চেয়ারম্যানের স্ত্রীর কারণেই রিফাতকে হত্যা: মিন্নির বাবা

বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী শামসুন্নাহার খুকীর সাথে বিরোধের কারণে রিফাত শরীফ খুন হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।

বুধবার বরগুনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মিন্নির পরিবার।

এ সময় লিখিত বক্তব্যে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে মোজাম্মেল হোসেন বলেন, কিছু দিন আগে রিফাত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বাসার গেটের সামনে মোটরসাইকেল পার্ক করতে গেলে চেয়ারম্যানের স্ত্রী বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রিফাত তাকে গালি দেয়। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানের স্ত্রী রিফাতকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।

রিফাত ও মিন্নি এ তর্কের ঘটনা মোজাম্মেল হোসেনকে জানিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যানের স্ত্রী শামসুন্নাহার খুকী তার বোনের ছেলে রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর কাছে এ বিষয়ে নালিশ করলে তাদের রিফাত হত্যার ঘটনায় অগ্রভাগে দেখা যায়।’

‘যেদিন হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল সেদিন হত্যাকারীরা বলেছিল, ‘তুই আমার মাকে গালাগাল করেছিস। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল।’ রিফাত ও রিশান ফরাজী শামসুন্নাহার খুকীকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে। পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করলে এ বিষয়ে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে,’ যোগ করেন মিন্নির বাবা।

মোজাম্মেল হোসেন আরও বলেন, ‘নিহত রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ ১৯ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’

‘দুলাল শরীফ একটি প্রভাবশালী মহলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমার মেয়ে মিন্নিকে গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে মিন্নি ১ নম্বর সাক্ষী থেকে আসামি হয়েছে। রিফাত শরীফ হত্যা আড়াল করতে মিন্নিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন যদি আমাকে ও আমার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয় তবে রিফাত হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীকে আড়াল করা সম্ভব হবে,’ বলেন মোজাম্মেল হোসেন।

তিনি জানান, ১৬ জুলাই আসামি শনাক্ত করার কথা বলে পুলিশ মিন্নিকে নিয়ে আসে। পরে সোয়া ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ‘রিমান্ডে নিয়ে মিন্নির ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছে।’

‘আমার মেয়ে অসুস্থ। কিছুদিন আগেও তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। পুলিশি নির্যাতনে আমার মেয়ে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন। পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত প্রভাবশালী মহলকে আড়াল করতে আমার মেয়েকে ফাঁসাচ্ছে,’ যোগ করেন মোজাম্মেল হোসেন।

মামলার তদন্তের দায়িত্ব বরগুনার পুলিশের হাতে থাকলে তারা মিন্নিকে ফাঁসিয়ে মূল খুনিদের আড়াল করবে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে মামলার তদন্ত পিবিআইতে হস্তান্তর করার অনুরোধ জানান তিনি।

এদিকে, বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছেন, তার স্ত্রীর সাথে তাদের বাসার সামনে রিফাত শরীফের কোনো বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেনি। ‘এমনকি রিফাত শরীফের সাথে আমার স্ত্রীর ব্যক্তিগতভাবে কোনো পরিচয় নেই।’

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান