অবসরের ঘোষণা দিলেন ডেল স্টেইন

শেষ পর্যন্ত ইনজুরির কাছে হার মেনে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন আধুনিক ক্রিকেটে অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকান ডেল স্টেইন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আরো কিছুদিন ক্যারিয়ার চালিয়ে নেবার লক্ষ্যেই স্টেইন টেস্ট ক্রিকেট থেকে সড়ে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় স্টেইনের। গত ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে তিনি নিজের সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। ৯৩ টেস্টে ২২.৯৫ গড়ে স্টেইন ৪৩৯টি উইকেট দখল করেছেন। ২০০৮ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে রেকর্ড ২৬৩ সপ্তাহ তিনি আইসিসি টেস্ট বোলিং র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছিলেন।

৩৬ বছর বয়সী স্টেইন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বকালের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছেন। পুরো ক্রিকেটীয় ইতিহাসে এই তালিকায় তিনি শীর্ষ ১০জন বোলারের মধ্যে আছেন। অবসর প্রসঙ্গে স্টেইন বলেছেন, ‘যে ফর্মেটটাকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালবাসি সেই জায়গা থেকেই আজ আমি সড়ে দাঁড়ানোর ঘোষনা দিচ্ছি। আমার মতে খেলাটির সেরা ও আকর্ষণীয় ফর্মেট হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট। এটা একজন খেলোয়াড়ের মানসিক, শারিরিক ও আবেগের পরীক্ষা নেয়। ক্যারিয়ারে আর কখনই টেস্ট খেলতে পারবো না, বিষয়টা মেনে নেয়া অনেক কঠিন। এখন থেকে আমার সব গুরুত্ব থাকবে ওয়ানডে ও টি-২০ ম্যাচের ওপর। ছোট ফর্মেটে প্রোটিয়াদের প্রতিনিধিত্ব করতে আমি মুখিয়ে আছি।’

দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম ম্যাচ জয়ী পারফর্মার হিসেবে স্টেইনকে বিবেচনা করা হয়। যে ৪৮টি টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা জয়লাভ করেছে তার প্রত্যেকটিতে স্টেইন খেলেছেন। ২০০৮ ও ২০১২ সালে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় টানা সিরিজ জয়ী দলেও তিনি ছিলেন। ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্ব টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ স্থান দখল করেছিল।

২০০৮ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে স্টেইন অন্যতম স্মরণীয় বোলিং করেছিলেন। ম্যাচে ব্যাট হাতে তার করা টেস্ট সর্বোচ্চ ৭৬ রানে দক্ষিণ আফ্রিকা ঘুড়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এরপর ১৫৪ রানে ১০ উইকেট দখল করে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রোটিয়াদের প্রথমবারের মত সিরিজ জয় উপহার দিয়েছিলেন।

১৫০ কিমি গতিতে বল করা তার জন্য নিয়মিত একটি ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ২৬ বার তিনি পাঁচ কিংবা ততোধিক উইকেট দখল করেছেন। প্রত্যেকটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষেই তিনি এই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। এরমধ্যে পাঁচটি এশিয়ান দেশও রয়েছে। ২০১৫ সালে স্টেইন ৪০০তম টেস্ট উইকেট দখল করেছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে ইনজুরি তার ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের আগে ডান কাঁধের হাড়ে চিড় ধরায় আট মাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ছিটকে পড়েন স্টেইন।

২০১৬ সালের নভেম্বরে পার্থে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টে তিনি দলে ফিরে আসেন। সেই ম্যাচে কাঁধের আরেকটি ইনজুরিতে পড়ে প্রায় বছরখানেকের জন্য বিশ্রামে যেতে বাধ্য হন। এরপর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে কেপ টাউনে ভারতের বিপক্ষে আবারো স্টেইন মাঠে ফিরেছিলেন। কিন্তু পায়ের গোড়ালির ইনজুরিতে পড়ে সিরিজের বাকি ম্যাচগুলো তার আর খেলা হয়নি। গত বছর শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে সাবেক বোলার শন পোলকের ৪২১ টেস্ট উইকেটের রেকর্ড স্পর্শ করেন। তবে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে তিনি উইকেটবিহীন ছিলেন। অবশেষে ডিসেম্বরে সেঞ্চুরিয়নে পাকিস্তানের বিপক্ষে ফখর জামানকে আউট করে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার রেকর্ড ভাঙ্গতে সমর্থ হন।

দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস টুইট করেছেন, ‘তার প্রজন্মে তিনিই সেরা।’
২০১৮-১৯ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকার পাঁচটি হোম টেস্টের দলেই স্টেইনকে নেয়া হয়েছিল। এমনকি সদ্য সমাপ্ত ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেও তাকে দলভূক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এপ্রিলে ভারতীয় প্রিমিয়ার লিগ খেলার সময়ই তিনি আবারো পুরোন কাঁধের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। যে কারনে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সাথে ইংল্যান্ড সফরে গেলেও পরবর্তীতে একটি ম্যাচও না খেলে দেশে ফেরত আসেন।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান