ভ্যাট আইন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত

অর্থনীতিতে নতুন ভ্যাট আইনের অভিঘাত বিষয়ে গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প। ৮ অক্টোবর রোববার রাজধানীর আইডিইবি ভবনে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প কার্যালয়ে এ জন্য মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

‘জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর অভিঘাত’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় দেশের সব বেসরকারি গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সভায় সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ভ্যাট আইন নিয়ে এখনো বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে কনফিউশন রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি আধুনিক কর কাঠামো এবং এর আলোকে ভ্যাট আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে কারো দ্বিমত নেই।

তিনি বলেন, একটি ফরমাল ভ্যাট সিস্টেমস বাস্তবায়নের প্রয়োজন রয়েছে। এর মাধ্যমে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের কর রাজস্ব আদায় জিডিপিতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। এ জায়গা থেকে উত্তরণ এবং সরকারের রাজস্ব দরকার রয়েছে। এসব নিয়ে কোনো পক্ষের মধ্যে বির্তক নেই।

মোয়াজ্জেম বলেন, যেসব জায়গায় বির্তক রয়েছে সেসব জায়গায় আলোচনা ও ভবিষ্যতের রিসার্চগুলো সে জায়গাগুলোতে হওয়া দরকার। ভবিষ্যতের গবেষণায় যেন আগেরগুলোকে পুনরাবৃত্তি করা না হয়। যেসব জায়গায় বিভিন্ন পক্ষ ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেনি সেসব জায়গা নিয়ে গবেষণা হতে পারে।

তিনি বলেন, গত ৩ বছরে এনবিআর যে পরিমাণ নলেজ রিসার্চ বেইজড ডেভেলপমেন্ট করেছে তাতে আমরা সবাই খুশি। এখন যে গবেষণা হবে সেখানে যেন পুরনো কোন কিছু না আসে। এখন দরকার হবে ভ্যাট আইনের অপারেশনাল রিসার্চ। কোন খাতে কী চ্যালেঞ্জ, সমস্যায় কী, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কী চ্যালেঞ্জ, তা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যাবে সে ধরনের একটি অপারেশনাল একশান রিসার্চ সাজেশন থেকে বেরিয়ে আসে।

তিনি বলেন, ভ্যাট সিস্টেম বাস্তবায়নের মাধ্যমে সবার কি উপকার হবে। পাশাপাশি এ সিস্টেমস বাস্তবায়নের কারণে ব্যবসায় প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কী ধরনের সমস্যায় পড়বেন তা একজন ব্যবসায়ীর জন্য দুশচিন্তার বিষয়। গবেষণার সময় এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে। কত বেশি রাজস্ব আদায় করতে পারবো এ অবজেকটিভ থেকে বেরিয়ে এসে একটি আধুনিক ভ্যাট কাঠামো কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় এ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নতুন আইন বাস্তবায়নের চেষ্টা করা উচিত।

ভারতের জিএসটির উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভারত জিএসটি বাস্তবায়নে যে অভিঘাতের সম্মুখীন হচ্ছে তা জেনে এবং সে অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন দরকার। ছোট ব্যবসায়ীরা অভিঘাতের শিকার হচ্ছেন। আমাদের দেশেও তা দেখা উচিত। ব্যবসায়ীরা কর প্রশাসনের পক্ষ থেকে হেনস্তার শিকার হন বলে অভিযোগ করেন। তা কিভাবে নিরসন করা যায় তা যেন গবেষণায় উঠে আসে। কোন সনাতনী গবেষণাকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না। ভ্যাট আদায় শুধু কেন্দ্রীয় পর্যায় নয় তৃণমূল পর্যন্ত আদায় করতে অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, এ গবেষণায় বিদেশি নয় দেশিয় গবেষণা সংস্থাকে যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ দেশিয় সংস্থা অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয় তুলে আনতে পারবেন। এ গবেষণার সাথে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সকল পক্ষই যেন অন্তভূর্ক্ত থাকে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভ্যাট নিয়ে নতুন করে গবেষণার প্রয়োজন নেই। ভ্যাট আইন স্থগিত হবার পর থেকে গবেষণা করতে হবে। ভ্যাটের হার, ভ্যাট দাতার সংখ্যা নিয়ে আমাদের কিছু বির্তক ছিল। ভ্যাটের হার ১৫% হলে কী পরিমাণ রাজস্ব আসবে তা নিয়ে গবেষণা দরকার।

তিনি বলেন, দেশিয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে গবেষণায় যুক্ত করতে হবে। এছাড়া সব গবেষণা সংস্থা, ব্যবসায়ী সমিতি, চেম্বারে ভ্যাট-ট্যাক্স গবেষণা ইউনিট আছে তা কাজে লাগাতে পারে। আমাদের দেশে ভ্যাট-ট্যাক্সের হার বেশি। ১৪০ এর বেশি দেশে ভ্যাট বাস্তবায়িত হচ্ছে। এনবিআর ১৯৯১ সালে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে পারলে এখনো নতুন আইন বাস্তবায়ন করতে পারবে। নতুন আইন যদি একটি ভালো কাঠামোর ওপর দাঁড় করানো যায় তাহলে ব্যবসার খরচ কমে যাবে। অটোমেশন হলে এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে দ্বন্ধ কমে যাবে।

তিনি বলেন, ভ্যাট ১৫% আদায় করে এনবিআর কোথায় নিয়ে যাবে? এনবিআর তো পোষ্ট অফিস হিসেবে কাজ করে। এনবিআর রাজস্ব আহরণ করে সরকারের কোষাগারে জমা দেয়, যেখান থেকে উন্নয়ন হয়। রাজস্ব বিভাগের রিসার্চ ওয়ার্ক আরও বাড়ানো দরকার। সেক্ষেত্রে সরকার একটি রেভিনিউ কমিশন করে দিতে পারে, যেখান থেকে এনবিআরকে বিভিন্ন সময় সাজেশন দেবে।

পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতিতে একটা কথা আছে- কোন আইন করার আগে তার একটি রেগুলেটরি ইম্ট্যাক্ট অ্যানালাইসিস করা উচিত। পশ্চিমা দেশে হলেও আমাদের দেশে হয়নি। আমরা নতুন ভ্যাট আইনের ইম্প্যাক্ট অ্যানালাইসিস এর মাধ্যমে তা শুরু করতে পারি।

তিনি বলেন, খাত অনুযায়ী গবেষণা করা দরকার। তবে এ আইন বাস্তবায়নের ফলে কোন খাতে কী অভিঘাত হবে তা সরকারকে দেখতে হবে। নতুন আইনের যেসব বিষয় গবেষণার কথা বলা হয়েছে তা সঠিকভাবে করা না হলে ২০১৯ সালে আবারও এ আইন বাস্তবায়নে সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৯ অক্টোবর ২০১৭