কুষ্টিয়ার মহাসড়কটি যেন মৃত্যু ফাঁদ

কুষ্টিয়া থেকে সড়কপথে খুলনা, পাবনা কিংবা রাজবাড়ী যাওয়ার একমাত্র মহাসড়কটি মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই মহাসড়কের ৮২ কিলোমিটার পথ বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে অতিক্রম করতে হয়। প্রায় দুই বছর ধরে এই অবস্থা বিরাজ করলেও সংস্কারের দেখা নেই।

মহাসড়কটির ৮২ কিলোমিটার পথে গত ১৫ মাসে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে ১১০ জনের। অথচ উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগের একমাত্র সড়ক এটি। দিনে ১৫-২০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করে এই সড়কপথে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়কের কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনসের প্রধান গেটের ৮০-৯০ ফুট পূর্বে ২৪ ফুট চওড়া সড়কের পুরোটাই বৃষ্টি হলে কাদা আর রোদ থাকলে ধুলাময়। সড়কের ডানপাশে মাল বোঝাই একটি ট্রাক মুখ খুলে পড়ে আছে। পেছনের একটি বাসেরও একই অবস্থা। আর তার সামনে-পেছনে নানা ধরনের যানের বিশাল লম্বা লাইন। দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাকের হেলপার রাসেল বলেন, দিনাজপুর থেকে ভাড়া নিয়ে যশোরে যাচ্ছিলাম। দিনাজপুর থেকে অনেক জাগাতেই ভাঙা রাস্তা পার হয়ে আসলাম। আড়াই দিন এখেনেই বইসি আছি। একই সড়কের সদর উপজেলার বারখাদা ত্রিমোহনী বাজারের পূর্বে কাত হয়ে পড়ে আছে একটি ট্রাক। সড়কের অস্তিত্ব নেই। বারখাদা ত্রিমোহনী বাজারের পশ্চিমে এবং কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুত্ সমিতি অফিসের আগে আগা ইউসুফ চক্ষু হাসপাতালের সামনের অংশ। এই স্থানটিতে কিছুদিন আগেও মেহেরপুরগামী একটি বাস উল্টে যায় বলে জানান, বাসটির যাত্রী কুষ্টিয়ার সংবাদকর্মী মশান গ্রামের এস এম জামাল খান। তিনি বলেন, গত দেড় বছরে কুষ্টিয়া থেকে বাড়িতে যাওয়া-আসার পথে আমি ১৭ বার এমন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছি। এই ১৭টি দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে।

জরাজীর্ণ রাস্তার মধ্যে আরো আছে কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়কের কুষ্টিয়া থেকে ভেড়ামারা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার, কুষ্টিয়া- মেহেরপুর সড়কে বারখাদা ত্রিমোহনী থেকে মিরপুর উপজেলার মশান বাজারের আগ পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার, কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের কুষ্টিয়া থেকে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার, কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের কুষ্টিয়ার চৌড়হাস থেকে খোকসা পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার মহাসড়ক এখন মৃত্যুফাঁদ।

কুমারখালীর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান খান বলেন, কিছুই বলার নাই। রাস্তাঘাটের যে অবস্থা আগামী নির্বাচনের আগে এগুলো ভালো না হলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব তা বলা মুশকিল।

কুষ্টিয়া জেলা বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বাবলু বলেন, আমরা দেড় বছর ধরে ধৈর্য ধরেছি, আর না। দ্রুত এ সড়কগুলো স্থায়ী সংস্কারের ব্যবস্থা না নিলে আমরা যানবাহন চালানো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর বাজারের ব্যবসায়ী আমজাদ কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক প্রসঙ্গে বলেন, দেখে মনেই হয় না এগুলো সড়ক বা মহাসড়ক।

কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, কুষ্টিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই তিনটি মহাসড়কের উন্নয়নে টাকা বরাদ্দ শেষে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এবং ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে কুষ্টিয়া-খুলনা ও কুষ্টিয়া-পাবনা সড়কে কাজ শুরু করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের ঠিকাদার কবে কাজ শুরু করবেন তা এখনো বলা যাচ্ছে না বলে জানান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম।

আজকের বাজার/একেএ