আসন ছাড় পেতে মরিয়া গণদল,যোগ দিচ্ছে জাসদ-জাপাসহ বিভিন্ন দলের নেতারা

কোন ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড ছাড়াই দীর্ঘ ৯ মাস পর,দল ছাড়লেন ট্রুথ পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক সাংসদ গোলাম হাবিব দুলাল। গেলো ২৫ ডিসেম্বর সাদা কাগজে লিখিত পত্রে গণমাধ্যমকে তিনি জানান,ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না তিনি। সে কারণে স্ব ইচ্ছায় ট্রুথ পার্টির চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে,দলের মহাসচিব বরাবর লিখিত পত্রে পদত্যাগের ঘোষনা দেন সাবেক এই সাংসদ।

এর মধ্যদিয়ে মাত্র ৯ মাস আগে এনডিএম বিলুপ্ত করে গঠিত ট্রুথ পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে অনেকটা ব্যর্থতা নিয়েই জাপা ছেড়ে আসা সাবেক এই সাংসদ, ফের দল ছাড়লেন বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের। তবে তিনি ট্রুথ পার্টি ছাড়লেও,ছাড়েননি রাজনীতি। গোলাম হাবিব দুলাল, ‍বাংলাদেশ সত্যবাদী দল নাম আবারো নতুন দল গঠন করেছেন বলে দাবি করেন ট্রুথ পার্টির নেতাকর্মীরা । দলীয় একটি সূত্র জানায়,সাংসদ হিসেবে দলের নিবন্ধন পেতে ব্যর্থ হয়ে অনেকটা হতাশা নিয়েই তিনি দল ছেড়েছেন। এছাড়া ক্ষমতাসীনদের গঠনমূলক সমালোচনা নয়, কট্টর সমালোচনার চাপ দিয়েও দলীয় নেতাকর্মীদের বাধ্য করতে ব্যর্থ হয়ে গোলাম হাবিব দল ছেড়েছেন বলেও অনেকের অভিযোগ।

তবে ট্রুথ পার্টির মহাসচিব,সাবেক জাপা নেতা এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের গোপন লবিং রয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দু নেতার মাঝে বিশ্বাস অবিশ্বাসের দড়ি টানাটানিতে চেয়ারম্যানকে দল ছাড়তে হলো বলে অভিযোগ দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকের। তবে এসব বিষয় কথা বলতে গোলাম হাবিব দুলালের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও,তাকে পাওয়া যায়নি। দু’নেতার সর্ম্পকের বিষয়ে গণদলের চেয়ারম্যান বলেন,তিনি বয়স্ক মানুষ,শারীরিক নানা সমস্যা আছে। আল্লাহ তালা তাকে ভাল রাখুক,এই দোয়া করি। আমাদের সর্ম্পকের অবনতি হয়নি। দলীয় সূত্র জানায়,গোলাম মাওলা চৌধুরী,নিজ নির্বাচনী আসন ফেনী ১ ঠিক রাখতে এরইমধ্যে জোটের লবিং মজবুত করতে ব্যস্ত। উল্লেখ আসনটি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী এলাকা,যেখান থেকে তিনি বেশ কবার নির্বাচিত হয়েছেন। গেলো ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাপা প্রার্থী হিসেবে এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী,এরশাদের নির্দেশন মেনে সরে দাঁড়ালে জাসদ প্রার্থী শিরিন আক্তার জোটের লবিংয়ে নির্বাচিত হয়ে আসেন।

আগামী নির্বাচনে আসনটি যাতে গণদলের হাতছাড়া না হয়,সে লক্ষ্যে সরকার দলীয় জোটের লবিংয়ে সরকার বিরোধী সরাসরি বক্তব্য বিবৃতি থেকে সরে এসেছেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের অবস্থানটাও পরিস্কার করতে চান গোলাম মাওলা। এছাড়া সরকার দলীয় জোটে রয়েছেন তার আস্তাভাজন বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। যাদের কাজে লাগিয়ে আগামী নির্বাচনের মধ্যদিয়ে সাংসদ হতে চান সাবেক এই জাপা নেতা। এসব বিষয় গণদল চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী বলেন,নির্বাচনের এখনও অনেক সময় আছে। রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। গণ মানুষের জন্য আমাদের রাজনীতি। জনগণের চাওয়া অনুযায়ী গণদল নির্বাচনী ভাবনা ঠিক করবে। এখন এ নিয়ে ভাববার সময় হয়নি। তবে বড় দলগুলোর সঙ্গে এক ধরনের রাজনৈতিক সর্ম্পক তো অবশ্যই আছে। আগামী দিনের রাজনীতি নিয়ে ভাবনা-চিন্তাও আছে। দেখা যাক সামনে কি হয়?

এদিকে ট্রুথ পার্টির চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দুদিন পর,গিত ২৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার, পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভাইস চেয়ারম্যান আবু সৈয়দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভায় দলের নাম পরিবর্তন করে গণদল করা হয়। গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গোলাম হাবিব দুলাল ব্যক্তিগত সমস্যা ও শারীরিক অসুস্থার কারণে দলের কার্যক্রমে অংশ গ্রহণে অক্ষম বিধায় চেয়ারম্যান -এর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে চেয়ারম্যানের পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করা হয় এবং তাঁর সুস্থ্যতা ও সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করা হয়। এতে বলা হয় ট্রুথ পার্টি নাম উচ্চারণে কর্মী সমর্থক ও মানুষের মাঝে সমস্যার সৃষ্টি হওয়ায় সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সর্ব সম্মতিক্রমে দলের নাম পরিবর্তন করে গণ দল রাখা হয়েছে। উক্ত সভায় এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরীকে চেয়ারম্যান ও আবু সৈয়দকে মহাসচিব করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্নগঠন করা হয়। গণ দল নামে নতুন দলের নিবন্ধন -এর জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। থানা, মহানগর, উপজেলা ও জেলা কমিটি গঠন কার্যক্রম ত্বরানিত করতে সকল স্থরের নেতাকর্মীদের নির্দেশ প্রদান করা হয়। এছাড়া সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- জনগনের দৈনন্দিন সমস্যা ও দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি, সন্ত্রাস, মাদক, গুম ও হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিটি এলাকায় জনগণকে সচেতন এবং প্রতিকারের জন্য জন সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের অনুরোধ করা হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন নুরুল কাদের চৌধুরী, মোঃ শাহ্ আলম হাওলাদার, জহিরুল ইসলাম, রাশেদ বিল্লাহ, তাইফুন্নাহার রুজী, শিউলী আক্তার, মোসারফ হোসেন, আফরোজা আক্তার মনি, শারমিন আক্তার, শাহানুর আক্তার মনিসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।

এদিকে গণদলের মহাসচিব আবু সৈয়দের কাছে জোটের রাজনীতি এবং আগামী দিনের ভাবনা সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি জানান,আগে দল গুছিয়ে নেই,তারপর ভাবনা। তবে মাঠে যেহেতু আছি,কিছু একটা তো হবেই। ইনশাল্লাহ দেখবেন আগামী দিনেই। গণ মানুষের চেতনার ফসল গণদল। সুতরাং জনগণের সমর্থনেই আগামী দিনের রাজনৈতিক লক্ষ্য ঠিক করা হবে বলে জানান গণদলের মহাসচিব আবু সৈয়দ।
এদিকে দলীয় একটি সূত্র জানায়,বুধবার অনুষ্ঠেয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্মেলনের মাধ্যমে জাসদ-জাপাসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা গণদলে যোগ দিচ্ছেন। এরইমধ্যে এদের অনেকেই গণদলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের সঙ্গে নির্বাচনী লবিং নিয়ে কথা বলেছেন। তারা আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়নের বিষয় নিশ্চয়তা চান।

আজকের বাজার:এলকে/১৭ জানুয়ারি ২০১৮