অবশেষে বিমানবন্দর সড়ক ছাড়ল তবলিগ অনুসারীরা

সাত ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অবস্থানের শেষে বিমানবন্দর সড়কের দখল ছাড়ল তাবলিগ জামাতের অনুসারীরা। সড়ক দখল করে সমাবেশ করায় তীব্র ভোগান্তি শেষে বিকাল সাড়ে চারটার পর যান চলাচল শুরু হয় বিমানবন্দর সড়কে।

দিনভর সড়কে তাদের অবস্থানের কারণে ভোগান্তির পর এই অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় সমাবেশ থেকে। মহাখালীর উত্তর অংশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদেরকে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে এবং মহাখালীর দক্ষিণ অংশের মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদেরকে কাকরাইল মসজিদ এলাকায় অবস্থান নিতে বলা হয়। ইজতেমার ব্যবস্থাপনা এই মসজিদ থেকেই করা হয়।

বিশ্ব ইজতেমায় দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর আসা ঠেকাতে বুধবার সকালে বিমানবন্দর এলাকায় এই অবস্থান নিতে থাকে তাবলিগ জামাতের অনুসারী বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা।

বিক্ষোভকারীরা মাওলানা সাদকে বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে বলেন, যে কোনো মূল্যে তাকে দিল্লি ফেরত পাঠানো হবে। যে পর্যন্ত তাকে দিল্লি ফেরত পাঠানো না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ইজতেমা গেটে অবস্থান চলবে। কোনো অবস্থানেই তাকে্ ইজতেমা ময়দানেন ঢুকতে দেয়া হবে না।

অবস্থান স্থগিতের পর মুসুল্লিরা বিমানবন্দর সড়কেই আসরের নামাজ পড়েন। এরপর বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় ফিরে যায় আর সড়কের দুই পাশে যান চলাচল শুরু হয়।

তবলিগ অনুসারীরা দিনভর সড়ক দখল করে সমাবেশ করায় বিমানবন্দর মোড়ে সড়কের দুই পাশেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে লাখো মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠে। বিকল্প না দেখে গাড়ি থেকে নেমে মানুষ দীর্ঘপথ হেঁটে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয়।

আবার মূল সড়কে তীব্র যানজটের কারণে যেসব গাড়ি অলিগলি দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল, সেগুলোও আটকে পড়ে সেখানেই থমকে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এক পর্যায়ে উত্তরার একটি বড় অংশ জুড়েই ছড়িয়ে পড়ে যানজট।

বিমানবন্দর মোড়ের ওভার পাসে এভাবে মানুষকে কষ্ট দিয়ে কর্মসূচি পালন করার বিষয়ে পথচারীদের সঙ্গে একদল মুসুল্লিদের কথাকাটাকাটি হতেও দেখা যায়।

একজন পথচারী মুসুল্লিদের ওই দলটিকে বলেন, ‘আপনারা রাস্তা আটকে মানুষকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন কেন? এটা কোন ধরনের ইসলাম?’।

এরপর একজন মুসুল্লি বলেন, ‘যারা এর বিরোধিতা করবে তারা ইসলামের বিপক্ষে। কারণ, যার জন্য (মাওলানা সাদ) তারা অবস্থান নিচ্ছেন, তিনি ইসলামকে বিতর্কিত করছেন।’

২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মাওলানা সাদ বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করে আসছেন। তবে তার সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় এবার তার ইজতেমায় অংশগ্রহণ নিয়ে তাবলিগ জামাতের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়।

এর মধ্যেই বুধবার সকাল ১০টায় মাওলানা সাদের ঢাকায় আসার কথা ছিল বিমানে করে। কিন্তু তাকে দেশে ঢুকতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়ে অবস্থান নেয় তার বিরোধীরা।

বিমানবদর এলাকা ছাড়াও আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার মাদ্রাসা থেকেও আসতে থাকে বিক্ষোভকারীরা।

এ সময় সেখানে অবস্থান কর্মসূচি থেকে বারবার দাবি পূরণ না হলে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের মতো পরিস্থিতি তৈরির হুমকি দেয়া হয়।

এই বিক্ষোভ চলাকালে বিমানবন্দর এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা ছিল বিস্ময়কর নমনীয়। সড়ক দখল করে সভা-সমাবেশ ঠেকাতে সাম্প্রতিক সময় পুলিশ কঠোর অবস্থান দেখালেও আজ তারা সড়কে অবস্থান নেয়া ব্যক্তিদের কিছুই বলেনি।

সেখানে অবস্থানকারী পুলিশ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদেরকে কিছুই বলেননি। তবে তারা বিমানবন্দর মোড় এলাকায় বাবুস সালাম আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও এতিমখানায় বিক্ষোভকারীদের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেছেন।

আজকের বাজার : এলকে/ ১০ জানুয়ারি ২০১৮