রোহিঙ্গাদের জন্য টেলিটকের ফোন বুথ: তারানা

মায়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যেন স্বল্প খরচে যোগাযোগ করতে পারেন, সেজন্য কক্সবাজারের প্রতিটি ক্যাম্পে সরকার বুথ স্থাপন করবে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টেলিটকের বুথ বসাচ্ছি, যেন রোহিঙ্গারা যোগাযোগের সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়।’

২৩ সেপ্টেম্বর শনিবার বিটিআরসি ভবনে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছে মোবাইল সিম বিক্রি সংক্রান্ত সভা শেষে একথা জানান প্রতিমন্ত্রী।

তারানা হালিম বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মৌলিক অধিকার, খাদ্য, আশ্রয় এবং স্থায়ী বাসস্থানের জন্য প্রাণপণ কাজ করে যাচ্ছে। তাদের সব রকমের সহযোগিতার জন্য সরকার হাত প্রসারিত করেছে। এই মানবিক দিকটি বিবেচনায় রেখে আমরা বুথ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আজকে এমটিএমসি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, র‌্যাব, পাসপোর্ট অথোরিটি, এনআইডিসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গেও আমরা (বিটিআরসি) কথা বলেছি।’

প্রতিমন্ত্রী জানান, সভায় রোহিঙ্গাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে টেলিযোগাযোগের দিকে দৃষ্টি দেয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়েছে। কেবলমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থ নয়- সকল অপারেটররা যেন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দিকেও গুরুত্ব দেন সভায় সে বিষয়টিও প্রাধান্য পেয়েছে।

তারানা হালিম বলেন, ‘পত্রিকার মাধ্যমে এবং সরেজমিন দেখা গেছে, যেসব শরণার্থী এসেছেন তাদের অনেকেই মোবাইল হ্যান্ডসেট ও সিম ব্যবহার করছেন। বিষয়টি আমরা মূলত সকলেই জানি এবং আমরা বলতে পারি যে, বায়োমেট্রিক ভেরিফাইড ছাড়া কোনো সিম একটিভ হবার কথা নয়। আমরা সকলের সঙ্গে আলোচনা করে জেনেছি, এক্ষেত্রে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি হচ্ছে, কিছু লোক বাড়তি অর্থের লোভে শরণার্থীদের কাছে তাদের নিজেদের বায়োমেট্রিক ভেরিফাইড সিমটি বিক্রি করেছেন, যেটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’

যারা রোহিঙ্গাদের হাতে নিবন্ধিত সিম তুলে দিয়েছেন তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শরণার্থীদের কাছে ভেরিফাইড সিম বিক্রি করা যে অপরাধ, তা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ক্যাম্পেইন করা হবে। নিজের বায়োমেট্রিক সিম অন্যের হাতে তুলে দিলে এবং এটি নিয়ে কোনো সমস্যা হলে যার নামে সিম রেজিস্ট্রেশন করা আছে তাকেই শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী জানান, ‘রোহিঙ্গারা অন্য দেশ থেকে এসেছেন। তাই এ দেশের নিয়ম জানবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেক্ষেত্রে যারা রিটেইলার আছেন এবং যেসব অসাধু মানুষ, যারা তাদের সহায়তায় এভাবে নিজেদের বায়োমেট্রিক করা সিম শরণার্থীদের কাছে বিক্রি করেছেন, তারা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।’

বিষয়টি থেকে প্রতিকারে সরকার কি করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তারানা হালিম বলেন, ‘এজন্য আমরা দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে চাই। একটি হলো, ওই এলাকার সমস্ত মোবাইল টাওয়ারের মাধ্যমে আমরা ১ জুলাই থেকে কোন কোন সিম একটিভ হয়েছে তার ডেটা গ্রহণ করবো। সেই সূত্র ধরে আমাদের অপারেটরদের কোন কোন রিটেইলাররা সেখানে আছেন তা দেখবো। রিটেইলারদের তালিকা আমাদের কাছে রয়েছে। সেই তালিকা ধরে অগ্রসর হলেই আমরা বুঝতে পারবো এবং সিমের সংখ্যাটি আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, আমরা সেখানে মোবাইল কোর্ট বসানোর জন্য এবং এই অভিযান পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করবো।’

টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য যতগুলো ক্যাম্প রয়েছে, আমরা প্রতিটি ক্যাম্পে একটি করে টেলিটকের বুথ স্থাপন করবো। সেখানে একটি মোবাইল ফোন থাকবে, টেলিটক সিম থাকবে। সেখান থেকে যার যোগাযোগ করা দরকার তারা বর্তমান মূল্যের তুলনায় স্বল্প ট্যারিফে কথা বলে মোবাইল আবার বুথে রেখে যাবে।’

তিন দিনের মধ্যে ক্যাম্পগুলো ‘টু’ জি নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে টেলিটককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান তারানা। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে টেলিটকের প্রতিনিধি দল সেখানে পাঠিয়েছি। তিনদিন পর আমি নিজে গিয়ে সেই বুথগুলো পরিদর্শন করবো।’

আজকের বাজার: এলকে / এলকে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭