গরুর মাংস খাব, নিয়ম মেনে

ডাঃ শরীফুর রহমানঃ গরুর মাংস বা রেড মিট, আমাদের অনেকেরই প্রিয় খাবার। কেউ কেউ এত বেশী পছন্দ করেন যে নিজেকে সামলিয়ে পরিমান ঠিক রেখে খাওয়া কঠিন হয়ে উঠে। শুধু বাংলদেশেই নয় গো-মাংস বা এ জাতীয় রেড মিট সারা বিশ্বেই অনেক জনপ্রিয় ।

গরুর মাংস হল একটি অতী ভাল আমিষ বা প্রোটিনের খাদ্য উৎস। প্রোটিন জীব দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় এটা আমরা সবাই জানি। যদি পর্যাপ্ত প্রোটিন খাওয়া বন্ধ করে দেন তাহলে দেহের কোষ সমূহ দ্রুত ক্ষয়প্রবন হয়ে পড়বে। এতে করে আপনি বয়সের আগেই বয়স্ক হয়ে যাবেন বা বুড়িয়ে যাবেন। কারন আমাদের মাংসপেশী, অংগ প্রত্যঙ্গ, চামড়া, হাড় সবকিছুর জন্য প্রোটিন প্রয়োজন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হল আমাদের রক্তের আন্টিবডি যা কিনা রোগ প্রতিরোধের প্রধান হাতিয়ার সেই এন্টিবডি আসলে তৈরী হয় মূলত প্রোটিন থেকে। সেই সাথে সবধরনের এনজাইম যা শরীরের রাসায়নিক কার্যকলাপে (যেমন হজম প্রক্রিয়া থেকে দেহকোষ নির্মান প্রক্রিয়া) নিয়োগপ্রাপ্ত সেই এনজাইমও আসলে প্রোটিন দিয়ে তৈরী হয়ে থাকে। প্রোটিন আমাদের খাদ্যনালিতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভেঙ্গে গিয়ে এমাইনো এসিডে পরিনত হয়। এমাইনো এসিড আবার খদ্যনালীর দেয়ালের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করতে পারে এবং এভাবে তা রক্তে চলে যায়। তখন দেহকোষ এমাইনো এসিডকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করে বিশেষ করে সেল রিপেয়ার বা কোষ পূনঃগঠন। এটা মনে রাখতে হবে এই জাতীয় প্রোটিন আমরা অন্য প্রানীজ উৎস থেকেও পেতে পারি, যেমন হাঁস-মুরগি ও মৎস।

এই পর্যায়ে আপনি গো-মাংস খাবার ব্যাপারে আগ্রহী উঠতেই পারেন । তবে কিছু কথা মনে রাখতে হবে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং গো-মাংস খাবার ব্যাপারে আমাদের সাবধানী করে তুলবে।

ডাঃ শরীফুর রহমান

গো-মাংসে থাকে প্রচূর সেচুরেটেড ফেট বা চর্বি। এটি প্রমাণিত যে এই ধরনের চর্বি বেশি খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। একি ধরনের চর্বি হাঁস-মুরগীতেও আছে, তবে কম মাত্রায়। গবাদি পশুদের অনেক সময় এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয়, বা এদের দেহে হরমোন প্রবেশ করানো হয়, এসব পশুর মাংসও আমাদের ক্ষতি করবে এতে কোন সন্দেহ নেই। বিশেষ করে গবাদি পশুদের গ্রোথ হরমোন দিয়ে মোটা-তাজা করার একটি প্রবনতা দেখা যায়। কাজেই অস্বাভাবিক বৃহদাকার গরু কেনার আগে এই বিষয়টি জেনে নেয়া অতীব জরুরী।

এন্টিবায়োটিক ও হরমোন দেয়া হয়নি এমন গরুই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। মনে রাখতে হবে একই মাংস আপনার পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধরা খাবেন, যাদের শরীরের সহনশীলতা কম। মজার ব্যাপার হল অনেকেই মহিষের মাংস পছন্দ করেন না, আসলে গরুর মাংস আর মহিষের মাংসের স্বাদে খুব বড় ধরনের পার্থক্য নেই। তবে মহিষের মাংস গরুর মাংসের চেয়ে মানব স্বাস্থ্যের দিক বিবেচনায় অনেকাংশেই নিরাপদ।

একটি প্রচলিত কথা আছে, প্রানীজ খাবারের ক্ষেত্রে যার পা যত কম তার ক্ষতিকর দিকও তত কম। তাই সবচেয়ে ভাল অবস্থানে আছে মৎস প্রজাতি। এদের পা নেই এবং এরাই নিরাপদ প্রানীজ প্রোটিনের উৎস। খেয়াল রাখবেন, চিংড়ি মাছের আবার অনেকগুলি পা, কাজেই নামের সাথে মাছ থাকলেও ওগুলি তেমন নিরাপদ নয়। চিংড়িতে প্রচূর চর্বি থাকে।

তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে, এত সমস্যা হলে প্রানীজ প্রোটিন আর না খেয়ে নিরামিষভোজী হয়ে গেলেই হয়। কিন্ত শাকাহারীদের খাবারে অনেক খাদ্য উপাদান অনুপস্থিত থাকে, যা শরীরের জন্য একান্ত প্রয়োজন হয়। যেমন, পূর্নাঙ্গ প্রোটিন কিন্ত উদ্ভিদ থেকে পাওয়া সম্ভব নয়, আরো আনুপস্থিত থাকে আয়রন, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি ১২। সুতরাং গো মাংস খেতে হবে নিয়মের মধ্যে থেকে।
ডাঃ শরীফুর রহমান
জিপি, মিনিস্ট্রি অফ হেলথ, ওমান ।

আজকের বাজার: সালি / ২৯ জানুয়ারি ২০১৮