অভিভাবকরা উন্মাদের মতো টাকার পেছনে ছুটছে: প্রধানমন্ত্রী

ফাইল ছবি

সন্ত্রাসীদের সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে রুখে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার র‌্যাবের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকার কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দফতরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামে সন্ত্রাসবাদের স্থান করে না। কিন্তু একটি গোষ্ঠী ইসলামকে কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের মদদ দিচ্ছে। যারা সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী তাদের কোনো দেশ নেই, তাদের কোনো ধর্ম নেই। তারা সমাজের শত্রু, দেশের শত্রু, জাতির শত্রু।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে জঙ্গিবাদ শুধু আমাদের দেশের সমস্যা না এটা এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। আমাদের দেশে একটা অঘটন ঘটে গেছে। তা হলো হলি আর্টিজানে হামলা। অনেকে ভেবেছিল আমরা আমাদের এই সমস্যাটাকে মোকাবিলা করতে পারব না। কিন্তু র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে আমরা হলি আর্টিজানের বিষয়টি মোকাবিলা করেছি।

তিনি বলেন, শুধু হলি আর্টিজান নয়, আশুলিয়া, মিরপুর, দারুস সালামে জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে র‌্যাব। এ জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।

জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সামাজিক সচেতনতা দরকার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা ভুলপথে যেন না যায় সে জন্য আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। অভিভাবক, শিক্ষক, ইমাম, সর্বোপরি সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রচেষ্টায় জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব সেটার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

তিনি বলেন, সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে এভাবে সচেতন করে তুলতে হবে। বাবা-মাকে নজর রাখতে হবে ছেলে-মেয়ে কোথায় যায়? আমাদের অনেক অভিভাবক আছে তারা টাকার পেছনে ছুটে বেড়ায়। তাদের সন্তান কোনো টাকা চাইলে হাতের মুঠোয় টাকা গুঁজে দিয়ে মনে করে সন্তানের প্রতি অনেক দায়িত্ব পালন করেছে। অভিভাবকরা উন্মাদের মতো টাকার পেছনে ছুটছে। তাদের সন্তানদের কোনো কিছুর অভাব নেই। তারপরও তারা সন্ত্রাসবাদে জড়াচ্ছে, মাদকে জড়াচ্ছে।

শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষকদের খেয়াল রাখতে হবে কোনো ছেলেমেয়ে যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশিদিন অনুপস্থিত না থাকে। কোথায় আছে, কী করছে এ সব বিষয়ে তাদের খোঁজ-খবর নিতে হবে। তারা সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়ে খেয়াল রাখতে হবে।

সুন্দরবনে জলদস্যুতের উৎপাত দমনে র‌্যাবের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুন্দরবনে দেখি জলদস্যুদের উৎপাত। আমরা এর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলাম। র‌্যাব জলদস্যুদের মোকাবিলায় সফলতা অর্জন করেছে। কঠোর অবস্থান থাকার পরে অনেকে জলদস্যুতা ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জলদস্যুরা শুধু আত্মসমর্পণ করলে হবে না, তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থাও করে দিতে হবে। তাদের আমরা আর্থিক সহায়তা দিচ্ছি। তারা জামিন পাওয়ার পর যেন স্বাধীন জীবিকায় যেতে পারে আমরা সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলতেন, ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না। ৭৫ এ তাকে হত্যার পর বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করা হয়েছিল। ভিক্ষা ছাড়া কোনো উন্নয়ন হতো না, বাজেট হতো না। আমরা এখন নিজেদের বাজেট নিজেরাই করতে পারি। এমনকি উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ শতাংশ হচ্ছে নিজেদের অর্থায়নে।

তিনি বলেন, পদ্মাসেতু এখন নিজেদের টাকায় করতে পারছি, এটি ছিল আমাদের জন্য বিরাট একটি চ্যালেঞ্জ। আগে মনে হতো বিশ্বব্যাংক আমাদের কোনো অনুদান না দিলে আমরা কোনো উন্নয়ন করতে পারব না। কিন্তু আমরা ক্ষমতায় এসে এই অনুদান শব্দটি পরিহার করেছি। তারা এখন আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। আমরা সুদের বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে টাকা ধার করি এবং সেই টাকা পরিশোধ করি। সুতরাং তারা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এটি এমনি এমনি হয়নি, এটি আমাদের অর্জন করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আমাদের একান্তভাবে কাজ করে যেতে হবে। বাংলাদেশের অগ্রগতি আর থেমে থাকবে না। ২০৪১ সালে আমাদের দেশ কেমন হবে আমরা তার পরিকল্পনা করেছি। আশা করি, বাংলাদেশ সত্যিকার সোনার বাংলা হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা হবে।

এস/