অক্টোবরে ওপেকের চুক্তির ৯২% বাস্তবায়ন

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়াতে পণ্যটির বৈশ্বিক উত্তোলন কমিয়ে আনার চুক্তি করেছিল অর্গনাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজভুক্ত (ওপেক) দেশগুলো। রাশিয়াসহ ওপেকের বাইরের বেশ কয়েকটি দেশ চুক্তিটি সমর্থন করে। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তির শর্ত ৯২ শতাংশ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। রয়টার্সের এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। মূলত কুর্দি সংকটের জের ধরে ইরাক থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি ব্যাপক পরিমাণে কমায় চুক্তি বাস্তবায়নে এ সফলতা দেখা গেছে। এ খবরের জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে দুই বছরের সর্বোচ্চের কাছাকাছি অবস্থান করছে।

খবর রয়টার্স ও অয়েল প্রাইস ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসে ওপেকের চুক্তির ৯২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এর আগের মাসে চুক্তি বাস্তবায়নের হার ছিল ৮৬ শতাংশ। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধান চুক্তির শর্ত পূরণের হার ৬ শতাংশ বেড়েছে। গত আগস্টে চুক্তির ৮৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছিল সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। আর জুলাইয়ে এর পরিমাণ ছিল ৮৬ শতাংশ। চার মাসের মধ্যে অক্টোবরে চুক্তি বাস্তবায়নের হার সর্বাধিক ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাধীনতার প্রশ্নে কুর্দিদের সঙ্গে ইরাক সরকারের বিরোধের জের ধরে অক্টোবরে দেশটি থেকে জ্বালানি তেল রফতানি দৈনিক প্রায় ৮০ হাজার ব্যারেল কমেছে। মূলত এ কারণে অক্টোবরে চুক্তির শর্ত বাস্তবায়ন ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া সৌদি আরব, ভেনিজুয়েলা, লিবিয়া, নাইজেরিয়া, গিনিসহ বেশ কয়েকটি দেশের উত্তোলন খাতে মন্দাভাব এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

চলতি বছরের অক্টোবরে ইরাকে দৈনিক ১ লাখ ২০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন হয়েছে। মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে দেশটির কিরকুক ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে পণ্যটির সরবরাহ বিপুল পরিমাণ কমেছে। শেষ সপ্তাহে এসে পণ্যটির সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। ২০১৪ সাল থেকে কুর্দি যোদ্ধাদের দখলে থাকা কয়েকটি তেলকূপের দখল নেয় ইরাকের সরকারি বাহিনী। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দামে এ সরবরাহ সংকটের প্রভাব দেখা যায়। এদিকে লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলায়ও অক্টোবরে পণ্যটির উত্তোলন কমেছে। এ সময় কূপের সংস্কারকাজ চলমান থাকায় জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমিয়েছে আলজেরিয়াও। ওপেকের সদস্য হয়েও লিবিয়া ও নাইজেরিয়া চুক্তির আওতার বাইরে রয়েছে। গত জুলাইয়ে দেশ দুটিতে পণ্যটির সম্মিলিত উত্তোলন বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে। অক্টোবরে এর পরিমাণ কমে এসেছে। নাইজেরিয়ায় পণ্যটির উত্তোলন দৈনিক ৭০ হাজার ব্যারেল কমেছে। তবে লিবিয়ায় পণ্যটির উত্তোলন জুলাইয়ের তুলনায় কমলেও গত মাসের তুলনায় দৈনিক ৭০ হাজার ব্যারেল বেড়েছে। মূলত সাহারা অঞ্চলের কূপগুলোয় স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় দেশটিতে পণ্যটির উত্তোলন বেড়েছে। আফ্রিকার আরেক দেশ অ্যাঙ্গোলা থেকে পণ্যটির রফতানি ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। তবে ইকুয়েটরিয়াল গিনি ও ইন্দোনেশিয়ায় পণ্যটির উত্তোলন কমেছে। এদিকে শীর্ষ রফতানিকারক দেশ সৌদি আরবে পণ্যটির উত্তোলন দৈনিক ৩০ হাজার ব্যারেল কমেছে। সৌদি আরব, ইরান, রাশিয়াসহ জ্বালানি তেল উত্তোলনকারী বড় দেশগুলো ওপেকের বেঁধে দেয়া সীমা মেনেই অক্টোবরে পণ্যটি উত্তোলন করেছে। এসব দেশের সম্মিলিত উদ্যোগে চুক্তির শর্ত বাস্তবায়ন ৯০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

রিভকিন সিকিউরিটিজের পণ্য বাজারবিষয়ক বিশ্লেষক উইলিয়াম লাওলিন বলেন, অক্টোবরে চুক্তির ৯২ শতাংশ বাস্তবায়ন ওপেকের জন্য বড় একটি সুখবর। আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে চুক্তিটির মেয়াদ শেষ হবে। এখন চুক্তিটির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে। চলতি মাসের শেষে ওপেকের বৈঠক থেকে এ-বিষয়ক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তার আগে এ সংবাদ আলোচনাকে আরো বেগবান করবে। সরবরাহ কমার জের ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম বাড়বে।

ইরাক থেকে রফতানি কমার খবরে গতকাল আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে তেজিভাব দেখা গেছে। এদিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ব্যারেল ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। এদিন ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই বিক্রি হয় ৫৪ ডলার ৬৫ সেন্টে, যা আগের দিনের তুলনায় ২৭ সেন্ট বেশি। গত জুনে চলতি বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দামে পণ্যটি বিক্রি হয়েছিল। সে তুলনায় গতকাল পণ্যটির দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে এদিন ব্রেন্ট ক্রুডের দাম আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। দিন শেষে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড বিক্রি হয় ৬১ ডলার ১৫ সেন্টে, যা আগের দিনের তুলনায় ২১ সেন্ট বেশি। এদিন পণ্যটির দাম দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চের (৬১ ডলার ৪১ সেন্ট) কাছাকাছি অবস্থান করেছে।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ২ নভেম্বর ২০১৭