লেখ করে এর ভবিষ্যত সম্ভাবনার ওপর তার প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন তার প্রবন্ধে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী দেশসমূহের মধ্যে একটি সুষ্ঠু আঞ্চলিক সামুদ্রিক যোগাযোগ নিশ্চিতে সামুদ্রিক নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতি আলোকপাত করেন।

ভারতের গোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব বায়োটেকনোলজির অধ্যাপক ড. সাভিতা এস কারকার স্বাস্থ্যসেবা পণ্য উদ্ভাবনে সামুদ্রিক প্রাকৃতিক সম্পদের সম্ভাবনার ওপর তার প্রবন্ধে উপস্থাপন করেন।

সেমিনারের বক্তারা বিশ্বব্যাপী মেরিটাইম ক্ষেত্রে টেকসই ব্যস্থাপনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক এবং টেকসই উন্নয়নের সাথে দেশের মেরিটাইম ভবিষ্যত সম্পর্কিত নানাবিধ সম্ভাবনার কথা আলোচনা করেন।

দিনব্যাপী এই সেমিনারে মোট ৩টি সেশনে বক্তারা- আঞ্চলিক সমুদ্র যোগাযোগ এবং নিরাপত্তা, সামুদ্রিক স্বাস্থ্য ও প্রশাসন এবং সামুদ্রিক প্রযুক্তি ও প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ প্রয়োগ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন ও আলোচনা করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) এম খোরশেদ আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আফতাব আলম খান সেশন চেয়ার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

আজকের বাজার / ফজলুর রহমান