সাকিব তিনে স্থায়ী হোক, সাব্বির ছয়ে, প্রশ্ন সাত-আটে

ক’দিন আগেই বাংলাদেশের সহকারী কোচ রিচার্ড হ্যালসাল একটা কথা বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলে যেমন খেলোয়াড় তাতে বিলাসিতার স্বাধীনতাও আছে। তবে ঠিক বিলাসিতা নয়, মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তার টাইগার দলটা আসলে মোটামুটি পাকা ব্যাটিং লাইন আপ দাঁড় করাতে চাইছে। তাই মাশরাফির সাফ কথা, সাব্বির রহমানকে তিনে চেষ্টা করা হয়েছে। হচ্ছে না। সাকিব আল হাসানের মতো খেলোয়াড়ের অভিজ্ঞতা ওই তিনের সমস্যা দূর করতে পারে। তাই সাকিব তিনেই স্থায়ী করুক নিজের জায়গা, সময় লাগলে লাগুক। সাব্বির নিচের দিকেই পারফর্ম করে একদিন উঠে আসুক ওপরের দিকে। সাত-আট নিয়ে যা চিন্তা।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচটা দাপটে জিতল বাংলাদেশ। সাকিব ম্যাচের সেরা। বোলিংয়ে প্রথম ওভারে জোড়া আঘাত। পরে ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৪৬ বলে করেছিলেন ৩৭। ১৮১ ওয়ানডের অভিজ্ঞতা সাকিবের। নিজেই সেদিন ম্যাচশেষে বলেছেন, ১০ ওভার বল করা এবং তিন নম্বরে বড় ইনিংস খেলার চ্যালেঞ্জটা নিচ্ছেন। সেটা কঠিন চ্যালেঞ্জ বলেই আরো অনুপ্রাণিত বাংলাদেশের টেস্ট এবং টি-টুয়েন্টি অধিনায়ক।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শুক্রবার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। শিরোপায় চোখ বাংলাদেশের। কিছু হিসেব মেটানোরও আছে। তিনে বড় কিছু করার জন্য ওই ম্যাচটাতে চোখ সাকিবের। কিন্তু তাড়াহুড়ায় বিশ্বাসী না নেতা মাশরাফি। তিনি চান, সময় লাগলে লাগুক। ‘সাকিবকে তিনে ব্যাটিং করানোর পিছে আমার যুক্তি এটাই যে, গত তিন চার বছরে অনেক খেলোয়াড়কেই বদল করা হয়েছে। সাকিব গত ১০/১২ বছর ধরে পারফরম্যান্স করছেন। আমি নিশ্চিত যে, ওর চেয়ে বেশি ওর পারফরম্যান্স নিয়ে কেউ উদ্বিগ্ন হবে না। ও যদি একটা দুইটা তিনটা

ম্যাচে ব্যর্থও হয় আমি নিশ্চিত ও’ই একমাত্র খেলোয়াড় যে কামব্যাক করতে পারবে।’ মাশরাফি তার ডেপুটির ওপর প্রবল বিশ্বাস নিয়ে মিরপুরে বৃহস্পতিবার বলে যাচ্ছিলেন, ‘কারণ তার নিজস্ব একটা ভাবমূর্তি বিশ্ব ক্রিকেটে আছে। তাই সংশয়ের বদলে ওর ভাবনাটাই বেশি থাকবে।’

মাশরাফি ব্যাটিং লাইন আপ সাজাচ্ছেন এভাবে। তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয়। তারপর বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার সাকিব। মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদউল্লাহর মতো পরীক্ষিত পারফর্মার তারপর। এই হিসেব থেকেই যে কোনো ম্যাচ জেতার প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামেন মাশরাফি, ‘পাঁচ জনের মধ্যে যদি দুই জন ৪০ বা ৪৫ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করতে পারে আমরা যে কোন উইকেটে জয়ের রানের কাছাকাছি পৌঁছে যাবো। পাশাপাশি রুম্মন (সাব্বির) আছে, ওর ভালো কিছু ইনিংস আছে। ওই সময় যে ইনিংস খেলতে হয় সে সামর্থ্য ওর আছে।’

হালে বিতর্কের মাঝে থাকা সাব্বিরের খেলা নিয়ে সমস্যা নেই। মাশরাফি বলেছেন, তারা তো সাব্বিরকে তিনে অনেক দিন চেষ্টা করলেন। দারুণ ক্রিকেট মাথার মানুষ মাশরাফি ব্যাখ্যা করেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে ওর জন্য এই জায়গাটা (ছয়-সাত) সব সময় ভালো। কারণ ওর ক্যারিয়ার শুরু মাত্র। স্ট্রোক খেলতে পছন্দ করে। ও যদি ৮-১০-১২-১৪ ওভার পায় তাহলে হিসেব করা সহজ। আমার মনে হয় ও এখন তার সেরা পজিশনে আছে। আর সময়ের সাথে ও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে আরও ওপরে উঠে আসবে। যেটা অন্যান্য ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রেও হয়েছে।’

সাব্বিরের ৬। মাশরাফির চিন্তা ৭ ও ৮ নম্বর জায়গা নিয়ে। ‘যারা অলরাউন্ডার আছে যারা দলে সুযোগ পেয়েছে তাদের জন্য বড় সুযোগ।’ ‘সাকিব তিনে আসায় ওই সুযোগ তৈরি হয়েছে।’ মাশরাফি এই কথা বলে এটাকে দলের মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা হিসেবেও উল্লেখ করেন। শীর্ষ ৫ ব্যর্থ হলে বড় রান হবে না মেনেই তখন নেতার বিশ্বাস ও আস্থার হাত ৬, ৭, ৮ নম্বরের ব্যাটসম্যানের ওপর, ‘এখানে যে ধারাবাহিক থাকতে পারবে সে দলে তাড়াতাড়ি খাপ খাইয়ে নিতে পারবে।’

‘সাতে নাসির খেলছে নিশ্চিত, শেষ ম্যাচেও খেলেছে। আমি বলছি আটের জায়গাটা…।’ নাসিরের জায়গাতেও হিসেব নিকেশ আছে। একজন বোলার যদি ব্যাট হাতে ওই জায়গাটা পূরণ করে দিতে পারে তাহলে ওয়ানডের মতো টি-টুয়েন্টিতেও লাভ। কারণ মাশরাফির ভাষায়, নাসিরের মতো মারকুটে কাউকেই দরকার, যে দ্রুত ২০ বলে ৩৫ করে আসতে পারবে। তবে আসল প্রতিযোগিতা যে সাত-আটে সেটা স্পষ্ট অধিনায়কের কথায়, ‘ওই জায়গাতে যদি ভালো কোনো খেলোয়াড় পাই, এখন যেমন আবুল হাসান রাজু আছে, সাইফ উদ্দিন আছে, মিরাজও দলে এসেছে বেশি দিন হয়নি। এদের দায়িত্ব এখানে কীভাবে খাপ খাইয়ে নেবে, শট খেলার সামর্থ্য সেটা ঠিক করা। এদের সবার বোলিং খুব ভালো, কিন্তু ব্যাটিং নিয়ে উন্নতি কিভাবে করছে সেটা ওদের ওপর নির্ভর করছে।’

শেষে আবার নেতা মনে করিয়ে দেন এই লেজের ব্যাটিংয়ের দাবিদারদের, ‘সাকিব তিনে যাওয়ায় এদের জন্য কিন্তু বড় একটা সুযোগ এসেছে। বাংলাদেশের হয়ে তাদের অবদান এত বেশি বাড়াতে পারে যে চাইলে যারা ম্যাচ উইনারও হতে পারে। এখন এটা কিভাবে নেবে সেটা ওদের ব্যাপার। এখন ছয়-সাত-আটকে ঠিক করতে হবে আন্তর্জাতিকে বা বাংলাদেশের পক্ষে তারা তাদের ক্যারিয়ার কিভাবে ঠিক করবে।’

আজকের বাজার: সালি / ১৮ জানুয়ারি ২০১৮