টাইগারদের শেষ সুযোগ আজ

Bangladesh’s Shakib Al Hasan, left, celebrates with team wicketkeeper Mushfiqur Rahim the dismissal of Zimbabwe’s Craig Ervine during their first one day international cricket match in Dhaka, Bangladesh, Saturday, Nov. 7, 2015. (AP Photo/A.M. Ahad)

শুরুটা আলো ঝলমলেই ছিল। ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচেই জিতেছিল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কাকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিল স্বাগতিকরা। তখনো কে জানত, এক মাস পর এই দলটাই হারতে হারতে অসুখী এক পরিবার হয়ে যাবে!

বিপর্যয়ের শুরুটা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মুখোমুখি দ্বিতীয় ম্যাচ দিয়ে। মিরপুরে ৮২ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জার পর ১০ উইকেটের হার। এরপর সব ফরম্যাট মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের চারটিই বাংলাদেশ হেরেছে, একটি হয়েছে ড্র।

ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ফিল্ডিংয়ে চোট নিয়ে ছিটকে গেলেন সাকিব আল হাসান। যেন ছিটকে গেল পুরো দলই! ফাইনালে বাংলাদেশ আরেকবার ট্রফি বিসর্জন দেয় শ্রীলঙ্কার কাছে।

সাকিবকে ছাড়া মাহমুদউল্লাহর দল চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট তবুও ড্র করেছিল দারুণ লড়েই। তবে ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্ট হেরে যায় আড়াই দিনেই, খোয়ায় সিরিজও।

আর প্রথম টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বোচ্চ ১৯৩ রানের রেকর্ড গড়ার পরও বাংলাদেশ আরেকটি পরাজয় সঙ্গী করে বোলারদের ব্যর্থতায়। তাতে আত্মবিশ্বাসের ভিতটা নড়বড়ে হয়ে যায় আরও।

হারের যন্ত্রণায় ক্ষত-বিক্ষত টাইগাররা। আর এই ক্ষতের দগদগে দাগ নিয়েই অপার সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি সিলেটে অবস্থান করছে বাংলাদেশ দল। এখানে একটি জয়ের খোঁজে সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে লঙ্কানদের বিপক্ষে মাঠে নামবে মাহমুদউল্লাহরা। সিলেটের পবিত্রভূমিতে জয় দিয়ে বাংলাদেশের অভিষেককে রাঙিয়ে দেওয়ার দারুণ সুযোগ টাইগারদের সামনে। একটি জয়ে পুরো সিরিজের ব্যর্থতার ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ পড়বে।

২০১৪ সালে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক প্রথম ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলেও এখনও খেলার সুযোগ হয়নি বাংলাদেশের। অবশেষে রবিবার বিকাল পাঁচটায় সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অভিষেক হচ্ছে বাংলাদেশ দলের। সিলেটবাসীর অনেকদিনের অপেক্ষা দূর হতে আর মাত্র বাকি কয়েকঘণ্টা।

প্রকৃতি নিজ হাতে সাজিয়েছে সিলেটকে, নান্দনিক সৌন্দর্য্যের এক কল্পিত রাণী যেন এই সিলেট। এমন সুন্দর নগরে বাংলাদেশ তাদের ক্রিকেটীয় পরিকল্পনাগুলো সুন্দরভাবে সাজাতে পারবে- এমনটাই আশা স্থানীয় সমর্থকদের। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ কণ্ঠেও প্রত্যয় শেষটা রাঙিয়ে নেওয়ার, শেষ ম্যাচটি জেতার জন্য যাবতীয় সব কিছুই আমরা করব। ম্যাচটি জিততে পারলে অন্তত সিরিজ হার এড়ানো সম্ভব হবে। আমরা সিলেটে শেষ ম্যাচটি জিততে চাই।

মাহমুদউল্লাহ শেষ ম্যাচটি জিততে চাইছেন। কিন্তু হাথুরুসিংহে হারতে রাজি নন। তার স্পষ্ট কথা শেষ ম্যাচটা জিতেই বাড়ি ফিরতে চান,আমরা এখানে হারতে আসিনি। এখানে জিতে আমরা আরও আত্মবিশ্বাসী দল হয়ে উঠতে চাই। আশা করি ছেলেরা পরিকল্পনামতো কাজ করতে পারবে।

লঙ্কানদের বিপক্ষে বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামবে। তিনটি পরিবর্তন প্রায় নিশ্চিত। তামিম খেলার মতো ফিট হওয়ার কারণে জায়গা ছেড়ে দিতে হচ্ছে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অভিষেক হওয়া জাকির হাসানকে। এছাড়া আরেক অভিষিক্ত অলরাউন্ডার আফিফ হোসেনের বদলে দেখা যেতে পারে ডানহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসানকে।

এর পাশাপাশি পেস বোলিংয়েও একটি পরিবর্তন আসতে পারে। গত ম্যাচে ব্যয়বহুল বোলিং করে বাদ পড়তে যাচ্ছেন সাইফউদ্দিন। তার বদলে স্থানীয় পেসার আবু জায়েদ রাহীর খেলার সম্ভাবনা প্রকট।

এই তিনটি পরিবর্তনের বাইরেও শেষ মুহূর্তে আরও একটি পরিবর্তন আসতে পারে একাদশে। বেশ কিছুদিন ধরে অফফর্মে থাকা সাব্বির রহমান রুম্মনকে বাদ দিয়ে একাদশে মোহাম্মদ মিঠুনকে সুযোগ দেওয়ার কিছুটা সম্ভাবনা রয়েছে।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অবশ্য কম্বিনেশন নিয়ে তেমন কিছুই বলেন না ম্যাচের আগে,‘সকালে উইকেট দেখে একাদশ নির্বাচন করবো। রাহীর এবং তামিমের খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। আসলে সেরা একাদশ নির্বাচন করতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।

সিলেট স্টেডিয়ামে দুই দলের অভিষেকে কেউই এগিয়ে থাকছে না। যদিও ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলাদেশের বেশিরভাগ ক্রিকেটারদের এই মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই তুলনায় লঙ্কান দলে অভিজ্ঞতার সংখ্যা খুব একটা নেই। সেই হিসেবে দুই দলের জন্যই সমান সুযোগ থাকছে!

পুরো দেড় মাসে খারাপ সময় অতিবাহিত করেছে বাংলাদেশ। মাঠের ক্রিকেটে নিজেদের সেরাটা দিতে না পারার ব্যর্থতা নিয়েই এই বৃত্তে আটকে আছে স্বাগতিকরা। মাহমুদউল্লাহর আশা, অভিষেক ভেন্যুতে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখে দারুণ কিছু করার। হয়তো সিলেটে বাংলাদেশের অভিষেক ম্যাচে শেষটা রঙিন আলোতে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

বাংলায় একটা কথা আছে। শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। শেষ ম্যাচটা জিতলে হয়তো সব ভালো হয়ে যাবে না। তবে সান্ত্বনার একটা জয় তো অন্তত পাওয়া যাবে। শেষটা রঙিন হবে বাংলাদেশের?

আএম/