চট্টগ্রামে ভাসমান কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ

সাগরে ভাসমান কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এটি নির্মিত হলে সাগরে অবস্থান নিয়ে জাহাজ থেকে কনটেইনারভর্তি পণ্য নামিয়ে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। বর্তমানে বহির্নোঙর বা সাগরে জাহাজ থেকে খোলা পণ্য নামানোর সুযোগ থাকলেও কনটেইনার নামানোর সুযোগ নেই। কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয় কেবল বন্দরের জেটি ও টার্মিনালে।
সম্প্রতি টার্মিনাল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক কম্পানি ‘পাবলিক ডোমেইন আর্কিটেক্টেন’-এর সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে তার সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপর অর্থায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত এবং নির্মাণকাজ শুরু হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল বলেন, মূলত পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল পুরোদমে সচল করা এবং ২০৪১ সালে ১৪ মিলিয়ন একক কনটেইনার ওঠানো-নামানোর লক্ষ্য সামনে রেখেই এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের ট্রানজিট কনটেইনার আসার চাহিদাও বিবেচনায় রয়েছে।
বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ডাচ কম্পানি এই প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি করবে জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পানগাঁওমুখী জাহাজকে বন্দর জেটিতে ঢুকতে হবে না।
খুব কম খরচে ও কম সময়ে কনটেইনার পরিবহন সম্ভব হবে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় সাগরে এ ধরনের প্রকল্প কতটা উপযোগী হবে, আর্থিক খরচ কেমন হবেÑএসব দেখার ওপরই প্রকল্পের বাস্তবায়ন নির্ভর করছে।
বন্দরের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং ও বার্থ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম সামশুজ্জামান রাসেল বলেন, সাগরে জাহাজ থেকে ২৪ ঘণ্টা খোলা পণ্য দ্রুত নামানোর প্রস্তাবটা আমরাই প্রথম দিয়েছিলাম; কিন্তু খোলা পণ্য বাদ দিয়ে এখন শুধু কনটেইনার নামানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিপুল পরিমাণ পণ্য দ্রুত ও সাশ্রয়ে নামানোর স্বার্থে এই টার্মিনালে কনটেইনারের পাশাপাশি খোলা পণ্য নামানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে।
জানা গেছে, ভাসমান টার্মিনালটি নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রকল্প ‘টেকনো ইকোনমিক ফিজিবিলিটি স্টাডি অব অ্যা ফ্লোটিং হারবার অ্যাট দ্য আউটার এরিয়া ইন চিটাগং পোর্ট’-এ কাজ পেতে আগ্রহ দেখিয়েছিল দেশি-বিদেশি ২৪টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পর ‘পাবলিক ডোমেইন আর্কিটেক্টেন’কে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির লোকাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করবে ‘বেঙ্গল ডাচ ইন্টারন্যাশনাল’। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কনসালট্যান্সিতে ব্যয় হবে ৯ লাখ ৭২ হাজার ডলার। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় আট কোটি টাকা। ছয় মাসের মধ্যে তারা কারিগরি ও আর্থিক সমীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বহির্নোঙরে আসা বড় জাহাজ থেকে কনটেইনার নামিয়ে ছোট জাহাজে তুলে পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালে (পিসিটি) নেওয়া হবে। বর্তমানে আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরের একটি জেটি থেকে জাহাজে তুলে পানগাঁও নেওয়া হয়। ছোট জাহাজে এসব কনটেইনার পরিবহন করায় পরিবহন খরচ বেশি পড়ে, আবার সময়ও বেশি লাগে, ভোগান্তিও বেশি। এ কারণে ভাড়া কমিয়ে, জাহাজ কিনে অনেক উদ্যোগ নেওয়ার পরও পানগাঁও সচল হয়নি।
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, বন্দরের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি সামাল দিতে নতুন জেটি দরকার; কিন্তু রাতারাতি সেই জেটি নির্মাণ সম্ভব নয়। তবে ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ দ্রুত করা সম্ভব। সেই বিবেচনায় ভালো উদ্যোগ। এতে বন্দরে মূল জেটির ওপর চাপ কমবে। বহির্নোঙর থেকেই কনটেইনার নির্ধারিত গন্তব্যে নেওয়া সম্ভব হবে।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছে, আবহাওয়ার তিন নম্বর সতর্ক সংকেত থাকলেই সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম উপকূল থেকে কোনো জাহাজ বহির্নোঙরে বা গভীর সাগরে যেতে পারে না। জাহাজ থেকে খোলা পণ্য নামানো সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। এ ধরনের প্রতিকূল আবহাওয়ায় এত বড় প্রকল্পে কতটা সুফল আসবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আর ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণের আগে এখন সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৬টি ঘাটকে আধুনিকায়ন করা।
আজকের বাজার: সালি / ০১ জানুয়ারি ২০১৮