কোটালীপাড়ার কান্দিবিলের জলাবদ্ধ ও পতিত ৪৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি বিলের জলাবদ্ধ ও পতিত ৪৪০ হেক্টর জমিতে এ বছর বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এখন বিলজুড়ে সবুজ ধানের সমারোহ। বাতসে দোল খাচ্ছে সবুজ ধান। ধান দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। এখানে স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন হাইব্রিড জাতের ধানের চাষাবাদ করেছেন কৃষক। ক্ষেতের ধান দেখে কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

কোটালীপাড়া উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা কান্দি বিল পরিদর্শনে নিয়মিত যাচ্ছেন। তারা বেরোধানের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। কৃষকদের সাথে কথা বলেছেন। তারা কৃষকদের বিভিন্ন রকম পরামর্শ দিচ্ছেন। এখানে ৩ হাজার ৫২০ মেট্রিকটন ধান উৎপাদিত হবে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়ন একটি নিম্ন জলাভূমি বেষ্টিত ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের কান্দি বিল বোরো মৌসুমে জলাবদ্ধ ও পতিত অবস্থায় পড়ে থাকত। শুধু আমন মৌসুমে বোনা আমনের চাষাবাদ হত। বন্যা ও অতিরিক্ত জেয়ারে এ ধান প্রায় প্রতি বছরই ভেসে যেত। কৃষক ফসল ঘরে তুলতে পারত না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রেখে চাষাবাদের আওতায় আনার আহবান জানান। এ আহবানে সাড়া দিয়ে কোটালীপাড়া উপজেলা প্রশাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি অফিস জলাবদ্ধ ও অনাবাদি কান্দি বিলে বোরোধান চষের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এতে দিক নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রতিনিধি অবসরপ্রাপ্ত সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার। গত বছরের নভেম্বরে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ কান্দি-ধারবাশাইল খালের কচুরিপানা পরিস্কার ও খনন কাজ করা হয়। এ কারণে কান্দি বিল থেকে পানি নেমে যায়। তারপর কৃষক জমি পরিস্কার করেন। কৃষি প্রণোদনার সার, বীজ, ধানের চারা ও চারা রোপণের শ্রমিক সহায়তা পেয়ে তারা উৎসবের আমেজে বোরোধানের আবাদ করেন।

কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি গ্রামের প্রবীণ সুশান্ত মধু (৭৫) বলেন, আমাদের এ বিল জলাবদ্ধ । তাই বোরো মৌসুমে পতিত থাকত। চৈত্র বৈশাখ মাসের দিকে বিলের জমি শুকিয়ে যেত। তারপর আমরা আমন ধান বুনে দিয়ে আসতাম। অতিরিক্ত জোয়ার ও বন্যায় এ ধান প্রায় বছরই ভেসে যেত। ফসল ঘরে তুলতে পারতাম না। মাছ চাষের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে চাল কিনতে হত। এ বছর উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমাদের হাতে ধরে বোরোধানের চাষাবাদ করিয়েছে। তারা আমাদের সব ধরণের সহযোগিতা করেছে। তাই পতিত ও অনাবাদি জমিতে বোরাধান চাষাবাদ সম্ভব হয়েছে। আমরা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি এ জমিতে চাষাবাদ হবে। এ বছর ১ একর ১০ শতাংশ জমি থেকে ধান পাব। মাছ বিক্রি করে আর চাল কিনতে হবে না। তাই সংসারে আয় ও সমৃদ্ধি বাড়বে।

একই গ্রামের কৃষক বিধান বিশ্বাস (৬০) বলেন, কৃষি সম্প্রসারণের সহযোগিতায় এ বছর প্রথম বিলের ১ একর জমিতে হাইব্রিড বোরোধান আবাদ করেছি। জমিতে বোরোধান ভালো দেখা যাচ্ছে। আশা করছি বাম্পার ফলন পাব।

কান্দি ইউপি চেয়ারম্যান তুষার মধু বলেন, কান্দি বিলে এখন ফসলের সমারোহ। আমরা কখনো ভাবতে পারিনি এখানে বোরোধানের আবাদ হবে। উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে। তারা কৃষকের সাথে ৩০টি পৃথক কৃষি বৈঠক করেছে। তারা খাল পরিস্কার ও খনন করেছে। কৃষককে কৃষি প্রণোদনার সব কিছু দিয়েছে। ধানের চারা ও শ্রমিক দিয়ে সহযেগিতা করেছে। এ কারণেই কান্দি বিলে সবুজের সমরোহ সৃষ্টি হয়েছে। কৃষক বিল থেকে গোলায় ধান তোলার স্বপ্নে এখন বিভোর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিটুল রায় বলেন, কোটালীপাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা। তাই প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে কান্দি বিলের চাষিরা উৎসবের আমেজে বোরোধানের আবাদ করেছেন। আশা করছি এখানে ৪৪০ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৫২০ মেট্রিকটন ধান উৎপাদিত হবে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে কান্দি বিলের কৃষকরা আবদান রাখবেন।

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদের আন্তরিক সহযোগিতায় এটি করা সম্ভব হয়েছে। এখানে আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বারবার পরিদর্শনে এসছেন। তিনি এব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছেন।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, খালের কচুরিপানা দিয়ে আমরা ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ভাসমান বেড করে দিয়েছি। এখানে কৃষক বিভিন্ন ধরেণের শাক,সবজি উৎপাদন করছেন। এখান থেকে অন্তত ২২ লাখ টাকার শাক-সবজি উৎপাদিত হবে। এছাড়া ঢিবিতেও চাষাবাদ করেছে কৃষক। এভাবইে বিল বেষ্টিত কান্দি ইউনিয়নের কৃষক ফসলের আবাদ বৃদ্ধি করে সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হচ্ছেন। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান