আফ্রিকা মহাদেশে ফাটল, হচ্ছে দু’ভাগ!

আজ থেকে প্রায় ১ কোটি ৩৮ লক্ষ বছর আগে দু’ভাগে বিভক্ত হয়েছিল আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিমাংশ। তৈরি হয়েছিল নতুন মহাদেশ দক্ষিণ আমেরিকা। দুই মহাদেশের মাঝখানে সৃষ্টি হয়েছিল অতলান্তিক মহাসাগরের। সেই ইতিহাসের আবার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এবার হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশের পূর্বাংশ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, গত কয়েক দিন হল দক্ষিণ-পশ্চিম কেনিয়ায় একটা বড়ো অংশ জুড়ে একটি বিশাল ফাটলের সৃষ্টি হয়ছে। ফাটলের প্রভাব এতটাই বেশি যে একটি জাতীয় সড়ক তার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাঝেমধ্যেই সেই অঞ্চলে মৃদু ভূমিকম্পও অনুভূত হচ্ছে।

জানা গেছে, গত ১৯ মার্চ থেকে শুরু হয়ে এখন ধীরে ধীরে বাড়ছে এই ফাটল। আফ্রিকার রিফট ভ্যালির অংশ, সুসওয়া অঞ্চলে দেখা দিয়েছে এই ফাটল। ভূতাত্ত্বিকভাবেই রিফট ভ্যালিতে ফাটল দেখা যাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু সাধারণত বছরে কয়েক মিলিমিটার করে বাড়ে এ সব ফাটল। কিন্তু এ বার সেই ফাটল বাড়ছে খুব দ্রুতগতিতে। সেই সঙ্গে বিশাল আকারও ধারণ করছে এটি।

যে অঞ্চল জুড়ে এই ফাটল দেখা দিয়েছে সেই পূর্ব আফ্রিকার রিফট ভ্যালি তিন হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ। উত্তরে রয়েছে এডেন উপসাগর এবং দক্ষিণে জিম্বাবোয়ে। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, কেনিয়ায় ফাটলটি প্রকট হলেও আসলে পুরো রিফট ভ্যালি জুড়ে এই ফাটল চলছে। কেনিয়ার কিছু জায়গায় ফাটল এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

ভূতাত্ত্বিকদের মতে, টেকটনিক প্লেটের সক্রিয়তার জন্য ক্রমশ আলাদা হতে শুরু করেছে আফ্রিকা। বহু বছর আগে গোটা আফ্রিকা মহাদেশটাই একটি মাত্র টেকটনিক প্লেটের ওপরে ছিল। কিন্তু সেটি ক্রমশ দু’টো প্লেটে বিভক্ত হয়ে যায়। গঠিত হয়, সোমালি এবং নুবিয়ান প্লেট। পাতের বিপরীত মুখি টান এর সূত্র ধরে, দু’টো প্লেট কিছুতেই এক সঙ্গে থাকতে চাইছে না, আসত আসতে একে এপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সেই কারনেই তৈরি হচ্ছে ফাটল।

ভূতাত্ত্বিকদের মতে এই বিচ্ছেদ ঘটতে ঘটতে এক দিন দু’টো সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যাবে। শুধু এই দু’টোই নয়। আরও একটি টেকটনিক প্লেটের সক্রিয়তা রয়েছে। সেটি হল আরব প্লেট। সেটিও আবার নিজের দিকে মহাদেশের একটি অংশকে টেনে নিতে চায়। এর ফলে কেনিয়ার অবস্থা পরেছে সঙ্কটে। কেনিয়ে একসঙ্গে তিনটে প্লেটের অপর অবস্থা করে রয়েছে এখনও। সেই কারনেই কেনিয়াকে তিনটে প্লেট তিন দিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

গ্রেট রিফট ভ্যালি এমন একটি ভূতাত্ত্বিক কাঠামো, যা থেকে গবেষকরা বলতে পারেন, এই বরাবর ফাটল তৈরি হয়েকি আফ্রিকার মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা হয়ে যাবে সোমালিয়া, ইথিওপিয়ার অর্ধেকটা, কেনিয়া এবং তানজানিয়া। এই রিফটের জায়গায় তৈরি হবে একটি সমুদ্র। এই প্রক্রিয়ায় মহাদেশটির দু’টি ভাগে সম্পূর্ণ বিভক্ত হয়ে যেতে সময়ে লাগবে একনও প্রায় ৫০ লক্ষ বছর।

এস/