ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে জনসাধারণকে বিরত রাখতেই আবগারি শুল্ক

বঙ্গবন্ধুর আর্দশ ছিল অন্তর্ভুর্ক্তিমূলক ও জনকল্যাণমুখী। প্রস্তাবিত বাজেটে অন্তর্ভুর্ক্তিমূলক কিছু দেখছি না। ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক বাড়ানো অন্তর্ভুর্ক্তিমূলক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। মানুষকে ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে দূরে রাখতে প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক বসানো হয়েছে।

৪ জুন রোববার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ও ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের প্রফেসর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট বিষয়ক এই সেমিনারের আয়োজন করে ব্র্যাক বিজনেস স্কুল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সাবেক গর্ভনর বলেন, মদ, গাজাসহ কিছু পণ্য রোধকল্পে আবগারি শুল্ক হয়। এবারের বাজেটে ব্যাংকিংয়ে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। মানুষকে ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে বিরত রাখতেই এই আবগারি শুল্ক।

বাজেটের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাজেটের প্রথমে বলা হয়ছে উন্নয়নের মহাসড়কে, সময় এখন বাংলাদেশের। উন্নয়নের মহাসড়কে যেতে প্রস্তুতি দরকার। প্রস্তুতি ছাড়াই মহাসড়কে উঠে গেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে কোনো মিল নেই।

ভ্যাট সম্পর্কে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, দেশের সব মানুষ নিজেদের আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখার মতো অবস্থানে এখনও পৌঁছায়নি বাংলাদেশ। এই অবস্থায় প্যাকেজ ভ্যাটের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এই ভ্যাটের চাপে পড়বে ভোক্তা। ভোক্তা থেকে ১৫% ভ্যাট আদায় করা হলেও তা সঠিকভাবে সরকারি কোষাগারে যাবে বলে আমার মনে হয় না।

সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সামাজিক সুরক্ষায় ২৬ হাজার কোটি টাকার মতো রাখা হয়েছে। যারা সুরক্ষিত- তাদের আরও সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে। আর যারা সুরক্ষিত নয়- তাদের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের মাত্র ৫ দশমিক ১ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এই খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় ২-৩ গুণ বাড়ানো উচিৎ। সেটা করা হয়নি। এই খাতের বরাদ্দ নামমাত্র বাড়ানো হয়েছে।

এই সাবেক গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিআরসি, বিটিআরসিসহ দেশের যেসব প্রতিষ্ঠান বাজেট বাস্তবায়ন করবে তাদের দক্ষতা এবং সংস্কারের কোনো নির্দেশনা বাজেটে নেই। কিন্তু তাদের ছাড়া বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে ড. সালেহউদ্দীন বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলো লোকসান দিচ্ছে; আর সরকার টাকা দিচ্ছে। এই টাকা দিয়ে কর্মকর্তাদের চুরিতে আরও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। বাজেটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সুরক্ষা, রপ্তানি বৃদ্ধির বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো নির্দেশনা নেই। জোড়া তালি দেওয়া বাজেট এটি।

মূল্যস্ফীতি বিষয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, সব জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এরপরও মূল্যস্ফীতি নাকি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। কোথায় জরিপ করছে? কীভাবে করছে? কিছুই মাথায় আসে না। বাজেটের টাকা দেবে গৌরি সেন অর্থাৎ আমজনতা। গতানুগতিক ও গাণিতিক এই বাজেটের রূপকল্প রূপ গল্পে থেকে যাবে। বাজেট বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ হবে।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ৪ জুন ২০১৭