সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব প্রকল্পে বাঁধা

বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে পাঁচটি প্রধান বাধা রয়েছে। বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) পিপিপি সংক্রান্ত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সঠিক প্রকল্প বাছাই, অস্বাভাবিক ব্যয়, সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া, অসম্পূর্ণ সম্ভাব্যতা যাচাই, দুর্নীতি,সরকারের নজরদারির অভাব এবং সক্ষমতা ঘাটতি থাকার কারণে পিপিপির প্রকল্প বাস্তবায়ন ধীর গতিতে চলছে।

গত বুধবার ২০ ডিসেম্বর রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে সেমিনারে ‘ফিন্যান্সিয়াল অ্যান্ড নন-ফিন্যান্সিয়াল ইস্যু ইন ইমপ্লেমেন্টিং পিপিপি ইন বাংলাদেশঃ অ্যান এক্সামিনেশন অব পিপিপি প্রজেক্টস ইন পাইপলাইন’ বিষয়ক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডেপুটি গভর্নর বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে যে পরিমাণ অবকাঠামো সম্পর্কিত প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রয়োজন তা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য রেল, টেলিকম, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে ৪৭টির বেশি প্রকল্প পিপিপি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং অর্থায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যা মোকাবেলা করা সম্ভব না হলে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ চৌধুরী বলেন, উদ্যোক্তা তৈরিতে অবদান রাখছে পিপিপি। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বার বার বাড়ার কারণে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া এখানে সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। ব্যাংকিং খাতে সফটওয়্যারের ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে সবচেয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে আইটি খাত। এ খাতে পর্যাপ্ত জনবল দেওয়া হয়না। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগও কম। আইটি খাতে দক্ষ জনবলের কোনো বিকল্প নেই।

মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমীন আরো বলেন, ব্যাংকিং খাতে এখন আইটি জনবল দরকার। কেননা, গ্রীন ব্যাংকিং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আইটির কোনো বিকল্প নাই। অর্থনীতিতে বেসরকারী খাতের অবদান বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়নের জন্য পিপিপি এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
সফটওয়্যার ব্যবহার সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোতে নিন্মমানের সফটওয়্যার ব্যবহার করার কারণে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ধরণের জাল-জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে।

পিপিপি সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরিতে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয় এবং দাতা সংস্থা মিলে মোট ৬৫ টি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ২৪ টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং ৭টি দাতা সংস্থাকে প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক খাতে সফটওয়্যার ব্যবহার সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরিতে অধিকাংশ ব্যাংক থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে।

প্রধান অতিথি হিসেবে সেমিনার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমীন, সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ চৌধুরী, বাংলাদেশ ইনফ্রাচট্রাকচার ফিন্যান্স ফান্ড লিমিটেডের (বিআইএফএফএল) নির্বাহী পরিচালক এস এম ফরমানুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াছিন আলী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড.তৌফিক আহমদ চৌধূরী।

গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী। এছাড়া ‘অ্যান ইভালুয়েশন অব কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার ইন ব্যাংকস অব বাংলাদেশ’ বিষয়ক অন্য একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহাবুবুর রহমান আলম।

আজকের বাজার : জাকির/এলকে ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭