উন্নয়ন ও নির্বাচনমূখী বাজেট আজ

মানবসম্পদ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, কৃষি, জ্বালানি, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, বিনিযোগের গতি সঞ্চারসহ আগামী জাতীয় সংসংদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করা হবে আজ।

১ জুন বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় জাতীয় সংসদে এ বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এটি বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের চতুর্থ এবং অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ১১তম বাজেট। বিটিভিসহ দেশের সব টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে এ বাজেট বক্তৃতা।

অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার বাজেটের আকার হবে ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি; যা দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট। বাজেটের আকারের সঙ্গে বাড়ানো হচ্ছে ঘাটতির পরিমাণ। বাজেটে ঘাটতি ধরা হতে পারে ১ লাখ ২৯ হাজার ১০ কোটি টাকা; যা জিডিপির প্রায় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি বাজেটে যা ছিল ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে নেওয়া অর্থের জন্য বছর শেষে সুদ বাবদ খরচ হতে পারে ৪২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) নির্ধারণ করা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ।

বিশাল এ বাজেটে আয়-ব্যয়ের ব্যবধান কমানোর টার্গেট থাকবে। আয়ের পথ খুঁজতে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে ১ জুলাই থেকে। এ আইন অনুযায়ী, ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করা হবে।

এবারের বাজেটে অগ্রাধিকার খাতে থাকছে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি। সবার জন্য সামাজিক সুরক্ষা-২০২২ বাস্তবায়নে আগামী বাজেটে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিকে আরও গতিশীল করা হচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। বাড়ানো হতে পারে বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী, হিজড়া, বেদে, দরিদ্র মা ও কর্মজীবী মায়ের মাসিক ভাতার পরিমাণ। ৫০০ টাকা বাড়ানো হতে পারে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের বছরে দুটি উৎসব ভাতা দেয়ার ঘোষণাও আসতে পারে।

প্রস্তাবিত বাজেটে ১২৭টি পণ্য ও সেবা খাতে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হতে পারে। চাল, ডাল, ডিম, ফল, তরল দুধ, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, মরিচ, মাংস, মুড়ি, চিঁড়া, আলুসহ কয়েক শ’ নিত্যপণ্য ক্রয়ে কোন ভ্যাট থাকছে না।

থাকছে বিনিয়োগবান্ধব নানা উদ্যোগ। উন্মুক্ত করা হতে পারে কালো টাকার বিনিয়োগ। উঠিয়ে নেওয়া হতে পারে জমির কেনা-বেচায় সরকার নির্ধারিত মূল্য। এতে কালো টাকা পাচার কম হবে, বাড়বে দেশিয় বিনিয়োগ।

বাজেটের একটি বড় অংশ সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ভর্তুকি ও ঋণের সুদ পরিশোধে রাখা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ঘোষণা আসতে পারে ব্যবস্যারত বিদেশি কোম্পানি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ২৭ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে। সহায়তার ঘোষণা আসতে পারে দেশিয় শিল্প সম্প্রসারণে। স্থানীয় চাহিদা পূরণে বাড়ানো হবে থোক বরাদ্দ। কমানো হতে পারে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার। তবে তা বিদ্যমান বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করে করা হবে।

সঞ্চয়পত্র নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, সরকার সেভিং সার্টিফিকেট-এর সুদের হার কমানোর বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে।

নতুন বাজেটে ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ হচ্ছে ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। খাদ্য খাতে ৪ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য খাতে বরাদ্দ হচ্ছে ১৫শ’ কোটি টাকা। প্রণোদনা বাবদ কৃষি খাতে সম্ভাব্য বরাদ্দ ৯ হাজার কোটি টাকা, রপ্তানিতে ৪ হাজার কোটি টাকা ও পাটজাত দ্রব্যে ৫শ’ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অনুকূলে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খলা রোধে বাজেটে ব্যাংকিং কমিশন করার ঘোষণা আসতে পারে বলেও সূত্র জানিয়েছে। মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ, ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনায় মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারের রুপরেখাও থাকছে।

প্রতিবারের ন্যায় এবারও ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থাৎ পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বাজেট বক্তব্য উপস্থাপন করা হবে।

বাজেট বক্তৃতা, বাজেটের সংক্ষিপ্ত সার, বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি, সম্পূরক আর্থিক বিবৃতি, মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি, বিকশিত শিশু সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রা: হালচিত্র-২০১৭; জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলা; জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন; সংযুক্ত তহবিল-প্রাপ্তি; বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষা -২০১৭ সরকারের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

ব্যাপকভিত্তিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি ওয়েবসাইট লিংক www.bangladesh.gov.bd, www.nbr-bd.org, www.plancomm.gov.bd, www.imed.gov.bd, www.bdpressinform.portal.gov.bd, www.pmo.gov.bd থেকে বাজেট ডকুমেন্ট ডাউনলোড করা যাবে।

আগামী ২ জুন, ২০১৭ তারিখ শুক্রবার বিকেল ৩:০০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ১ জুন ২০১৭