এমপি, যুবলীগ নেতাসহ দশজনের ব্যাংক হিসাব তলব

বাংলাদেশে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনাসহ সামাজিক অপরাধ এবং দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে এবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মাঠে নেমেছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন এমপি এবং যুবলীগের কয়েকজন নেতা ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তাসহ ১০ জনের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। সন্দেহভাজন অনেকের বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হযেছে।

অন্যদিকে, যুবলীগের পর এখন ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু’জন নেতার বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব পদক্ষেপ যেনো লোক দেখানো না হয়, সেটা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী, তার স্ত্রী এবং যুবলীগ নেতা ইসমাঈল হোসেন সম্রাট ও তার স্ত্রী-এই চারজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে।

এরআগে অভিযানে গ্রেফতার হওয়া যুবলীগের দুইজন নেতার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়।

সবমিলিয়ে ১০জনের ব্যাংক হিসাব তলব করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, তাদের বেশিরভাগই ঢাকায় যুবলীগের বিভিন্ন পদে আছেন।

তবে সড়ক এবং গণপূর্ত বিভাগ থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া দু’জন উর্ধতন কর্মকর্তার নামও এই ১০জনের তালিকায় আছে অর্থাৎ তাদেরও ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, গত কয়েকদিনে পুলিশ র‍্যাবের অভিযানে যুবলীগের যে দু’জন নেতা গ্রেফতার হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে যাদের নাম এসেছে, এমুহুর্তে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের আয়ের উৎস দেখার জন্য এই তদন্ত করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং যাদের কাছে অর্থ পাওয়া গেছে, আমরা তাদের ট্যাক্স ফাইল খতিয়ে দেখছি। আর এই কর এর বিষয় যাচাই করার জন্য আমরা সন্দেহভাজনদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ বা তলব করেছি।তারা যাতে টাকা সরিয়ে নিতে না পারে, সেজন্যও আমরা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি।

মি: ভুঁইয়া আরও জানিয়েছেন, অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনা করা এবং টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির সাথে জড়িত থাকতে পারে, এমন সন্দেহভাজনদের ব্যাপারেই অনুসন্ধানের জন্য তারা এখন মাঠে নেমেছেন।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও সন্দেভাজন কয়েকজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে।

এই ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মো: রাজী হাসান বলছিলেন, অর্থ পাচার প্রতিরোধ সর্ম্পকিত আইনে তারা তথ্য পাওয়ার পর তদন্ত করবেন।

তিনি বলেন, ক্যাসিনো কিংবা মাদক-যেগুলো নিষিদ্ধ, সেগুলোর ব্যবসার সাথে যারা জড়িত, তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সম্পর্কে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। তাদের অ্যাকাউন্টে কি পরিমাণ অর্থ জমা আছে এবং লেনদেন হয়েছে, এসব তত্য আমরা সংগ্রহ করছি।

চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ দুর্নীতি এবং সামাজিক অপরাধ বিরোধী চলমান অভিযানে সন্দেহভাজনদের আর্থিক লেনদেন বন্ধের যে ব্যবস্থা এখন নেয়া হচ্ছে, সেটা অপরাধ দমনে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সায়মা হক বিদিশা মনে করেন, সন্দেহভাজনদের অর্থিক লেনদেনের তদন্ত যেনো থমকে না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, সন্দেহভাজনদের অর্থিক লেনদেনসহ বিভিন্ন ধরণের তথ্য সংগ্রহ যে করা হচ্ছে,আমি বলবো, এটা ইতিবাচক। তবে এসব তৎপরতা যেনো থেমে না যায়। এই অভিযান থেকে যেনো একটা ভাল ফল বের করে আনা যায়, সিদেকে সংশ্লিষ্টদের নজর রাখতে হবে।

এদিকে পুলিশ র‍্যাবের অভিযানে ক্লাব বা যুবলীগের পর মঙ্গলবার ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু’জন নেতার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে নগদ কোটি টাকা এবং বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ উদ্ধার করা হযেছে।

সন্দেহভাজন অনেকের বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। আওযামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক সংবাদসম্মেলনে বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা যাদের জন্য দেয়া হয়েছে, তাদের বেশিরভাগ আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এই অভিযানকে সাধারণ মানুষ ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে বলে তারা ধারণা পাচ্ছেন। ফলে এর মাধ্যমে একটা ভাল ফল বের করে আনার জন্য সব চেষ্টা তারা অব্যাহত রাখবেন। তথ্য-বিবিসি বাংলা

আজকের বাজার/এমএইচ