সবজি চাষে স্বাবলম্বী টাঙ্গাইলের সাহেরা বেগম

অক্লান্ত পরিশ্রম, চেষ্টা এবং পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি পূর্বপাড়া গ্রামের আব্দুল খালেকের স্ত্রী সাহেরা বেগম (৫০)।

এক সময় অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করলেও এখন তার সংসারে ফিরেছে সুদিন।  স্বামী-সন্তান-নাতী নিয়ে পেট পুরে খেতে পারছেন তিনি। এখন আর অন্যের কাছে ধারকর্জ করতে হয় না। সুদূরপ্রসারী চিন্তাশক্তি তার জীবনধারা পাল্টে দিয়েছে। তাই তো অভাব-অনটন, দুঃখ-কষ্ট তার জীবনে বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। সবজি চাষ করে কয়েক বছরে বদলে দিয়েছেন পরিবারের চালচিত্র। তিনি এখন স্বাবলম্বী।

বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর আগে। নিজের জায়গা-জমি বলতে স্বামীর ৭ শতাংশ বাড়িভিটা ছিল। ধারকর্জ করে সংসার চালাতে হতো। সংসারের ঘানি টানতে আব্দুল খালেক ধারকর্জ করে ঋণগ্রস্ত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। এরই মধ্যে তাদের ৩টি সন্তানের জন্ম হয়। কোন কূলকিনারা না দেখে তিনি বাড়ীর পাশেই ১৫ শতাংশ জমি বর্গা নেন।

স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে ওই বর্গা জমিতে করল্লা চাষ শুরু করেন। করল্লা বিক্রির টাকায়ই ফিরে আসে পরিবারের সচ্ছলতা। এখন আর তাদের পিছনে ফিরে তাকাতে হয় না। সে এখন প্রায় ৯০ শতাংশ জমির মালিক। পুরো জমিতেই করল্লা চাষ হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে ৮-১০ মণ করল্লা বিক্রি করেন।

প্রতিমণ করল্লা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। সবজি চাষে সাহেরা বেগমকে সহযোগিতা করে স্বামী আব্দুল খালেক, সন্তান ও নাতী। তার জমিতে করল্লার পাশাপশি পটল ও বরবটির চাষ করছে। সাহেরা বেগমের সবজি চাষ দেখে এলাকার অনেকেই এখন সবজি চাষে উৎসাহী হয়ে পড়েছে।

সাহেরা বেগম জানান, সবজি চাষ তার পরিবারের দুঃখ-কষ্ট দূর করে এনে দিয়েছে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য। এখন আর ধারকর্জ করতে হয় না। সবজির আয় থেকে একটি চার চালা টিনসেড বিল্ডিং তৈরি করেছেন। গরু কিনেছেন ৩টি। নাতিকে লেখাপড়াও শিখাচ্ছেন। বড় ছেলে শাহ্ আলম (৩৩) বাবা-মার সাথেই থাকেন। মেয়ে শাহানা বেগম (৩০) ও কল্পনা বেগমকে (২৫) বিয়ে দিয়েছেন। নাতী রাফিউল ইসলাম পাইস্কা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। রাফিউলও পড়াশুনার ফাঁকে সবজি চাষে সাহায্য করে তাদের।

আব্দুল খালেকের বড় ছেলে শাহ্ আলম জানান, আমার জন্মের পর থেকেই বুদ্ধি হওয়া পর্যন্ত বাবা-মাকে দেখি সবজি চাষ করতে। তাই আমিও সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে পড়ি।

এ ব্যাপারে ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, এ উপজেলায় অনেক সবজি চাষ হয়। তন্মধ্যে মুশুদ্দি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয়। এখানকার সবজির গুনগত মান অনেক ভালো। এজন্য আমরা এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও বাড়ী-বাড়ী গিয়ে ওঠান বৈঠকের মাধ্যমে সবজি চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করে তুলছি। তাদেরকে নানা ধরনের কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপায়ে পোকা দমন করতে বলা হচ্ছে।

আারএম/