পিপিপি প্রকল্পে বিনিয়োগে আয়কর মওকুফ

দেশের যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন ও গতি বাড়াতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) প্রকল্পে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ১৪টি খাতে শতভাগ আয়কর অব্যাহতিসহ বেশকিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে টানতে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজের অংশ হিসেবে সরকার ১০ বছরের জন্য এই আয়কর সুবিধা ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে প্রকল্পসমূহ গতি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে মহাসড়ক, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেস, সেতু, টানেল, নদীবন্দর, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, সাবওয়ে, মনোরেল, রেলওয়ে, বাস টার্মিনাল, বাস ডিপো। তবে শর্তানুযায়ী, প্রকল্পে বিনিয়োগকারী দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ই-টিআইএন গ্রহণ, প্রকল্পের আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ ও প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

এছাড়া প্রথমবারের মতো বৃদ্ধাশ্রমে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও আয়কর মওকুফ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

গত ২২ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে শর্ত সাপেক্ষে এ ছাড় দেওয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানি পিপিপি প্রকল্পে বিনিয়োগের তারিখ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত আয়কর অব্যাহতির সুবিধা পাবে।

এছাড়া বিনিয়োগকারী কোম্পানির প্রকল্প পরিচালনার জন্য পরিশোধ করা রয়্যালটি ও টেকনিক্যাল এসিসেটেন্ট ফির ওপর একইভাবে ১০ বছর পর্যন্ত আয়কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

অপর প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পিপিপি প্রকল্পে বিনিয়োগকারী কোম্পানিতে বিদেশি কর্মী (টেকনিশিয়ান, ইঞ্জিনিয়ার) নিয়োগ করা হলে সেই বিদেশি কর্মীদের ৫০ শতাংশ আয়কর অব্যাহতি পাবেন।

শর্তানুযায়ী কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার বয়স ৫ বছর অতিক্রম করলে বিদেশি কর্মীরা এ সুবিধা পাবেন না। তবে কোম্পানির ই-টিআইএন গ্রহণ ও বিদেশি কর্মীদের রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ৪৫টি প্রকল্প পিপিপি কর্তৃপক্ষের পাইপ লাইনে রয়েছে। যেখানে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এরমধ্যে ৯টি প্রকল্পের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আর ১৩টি প্রকল্প প্রকিউরমেন্ট পর্যায়ে রয়েছে। ভৌত অবকাঠামো খাতে অর্থায়নের জন্য ২০১১ সালে বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেড (বিআইএফএফএল) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ২৬টি প্রকল্পে ২ হাজার ১১৩ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে এ ফান্ডের মাধ্যমে আরও ২০টি প্রকল্পে প্রায় ৩ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।

পিপিপি প্রকল্পের মধ্যে পরিবহন খাতে রয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (চুক্তি স্বাক্ষরিত), মংলা বন্দরে ২টি জেটি নির্মাণ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে মাল্টিমোড সার্ভিলেন্স সিস্টেম স্থাপন।

ঢাকা বাইপাস ৪ লেনে উন্নীতকরণ, শান্তিনগর-মাওয়া ফ্লাইওভার নির্মাণ, হেমায়েতপুর মানিকগঞ্জ পিপিপি সড়ক নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম এ্যাকসেস কন্ট্রোল হাইওয়ে নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু ব্রিজে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ।

ফুলছড়ি বাহাদুরাবাদ মিটার গেজ রেলওয়ে ব্রিজ নির্মাণ, ঢাকা আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, যাত্রাবাড়ী-সুলতানা কামাল ব্রিজ তারাবো পিপিপি রোড নির্মাণ, লালদিয়া বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ।

খানপুরে অভ্যন্তরীণ কনটেনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালন, ধীরাশ্রম রেল স্টেশনে নতুন আইসিডি নির্মাণ, পাটুরিয়া-গোয়ালন্দতে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ এবং তৃতীয় সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প।

অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে-কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক নির্মাণ (২টি চুক্তি), মংলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, মহাখালীতে আইটি ভিলেজ নির্মাণ, মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল-২, শেরপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩। আনোয়ারা-চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চল-৫, সিরাজগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল-১ এবং সিলেটে হাইটেক পার্ক নির্মাণ।

পর্যটন খাতের মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র উন্নয়ন। জাকির হোসেন রোড চট্টগ্রামে পাঁচতারা হোটেল নির্মাণ, কক্সবাজারে আন্তর্জাতিকমানের পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ (মোটেল উপল) এবং সাবরাং এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন প্রতিষ্ঠা।

স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্পগুলোর মাধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিডনি ডায়ালিসিস সেন্টার স্থাপন, জাতীয় কিডনি ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটে কিডনি ডায়ালিসিস সেন্টার স্থাপন। বয়স্ক নাগরিকদের জন্যস্বাস্থ্য ও হাসপিটালিটি কমপ্লেক্স নির্মাণ, সৈয়দপুরে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন ও রেলওয়ে হাসপাতাল আধুনিকীকরণ, খুলনায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন ও ২৫০ শয্যা হাসপাতাল নির্মাণ।

কমলাপুরে মেডিক্যাল কলেজ ও রেলওয়ে হাসপাতাল আধুনিকীকরণ এবং চট্টগ্রামে সিআরবিতে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন ও রেলওয়ে হাসপাতাল আধুনিকীকরণ।

আবাসন খাতের মধ্যে রয়েছে মিরপুরে এনইএচএ হাউজিং স্যাটেলাইট টাউন নির্মাণ, বাসস ভবন নির্মাণ, কুমিল্লার রেলওয়ের অব্যবহৃত জমিতে হোটেল কাম গেস্ট হাউস ও শপিংমল নির্মাণ।

খুলনায় রেলওয়ের অব্যবহৃত জমিতে হোটেল কাম গেস্ট হাউস ও শপিংমল নির্মাণ এবং শক্তি খাতে চট্টগ্রামের কুমিরাতে এলএনজি বটলিং প্লান্ট স্থাপন করা হবে।

আজকের বাজার: এলকে/এলকে ২৪ জুন ২০১৭