বাংলাদেশের ছাত্র বিক্ষোভের খবর বিশ্ব গণমাধ্যমে

বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভের সংবাদ দেশীয় সংবাদ মাধ্যমের পাশাপাশি ডেইলি মেইল, সিনহুয়া, এএফপি ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসসহ আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের নজিরবিহীন এ ছাত্র বিক্ষোভের খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করেছে।

বাংলাদেশের ছাত্র বিক্ষোভের খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করেছে ভারতের নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। এতে বলা হয়, বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকার রাস্তা অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা শহর প্রায় পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে।

লন্ডনের ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইল লিখেছে, ঢাকার প্রায় এক ডজন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে বাধ্য না করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের কাছে বিক্ষোভ সমাপ্ত করার আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রীর এ আহ্বান উপেক্ষা করে তারা একজন মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী এসব শিশু নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে।

এছাড়া বিক্ষোভের সময় ঢাকায় তিন শতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। লাগাতার বিক্ষোভের কারণে সৃষ্ট জনদুর্ভোগের চিত্রও তাদের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, বিক্ষোভের কারণে ঢাকাবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। এর পরেও তারা শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভকে সমর্থন জানিয়েছেন।

সিঙ্গাপুরের স্ট্রেইট টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের বিতর্কিত মন্তব্য শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভকে আরো উস্কে দিয়েছে। তিনি ঢাকায় নিহত ২ স্কুল শিক্ষার্থীর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে আগের দিন ভারতে সংঘটিত একটি বাস দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তার ওই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তীব্র সমালোচনার মুখে তিনি পরে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে ঢাকার রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

খবরে বলা হয়, নিরাপত্তার ঝুঁকি ও নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থার বেশ দুর্নাম রয়েছে। সেখানকার বেশিরভাগ গণপরিবহনের চালক অদক্ষ ও কমবয়সী। একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ঢাকা শহরে ৪ হাজার ২০০ জনেরও বেশি পথচারী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। এই সংখ্যা পূর্বের বছরের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি।

ঢাকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের খবর প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা সিনহুয়া। সংস্থাটি বলেছে, বেপরোয়া গাড়ি চালনার কারণে সহপাঠীর মৃত্যুতে ঢাকার রাস্তায় বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। তারা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে রেখেছে। ঘাতক বাসের চালক ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এর পরেও শিক্ষার্থীরা অব্যাহতভাবে বিক্ষোভ দেখিয়ে চলেছে। পরিবহন মালিকরা তাদের গাড়ি রাস্তায় না নামতে দেয়ায় ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।

তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর খবরে বলা হয়েছে, নিহত ২ সহপাঠীর হত্যাকারী গাড়িচালকের বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো ঢাকার রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। শ্রমিকরা কমপক্ষে চার বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হবে বলে নিশ্চিত করলেও শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।

 

আজকের বাজার/এমএইচ