ভ্যাটের অজুহাতে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির শঙ্কা ক্যাবের

‌‌বাজেটের পর সব পণ্যে ১৫% ভ্যাট- এ স্লোগানে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বৃদ্ধি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সুযোগ সন্ধানী কোনো অসৎ ব্যবসায়ী অসাধু উপায়ে যেন ভোক্তার পকেট কাটতে না পারে সেজন্য সরকারকে সংগঠনের পক্ষ থেকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

৩১ মে বুধবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ‌রমজানে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করুন শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন ও মতবিনিময় সভায় ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

একদিকে রমজান, অন্যদিকে বাজেট। এ দুই কারণে যেন ভোগ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান গোলাম রহমান। তিনি বলেন, নতুন আইনে অনেক পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত হবে। অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর আশ্বস্ত করেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর ভ্যাট আরোপিত হবে না। বিদ্যুৎ, গ্যাসে ভ্যাটের কারণে দাম বাড়বে না, ভোক্তাদের সমস্যা হবে না। ভ্যাট রিফান্ডের সুযোগ থাকার কারণে ভোক্তাদের কিছুটা কম ভ্যাট দিতে হবে।

কিন্তু আমাদের ভয়- অসাধু ব্যবসায়ীরা সকল পণ্যে ১৫% ভ্যাট এ স্লোগানের সুযোগ নিয়ে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করতে পারেন। সেজন্য সরকারকে সচেতন থাকতে হবে। যারা অসাধু উপায়ে ভোক্তা বা ক্রেতার পকেট কাটতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

চালের বাজার নিয়ে গোলাম রহমান বলেন, গত কয়েক মাস মোটা চালসহ অন্যান্য চালের দাম বেড়েছে। মোটা চালের দাম বেশি বেড়েছে। মোটা চালের বর্তমান দাম প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। প্রায় দুই কোটির বেশি মানুষের যে ক্রয় ক্ষমতা তার ৭০ শতাংশ এ চাল ক্রয় করে।

তিনি বলেন, চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সরকার প্রথমে বলেছে বছর শেষ সেজন্য চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপর বলেছে হাওর এলাকায় বন্যা হয়েছে, চাল উৎপাদন এলাকায় রোগ বালাই দেখা দিয়েছে। এতে কয়েক লাখ টন চাল নষ্ট হয়েছে, উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সর্বশেষ বলেছে, সরকারি গুদামে ৩ লাখ টনেরও কম চাল মজুদ আছে। সব কিছুকে পুঁজি করে মধ্য সত্ত্বভোগী, মিলার, আড়ৎদাররা মিলে দাম দিন দিন বাড়িয়ে চলেছে।

চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে গোলাম রহমান বলেন, সরকারি গুদামের ক্ষমতা আছে ২০ লাখ টনের বেশি। মজুদ রয়েছে নিম্ন পর্যায়ে। সরকার দ্রুত যেন গুদামের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী চাল আমদানি করে মজুদ গড়ে তোলে। সরকারি গুদামে মজুদ থাকলে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধিতে ভয় পাবে।

বেসরকারি খাতে চাল আমদানি বিষয়ে তিনি বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণে বাংলাদেশ- এ অর্জন ধরে রাখতে হলে কৃষককে ন্যায্যমূল্য দিতে হবে। ন্যায্যমূল্য না দিলে উৎপাদন কমে যাবে। দীর্ঘমেয়াদী খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। সরকার চাল সংগ্রহ মূল্য ঘোষণা করেছে ৩৪ টাকা। কিছু কিছু মিলার এ দামে সরকারকে চাল দেবে না বলে ঘোষণা করেছে। সেজন্য সরকার যেন কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান, চাল ক্রয় করে। এক্ষেত্রে মধ্যসত্ত্বভোগী, মৌসুমী ব্যবসায়ী, মিলারদের বাদ দিয়ে কৃষকের সাথে চুক্তিভিত্তিক পদ্ধতি চালু করার পরামর্শ দেন তিনি।

চালের আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক সম্পর্কে তিনি বলেন, এবার যেহেতু ১০-১২ লাখ টন চাল কম উৎপাদন হয়েছে, সেহেতু অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহে জোর না দিয়ে বিদেশি চাল আমদানি করে মূল্য স্থিতিশীল রাখা যেতে পারে। যদি অন্য কোন উপায়ে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা না যায় তাহলে চালের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ কমানোর চিন্তা করতে পরামর্শ দেন তিনি।

“এখনই আমরা শুল্ক কমানোর কথা বলছি না। সরকারের মনিটরিং জোরদার করতে হবে। অবস্থা বুঝে সরকারকে এ ব্যবস্থা নিতে হবে।”

তিনি বলেন, ছোলা, চিনি, সয়াবিন তেলসহ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য গত বছরের চেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম কম হলেও দেশে কারসাজির কারণে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে। প্রতিরোধে সরকারকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসায়ীদের সাথে বসে তা ঠিক করতে হবে।

গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সম্পর্কে গোলাম হোসেন বলেন, পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২৩ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। গ্যাসের দাম দু’দফায় ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বেশ বাড়ানো হয়েছে। সরকার বড় বিদ্যুৎ স্থাপন করায় বেসরকারি খাত থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনছে। রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের সাথে চুক্তি নবায়ন না করা এবং বিদ্যুতের দাম আর বৃদ্ধি না করার অনুরোধ করেন তিনি। একই সাথে পানি ও গ্যাসে সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ৩১ মে ২০১৭