সুনামগঞ্জে শিমুলের রক্তরাঙা সৌন্দর্যে মুগ্ধ পর্যটকরা

সুনামগঞ্জে শিমুলের রক্তরাঙা সৌন্দর্যে মুগ্ধ পর্যটকরা। ফুলের পাপঁড়ি  ছিটিয়ে মেতে উঠেছেন ভালোবাসার রঙে। নদীর ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে যাদুকাটা নদী।  আর এপারে রক্তিম ফুলের সমারোহ ও অগনিত পাখির কলকাকলি।
বসন্ত এলে তাহিরপুর উপজেলায় যাদুকাটা নদী সংলগ্ন পুরো শিমুল বাগানের গাছ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। ফাগুনের অরুণ আলোয় ফোটে ফুলগুলো। চোখের তৃষ্ণা মেটাতে প্রতিদিন এই বাগান দেখতে ছুটে আসছেন ১০ থেকে ১৫ হাজার পর্যটক। এই বাগানকে ঘিরে চাঙা উত্তরের পর্যটনকেন্দ্রিক অর্থনীতি।
আজ সেখানে আগত দর্শনার্থীদের কেউ পরেছেন বাসন্তী রঙের শাড়ি, কেউ সাদা নীল। খোঁপায় গুঁজেছেন টকটকে লাল শিমুল। বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি বা ফতুয়া পরে তাদের সঙ্গে এসেছেন প্রিয়জন। কেউ তুলছেন ছবি আবার কেউ হাতে হাত রেখে শিমুলের নিচ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। কেউবা শিমুলের ফুলের পাপঁড়ি প্রিয়জনের উপরে ছিটিয়ে মেতেছেন ভালোবাসার রঙে। শিমুলের রক্তরাঙা বসন্তের সৌন্দর্য দেখতে দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পর্যটকরা হাজির হচ্ছেন জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানে। পুরো এলাকাজুড়ে টকটকে লাল শিমুল ফুল যেন গাইছে বসন্তের গান। গাছের ডালে ডালে কিচির মিচিরে ব্যস্ত পাখিরা, আর বাসন্তি হাওয়ায় হৃদয় জুড়িয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা।
সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর নিকটবর্তী মানিগাঁও গ্রামে ১০০ বিঘারও বেশি জায়গা জুড়ে ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে উঠেছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ শিমুল গাছের বাগান। ২০০২ সালে  মানিগাঁও গ্রামের ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন নিজের প্রায় ২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে সৌখিনতার বসে শিমুল গাছ রোপণের উদ্যোগ নেন। তিনি প্রায় তিন হাজার শিমুল গাছ রোপণ করেন। দিনে দিনে বেড়ে ওঠা শিমুল গাছগুলো এখন হয়ে উঠেছে বসন্তের মুর্তপ্রতীকে। যে বাগানের রক্তিম আভা দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা।
এ বছর বাগানের তিন হাজার শিমুল গাছের মধ্যে দুই হাজার ৫০০টি গাছে ফুল ফুটেছে। বাগানে প্রবেশ করতে জনপ্রতি দিতে হয় ২০ টাকা। পাশাপাশি বেড়েছে পেশাদার ফটোগ্রাফারদের ব্যস্ততা। সেই সাথে ব্যস্ততা বেড়েছে ঝড়ে পড়া শিমুল ফুল কুড়িয়ে সেই ফুল দিয়ে মালা গেথে বিক্রি করা গ্রামীণ নারী, শিশু ও  ভালোবাসার প্রতীক তৈরি করার কারিগরদের মধ্যে। এমনকি এই এক বাগানকে ঘিরে হাওর অঞ্চলের মানুষদের যেমন কর্মসংস্থান হয়েছে তেমনি বেচাকেনা বেড়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এতে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা।
বাগানের স্বত্বাধিকারী সাবেক চেয়ারম্যান রাখাব উদ্দিন বলেন, শিমুল বাগানের ফুলের সৌন্দর্য দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ায় এই বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। তাই পর্যটকের কথা মাথায় রেখে বাগানকে সুসজ্জিত করা হয়। দর্শনার্থীরা যাতে আরও নিরিবিলিতে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন, তাই রিসোর্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সাথে এই বাগানকে ঘিরে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে স্থানীয় মানুষদের।
চলতি মৌসুমে এই বাগানকে ঘিরে কোটি টাকার উপরে বানিজ্য হবে বলে মনে করছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। (বাসস)