এবারের বাজেটে যা থাকছে

কিছু সময় পরই জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশনে ৪৭ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট পেশ করবেন তিনি।

সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আর তাই নতুন অর্থবছরের এ বাজেট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের ‘নির্বাচনী বাজেট’ হিসেবে দেখছেন অনেকে।

নতুন পেশ হতে যাওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় থাকা সব ধরনের ভাতার পরিমাণ বাড়াতে পারে। কৃষি, পল্লী উন্নয়ন ও কর্মসৃজনের পাশাপাশি দেশের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হতে পারে এ বাজেটে।

এ ক্ষেত্রে রেলপথ উন্নয়ন, বন্দর উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও সড়ক খাত অগ্রাধিকার পাবে। এ ছাড়া থাকছে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন, সরকারি সেবাদানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন।

তবে অর্থমন্ত্রী আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, নতুন বাজেটে সবচেয়ে বেশি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। শিল্পায়নের জন্য ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে গিয়ে কমানো হচ্ছে করপোরেট কর। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে আগামী বাজেটে এ সুবিধার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ঢালাওভাবে সব পণ্যে এবার নতুন করারোপ নাও হতে পারে। তবে বিলাসবহুল বেশ কিছু পণ্যে বসতে পারে কর। সিগারেট ও মোবাইল কোম্পানির বর্তমানে করপোরেট কর ৪৫ শতাংশ। এ দুই খাতে করপোরেট কর কমানো হচ্ছে না। তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক-বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করের হার ৪০ শতাংশ। আগামী বাজেটে এটা কমিয়ে সাড়ে ৩৭ শতাংশ করা হচ্ছে।

এবারের বাজেটে স্থানীয় শিল্প সুরক্ষা ও বিকাশে বেশ কিছু প্রণোদনা থাকছে। পাশাপাশি বাজেটে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করে দেশীয় শিল্প বিকাশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। মোটরসাইকেল, কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি কিছু যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্কের ছাড় দেওয়া হবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে।

এ ছাড়া এবারের বাজেটে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, হিজড়া, বেদে, দলিত অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্য ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রাথমিক স্তরে ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা এবং উচ্চতর স্তরে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা করা হচ্ছে।

হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় উপবৃত্তি প্রাথমিক স্তরে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা এবং উচ্চতর স্তরে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে।

বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ বাজেট হওয়ায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৬৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। আর উপজেলা পরিষদের জন্য ৫৭৫ কোটি টাকা, পৌরসভার জন্য পাঁচ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের জন্য ১১ কোটি টাকাসহ স্থানীয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য মোট বরাদ্দ থাকছে মোট ৬০৩ কোটি টাকা।

আজ পেশ হতে যাওয়া নতুন বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণসহ থাকছে বেশকিছু সুবিধা। গৃহনির্মাণ খাতে ঋণ দিতে বাজেটে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১৩ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। আগামী ১ জুলাই থেকে এই সুবিধা কার্যকর করার প্রস্তাবনা থাকছে।

চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে এবং ৫৮ বছর বয়স পর্যন্ত এই ঋণ সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে এ জন্য সরকারি চাকবিজীবীদের ৫ শতাংশ সুদ দিতে হবে। এ ছাড়া বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বরাবরের মতোই ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট সুবিধা থাকছে।

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের মতো ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পেশ হতে যাওয়া বাজেটেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মোকাবেলায় দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এই টাকা দিয়ে ব্যাংকগুলো মূলধনের ঘাটতি পূরণ করবে। ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত ছয়টি সরকারি ব্যাংককে মূলধন ঘাটতি ও মূলধন পুনর্গঠনের নামে ১৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, যদিও বাজেটে বরাদ্দ ছিল আরো বেশি।

নতুন পেশ হতে যাওয়া বাজেটে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় বাড়ানো হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে বাজেটে নতুন করে আরো ১০ লাখ অতিদরিদ্র মানুষকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে। এতে করে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগী দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৮৬ লাখ। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতার আওতায় আসছে নতুন করে পাঁচ লাখ মানুষ, বিধবা ভাতার আওতায় আসছে এক লাখ ৩৫ হাজার এবং অসচ্ছল প্রতিবন্ধী এক লাখ ৭৫ হাজার মানুষ।

সামাজিক সুরক্ষা খাতের বিভিন্ন ভাতাও বাড়ানো হচ্ছে। মাতৃত্বকালীন ভাতা ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাজেটে ক্যানসার, প্যারালাইজড, কিডনি, স্ট্রোক ও হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা তহবিল ৫০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৭৫ কোটি টাকা করা হচ্ছে।

সূত্র: অর্থসূচক