রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক কাল

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট ইস্যু নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে বৈঠকে বসছে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য জাতিসংঘের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি)।

নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সোমবার দুপুর ৩টায় অথবা বাংলাদেশের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১টায় বৈঠকটি শুরু হবে। খবর ইউএনবি।

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনাটি পরিষদের প্রতিনিধিদের নিয়ে একান্তে (ক্লোজ ডোর) অনুষ্ঠিত হবে।’

তিনি আরো বলেন, পরিষদ প্রধানত গত দুই মাসে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতের কথা শুনবেন। এছাড়াও সেখানে জাতিসংঘের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরাও মতামত বা তথ্য তুলে ধরবেন।

ওই কর্মকর্তা জানান, নিরাপত্তা পরিষদের ওই একান্ত বৈঠকে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে না।

তবে পরবর্তী মাসের শেষের দিকে যুক্তরাজ্যের সভাপতিত্বে নিরাপত্তা পরিষদের একটি উন্মুক্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সংকটের একটি স্থায়ী ও টেকসই সমাধানের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের যথাযথ পদক্ষেপ চায় বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব (অ্যান্তোনিও গুতেরেস) বলেছেন রোহিঙ্গাদের রক্ষায় বিশ্ব ব্যর্থ হচ্ছে। আমি আশা করি ইউএনএসসির প্রতিনিধিদের সফরের পর এখন এ পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের আরো ভালো ধারণা তৈরি হয়েছে। আমাদের আশা, ইউএনএসসি এ বিষয়ে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে।’

মিয়ানমার সরকার যাতে সংকটের দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করে সে জন্য তাদের ওপর অব্যাহত চাপ প্রয়োগের বিষয়ে জোর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নিধনের’ শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা।

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন তাদের মাঠ পর্যায়ের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা প্রতিবেদন আগামী সেপ্টেম্বরে জেনেভার মানবাধিকার পরিষদের নিকট জমা দিবে।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর, ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের মার্চে মানবাধিকার পরিষদে তাদের আপডেট তথ্য মৌখিকভাবে জানানো হয়।

সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের পর মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ক্রিস্টাইন স্ক্রানের বার্গেনের গত ১৪-১৬ জুলাই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর করেন।

সফরকালে তিনি বলেন, এই চলমান সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন। পাশাপাশি মিয়ানমারে অপরাধের জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

কর্মকর্তারা জানান, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রেখে মিয়ানমারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান চায় বাংলাদেশ।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে গত বছরের ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক চুক্তির বাস্তবায়ন দেখতে চায় বাংলাদেশ এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা।

এছাড়াও নিরাপদ ও মর্যাদার সাথে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে গত ৬ জুন জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মিয়ানমারের সাথে করা চুক্তিরও বাস্তবায়ন চায় তারা।

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন, তাদের জীবনযাপন সুবিধা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে আগামী ৮ আগস্ট মিয়ানমার যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী।

আজকের বাজার/এমএইচ