গ্ল্যামার পেতে চাই সঠিক প্রসাধনী

ঈদে তো বেড়াতে যাওয়াই হবে। তবে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান তৈরি হয়ে গেলেও এই সময় পার্লারে যাওয়ার মতো অবস্থা থাকে না। আবার অনেকে পার্লারে গিয়ে সাজাটাও পছন্দ করেন না। কিন্তু, ঘরে বসেই পার্লারের মতো গ্ল্যামার মেকআপের টোন আনতে অনেকেই পারেন না। ফলে সাজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মন খারাপ হওয়ার অবস্থা তৈরি হয়। এর জন্য চাই সঠিক কিছু প্রসাধনী। সঠিক প্রসাধনী ব্যবহার না করলে আপনার মেকআপে গ্ল্যামার লুক কখনোই আসবে না। তাই আসুন আজ আমরা এই প্রসাধনীগুলো চিনে নেই।

ময়েশ্চারাজিং ম্যাসেজ: হালকা কোনো ময়েশ্চারাজিং ক্রিম বা লোশন দিয়ে কপাল, নাক, মুখ, চোখের চারপাশে ম্যাসেজ করে নিন। ১৫/২০ মিনিট অপেক্ষা করুন যাতে লোশন বা ক্রিম ত্বকের সঙ্গে মিশে যায়। ময়েশ্চারাজিং মেকআপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই এতাকে ভালো মতো মিশা এবং বসার সময় দিতে হবে।

ফাউন্ডেশনের ব্যবহার: ত্বক পরিষ্কারের পর শুরু হবে মেকআপ পর্ব। পারফেক্ট মেকআপ শুরু হয় ভালো বেস দিয়ে। বেসের প্রথম শর্ত হলো নিজের ত্বক অনুযায়ী ফাউন্ডেশন ব্যবহার করা। ফাউন্ডেশন নির্বাচন করতে হবে নিজের গায়ের শেড থেকে এক অথবা দুই শেড হালকা।

হালকা রং ত্বককে উজ্জ্বল দেখাবে। শেডিংয়ের জন্য গাঢ় রং দরকার। আপনার ত্বকের শেড অনুযায়ি ওয়েল ফ্রি ফাউন্ডেশন লাগিয়ে নিন। তাহলে মেকআপ ভালোভাবে বসবে। মুখ তৈলাক্ত হলে পাউডার ফাউন্ডেশন লাগান।

কনসিলার: কনসিলার আপনার মুখের দাগ, চোখের নিচের কালি ঢেকে দেয়। নিজের স্কিনটোনের সঙ্গে মিলিয়ে কনসিলার কিনতে হলে আপনার ফাউন্ডেশন থেকে অর্ধেক শেড হালকা থেকে শুরু করুন। ত্বকের ব্লেমিস বা কালো দাগ দূর করতে আপনার ফাউন্ডেশনের চেয়ে এক শেড হালকা তবে ব্ল্যাক আন্ডারটোনের কনসিলার ব্যবহার করুন।

চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল থাকলে সবুজ বা হলুদ রঙের কনসিলার বেছে নিলে ভালো কাজ করবে। তবে আপনি যদি ব্রণের দাগ, চোখের নিচের কালো দাগ ফাউন্ডেশন দিয়ে ঢেকে দিতে পারেন। তবে কনসিলার ব্যবহার না করলেও চলবে।

ফেস পাউডার: বড় মেকআপ ব্রাশ দিয়ে সম্পূণ মুখে ফেস পাউডার ব্রাশ করুন। পাউডার পাফ অথবা ফেস পাউডারের সঙ্গে দেয়া স্পঞ্জ দিয়ে হালকা করে বেইজের ওপর বুলিয়ে বেইজ সেট করে নিন।

চোখের মেকআপ: বেইজের পর আসে চোখ সাজানোর পালা। চোখের সাজে শুরুতে চোখের ওপরের পুরো জায়গায় আই প্রাইমার দিন। এরপর আইশ্যাডো দিতে হবে। ড্রেসের সঙ্গে মিলিয়ে দুই বা তিন শেডের আইশ্যাডো দিতে পারেন। বাড়তি সৌন্দর্য যোগ করতে ব্যবহার করতে পারেন বাদামি আইশ্যাডো।

ফলস ল্যাশ: চোখ দুটোকে চটজলদি বড় আর মায়াবি করে ফেলতে কৃত্রিম পাপড়ি জুড়ি নেই। বাজারে নানা দৈর্ঘ্য ও ডিজাইনের কৃত্রিম পাপড়ি পাওয়া যায়। পছন্দ অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন যে কোনো প্রকারের আই ল্যাশ।

আইলাইনার: এরপর আইলাইনার চোখের ওপরে বা নিচে দিতে হবে। লিকুইয়েড, জেল, পেন্সিল যে কোনো প্রকারে আইলাইনার ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে আইলাইনারের বিকল্প হিসেবে কাজল ও ব্যবহার করতে পারেন। আইলাইনার চিকন করে আই ল্যাশসের ওপর দিতে হবে। যদি আপনি মোটা করে আইলাইনার দিতে চান তবে প্রথম আইলাইনার শুকানোর পর আরেকবার দিতে পারেন।

মাশকারা: আইলাইনারে পর মাশকারা দেয়ার পালা। চোখ আকর্ষণীয় করার জন্য ঘন করে মাশকারা দিতে হবে। একবার মাশকারা দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে আবার মাশকারা দিন। মাশকারা দেয়ার সময় চোখের ওপরের পাতা ওপরের দিকে উঠিয়ে দিতে হবে। পাতাগুলো যেন একটার সঙ্গে আরেকটা লেগে না যায়। আইব্রো পেনসিল দিয়ে ভ্রু এঁকে নিয়ে এরপর শুকনো মাশকারা ব্রাশ দিয়ে আঁচড়ে নেবেন।

ব্লাশন: পুরো সাজ শেষ হয়ে এলে ব্লাশন ব্যবহার করতে হবে। ব্লাশনের রং হিসেবে আপনি গোলাপি বা পিচ রং ব্যবহার করতে পারেন। উজ্জ্বল রঙের অধিকারীরা হালকা শেডের ব্লাশন আর শ্যামলা বা তার থেকে গাঢ় রঙের ত্বকের জন্য গাঢ় শেডের ব্লাশন ব্যবহার করতে পারেন।

লিপস্টিক: লিপস্টিক দেয়ার আগে ঠোঁট ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। এরপর হালকা করে লিপ বাম বা ভ্যাসলিন লাগান। ৫০ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। ভ্যাসলিন বা লিপ বাম শুকিয়ে গেলে লিপিস্টিক দিন।

দিনে ঠোঁটের সাজে ম্যাট লিপস্টিক দিলে ভালো। রাতে ভারী লিপগ্লস ব্যবহার করতে পারেন। লিপস্টিক দীর্ঘক্ষণ ঠোঁটে রাখার জন্য প্রথমে লিপস্টিক থেকে এক শেড গাঢ় লিপলাইনার দিয়ে ঠোঁট আঁকতে হবে। এতে লিপস্টিক ছড়িয়ে পড়বে না। এবার টিস্যু দিয়ে চেপে নিতে হবে। হাতের কাছে পাউডার থাকলে পাউডার দিয়ে চাপ দিয়ে আবার লিপস্টিকে লাগাতে হবে।

আরও কিছু টিপস:

ত্বক পরিষ্কার করা ও ফেসিয়াল: প্রথমে মেকআপের জন্য ত্বককে তৈরি করুন। ভালো মানের ফেসওয়াস বা ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুঁয়ে ফেলুন। এতে আপনার মুখের ময়লা সব চলে যাবে এবং মেকাআপ ভালোভাবে মিশিয়ে যাবে আপনার ত্বকের সঙ্গে।

ব্ল্যাক হেইটস দূর করুন: যদি মুখে ব্ল্যাক হেইটস বা রেশ থাকে তাহলে একটু স্ক্রাবিং এবং ফেসিয়াল করে নিন। তাহলে আপনার মেকআপ নষ্ট হবে না। যেটাই ব্যবহার করুন না কেন সুন্দর করে বসে যাবে।

ভ্রু’র সাজ: ভ্রু’র সাজে আইব্রো পেনসিল দিয়ে ভ্রু এঁকে নিয়ে এরপর শুকনো মাশকারা ব্রাশ দিয়ে আঁচড়ে নেবেন। ভ্রুকে ন্যাচারাল লুক দিতে চাইলে ভ্রু’র রঙের থেকে হালকা রঙের আইশ্যাডো বেছে নিয়ে তা হালকা করে ভ্রু এর ওপর বুলিয়ে নিন। এরপর সেই রঙ এর কাজল দিয়ে হালকা করে ভ্রু একেঁ নিন। এরপর আইব্রো ব্রাশ দিয়ে ভ্রু এর শেপ ঠিক করে নিন।

আপনার ফেসের সঙ্গে যায় এমন একটি স্টাইলে চুল সেট করুন।

আর পোশাকে যেটাই পরুন না কেন মনে রাখবেন গ্ল্যামার মেকআপের সঙ্গে একটু গর্জিয়াস পোশাক না হলে তেমনটা মানাই না।

আর অবশ্যই আপনার জুতা-স্যান্ডেল পোশাকের সঙ্গে মানানসই হতে হবে।

পোশাক খুব গর্জিয়াস বা ভারী কাজের হলে হালকা গহনা পরুন।

আজকের বাজার/লতিফ