৮০ শতাংশ ভোট পাওয়ার আশা ফখরুলের

বিএনপির বর্জনের মুখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ যে হারে ভোট পেয়েছে, আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলে বিএনপি এর চেয়ে বেশি ভোট পাবে বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮২ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ১৮ জানুয়ারি বিকালে সুপ্রিমকোর্ট মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ফখরুল।

সরকারকে ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে দেখুন। দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে।’

পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে বাংলাদেশে ১০টি সংসদ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত বিজয়ী দল সবচেয়ে বেশি হারে ভোট পেয়েছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের মুখে ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রদত্ত ভোটের ৭৯.১৪ শতাংশ পায়।

এর আগে পাকিস্তান আমলে ১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী ভোট পেয়েছিল ৭৫.১১ শতাংশ। আর ১৯৭৩ সালে দেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই দল ভোট পায় ৭৩.২ শতাংশ।

এরপর এরপর ১৯৮৮ সালে আওয়ামী লীগ ও বি্এনপির বর্জনের মুখে বিজয়ী জাতীয় পার্টি ভোট পায় ৬৮.৪ শতাংশ।

বিএনপি কেন ৮০ শতাংশ পাবে তারও ব্যাখ্যা দেন ফখরুল। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের পতাকা খালেদা জিয়া বহন করে চলেছেন বলে মানুষের বুকে এখনই বিএনপির আদর্শ রয়ে গেছে। এ কারণেই তারা এই দলকে ভোট দেবে।

‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন করতে সরকারের পদত্যাগ করা জরুরি বলেও মনে করেন ফখরুল। বলেন, ‘পদত্যাগ করুন, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করুন, তারপর নির্বাচন অতি শিঘ্রই দিন।’

‘অনেক অনেক ডিক্টেটর, ফ্যাসিস্ট তারা কিছুদিনের জন্য হয়তবা অত্যাচার, নির্যাতন করে গেছে। কিন্তু দীর্ঘ দিনের জন্য তারা পারেনি। তাদের পরিণতি ইতিহাসের আস্তাকুরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।’

‘বাংলাদেশের মানুষ যারা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছে, গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছে তারা অবশ্যই এই ফ্যাসিস্ট, অত্যাচারী, নির্যাতনকারী সরকারকে বাধ্য করবে জনগণের একটি নির্বাচন দেওয়ার জন্য।’

জিয়াকে নিয়ে সরকারের বক্তব্যের সমালোচনা

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন ফখরুল। সেনা প্রধান হিসেবে জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হওয়া নিয়ে নানা সময় প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আবার জিয়াউর রহমানের আমলে রাতে কারফিউ দিয়ে দেশ চালানো, স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমতায় বসানো, দালাল আইন বিলুপ্ত করে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করে তাদের রাজনৈতিক অধিকার দেয়ার সমালোচনাও করে আসছেন প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে এসব বক্তব্যের সমালোচনা করেন ফখরুল। বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগের লোকের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম মিথ্যাচার করে। এই মিথ্যাচারগুলো এজন্য করে যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে শুধু তারা ভয় পায় না, তারা মনে করে তার আদর্শ, দর্শন বাংলাদেশের সব মানুষের কাছে চলে যায় তাহলে তাদের (আওয়ামী লীগের) অস্তিত্ব থাকবে না।’

জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার সময়ের কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘আমরা দেখেছি, এই আওয়ামী লীগ সেদিন ছিল না, বাকশাল ছিল। তাদের দলের কোনো অস্তিত্ব ছিল না, সে দলকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়ে।’

১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত জিয়াউর রহমানের দেহাবশেষ ঢাকায় আনার কথাও উল্লেখ করেন ফখরুল। বলেন, ‘এই মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে সমগ্র ঢাকায় মানুষ দিয়ে সয়লাব হয়ে গিয়েছিল। সেদিন কৃষক তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। এক রিক্সাওয়ালা কালো পতাকা নিয়ে কাদতে কাঁদতে ওখান থেকে চলে গিয়েছিল।’

‘খালেদাকে কষ্ট দিচ্ছে সরকার’

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলা নিয়েও কথা বলেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কষ্ট দিচ্ছে।’

‘আজকে আমরা সবাই জানি এই মামলা একটা মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু এই মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে সপ্তাহে আজ পাঁচ দিন প্রায় আদালতে আটকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

‘মিথ্যা মামলা দিয়ে বেগম জিয়াকে আদালতে আটকে রেখে হেনস্থা করতে চায়। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার পর মামলা দিয়ে ঘায়েল করছে। তারা আমাদেরকে একঘরে করতে চায়।’

‘আমাদের ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে এই ফ্যাসিস্ট সরকার’-এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই অচলায়তন ভেঙে ফেলতে হবে। আমরা কখনো আর গণতন্ত্র বিরোধী শক্তিকে দেশের ক্ষমতায় দেখতে চাই না।’

‘আমরা চাই না বিএনপিকে ধ্বংস করে দিয়ে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়ে, স্বাধীনতাকে বিপন্ন করে একটা অপশক্তি আমাদের বুকের উপরে দিনের পর দিন চেপে থাকুক।

আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এছাড়া মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষক মাহবুব উল্লাহ এবং বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা এ সময় বক্তব্য রাখেন।

আজকের বাজার : এলকে ১৮ জানুয়ারি ২০১৮