‘বাংলাদেশ-মায়ানমার কি যুদ্ধে জড়াবে’ নিউজ উইকের প্রতিবেদন

বার বারই বাংলাদেশের আকাশসীমা লংঘনে করেছে মায়ানমার। উসকানিমূলক এ ধরনের কাজের জন্য ‘অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি’ দেখা দিতে পারে বলে নেইপিদোকে সতর্ক করে দিয়েছে ঢাকা। এ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে; রোহিঙ্গা সঙ্কটের জেরে যা ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে।

রোহিঙ্গা সঙ্কট ও আকাশসীমা লঙ্ঘনের জেরে প্রতিবেশী এ দুই দেশ কী যুদ্ধে জড়াতে পারে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন নিউজ উইক।

যদিও মায়ানমার বলছে আকাশসীমা লংঘনের যে অভিযোগ বাংলাদেশ তুলেছে তা খতিয়ে দেখা হবে। মায়ানমারের সরকারের মুখপাত্র জ্য তে বলেছেন, বাংলাদেশের অভিযোগের ব্যাপারে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। বাংলাদেশ যে তথ্য দিয়েছে তা যাচাই করে দেখবে মায়ানমার। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, আমাদের দুই দেশ শরণার্থী সঙ্কট মোকাবেলা করছে। ভালো বোঝাপড়ার মাধ্যমে আমাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ বলছে, গত ১০, ১২ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর মায়ানমারের ড্রোন এবং হেলিকপ্টর তিন দফায় বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। এ অভিযোগে ঢাকায় নিযুক্ত মায়ানমারের দূতাবাসের শীর্ষ এক কর্মকর্তাকে তলব করে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

শুক্রবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলছে, বার বার এ ধরনের উসকানিমূলক কাজের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা। একই সঙ্গে এ ধরনের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন যাতে আর না ঘটে তা নিশ্চিত করতে মায়ানমারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বৌদ্ধ অধ্যুষিত মায়ানমারে নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ কয়েক দশক ধরে দেখছে বাংলাদেশ। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে মনে করা হয়।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রাখাইনে পুলিশের ৩০টি তল্লাশি চৌকি ও একটি সেনাক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলায় ১২ পুলিশ নিহত হওয়ার পর ওই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশ বলছে, সব শরণার্থীকে অবশ্যই ফেরত যেতে হবে। তবে মিয়ানমার বলছে, যারা তাদের নাগরিকত্বের নথি দেখাতে পারবে শুধুমাত্র তাদের ফেরত নেয়া হবে। কিন্তু অধিকাংশ রোহিঙ্গাই রাষ্ট্র ও পরিচয়হীন। রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের নাগরিকত্ব নেই।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে যোগ দিতে ১৬ সেপ্টেম্বর শনিবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা ত্যাগ করেছেন। প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে ও ‘জাতিগত নিধন’ বন্ধ করতে মায়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগে জাতিসংঘের এই অধিবেশনের আহবান জানাবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

সংঘাতের কারণে সীমান্তের দুই পাশেই মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। প্রায় ৫০ বছর কঠোর সামরিক শাসনের পর নোবেল বিজয়ী নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বে মায়ানমার কোন পথে এগোচ্ছে সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা নীতি এখনো সেনা জেনারেলরা নিয়ন্ত্রণ করেন। তারপরও রাখাইনের সহিংসতা বন্ধ ও নিন্দা না জানানোয় বহির্বিশ্বে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছেন সু চি।

মায়ানমারে সামরিক শাসনের অবসান ঘটলেও তাদের কার্যকলাপে এখনো ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। এমনকি রোহিঙ্গাদের প্রতি সেনা জেনারেলদের পাশাপাশি দেশটির নাগরিকদের কোনো ধরনের সহানুভূতি নেই। রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানেরও প্রচুর সমর্থন রয়েছে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মায়ানমারে।

তবে মায়ানমার এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলছে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ) বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন পরিচালনা করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গত ২৫ আগস্ট পুলিশি তল্লাশি চৌকি ও সেনা ক্যাম্পে হামলার দায় স্বীকার করেছে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের এই সংগঠন। গত বছরের অক্টোবরে রাখাইনে একই ধরনের হামলার অভিযোগ ছিল সংগঠনটির বিরুদ্ধে।

তবে এআরএসএ বলছে, তারা রোহিঙ্গাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছেন। একই সঙ্গে বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন।

আজকের বাজার : এলকে/এলকে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭