সেই পিস্তলবাজের পক্ষ নিলেন শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ শহরে হকার ইস্যুতে সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে বুধবার বিকেলে শহরের রাইফেলস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) শামীম ওসমান। মঙ্গলবারের ওই সংঘর্ষে সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ শতাধিক আহত হয়েছিলেন। শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ভোটার। আমি আইভীকে ভোট দিয়েছি। নির্বাচন করেছি, তাকে শাড়ি কিনে দিয়েছি। কত সুন্দর সুন্দর করে কথা বলেছি। নিজের নির্বাচন নিয়ে যা করিনি, আইভীর নির্বাচন নিয়ে তার চেয়ে বেশি পরিশ্রম করেছি।’

হকার ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘এই ফাইট শামীম ওসমান বনাম আইভীর নয়। এই ফাইট মানবতা বনাম মানবতাবিরোধীর। ওই ফাইটে মানবতাবিরোধীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বিএনপির ক্যাডারসহ হত্যা মামলার আসামিরা।’

প্রভাবশালী এই এমপি বলেন, ‘আমি মানবতার পক্ষে। কেউ যদি ২৫-২৬ দিন না খেয়ে থাকে তাহলে কেমন লাগবে? নিজের বেলায় যেমন, অন্যের বেলায় তেমনই লাগবে।’

সংঘর্ষের সময় শামীম ওসমানের সমর্থক পিস্তলধারী নিয়াজুল ইসলামকে গণধোলাই দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নিয়াজুল একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। নিয়াজুল একা সড়ক দিয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়ার সময় প্রথমে তার উপর হামলা করা হয়েছে। পরে আত্মরক্ষার্থে সে তার লাইসেন্স করা পিস্তল বের করেছে। কিন্তু সে কোনো গুলি করেনি। তারপরও সন্ত্রাসীরা তাকে মারধর করে তার পিস্তল কেড়ে নেয়।’

শামীম ওসমান বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রশাসন তদন্ত করুক। যদি নিয়াজুল দোষী হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। আমি এ বিষয়ে কিছুই বলব না।’

পিস্তলবাজ নিয়াজুলের পক্ষ নিয়ে তিনি বলেন, ‘তাকে ধরে নিয়ে একাধিকবার মারা হয়েছে। আমি যা বলব, প্রমাণ নিয়েই বলব। একজন মানুষ কি এতো মানুষ মারতে পারে! এটা অসম্ভব।’

এসময় ছবি দেখিয়ে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘এটা কে? সুফিয়ান। তার কোমরে অস্ত্র। নিরস্ত্র মানুষের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী। বুজলাম- তার লাইসেন্স আছে। কিন্তু সুমনেরতো লাইসেন্স নেই। সে বিএনপি ক্যাডার। অস্ত্র উদ্ধার করেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। বহু লাইসেন্স ছাড়া অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন হয়েছে। সব তথ্যই আমার কাছে আসছে।’প্রসঙ্গত, ২৭ দিন ধরে শহরের হকার উচ্ছেদ নিয়ে উত্তেজনা চলছে। এর মধ্যে সোমবার বিকেলে শহরের চাষাঢ়ায় হকারদের আয়োজিত সভায় এমপি শামীম ওসমান এসে সহমত জানান। তিনি হকার বসাতে মঙ্গলবার ৪টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।

ওই আল্টিমেটামের নির্ধারিত সময়ে হকাররা চাষাঢ়ায় বিকেল ৪টায় অবস্থান নেন। খবর পেয়ে মেয়র আইভী তার লোকজন নিয়ে চাষাঢ়ার অদূরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের বিপরীতে সায়ম প্লাজার সামনে এসে অবস্থান নেন।

এ সময় শামীম ওসমান সমর্থকরা হকারদের নিয়ে মেয়র আইভী ও তার লোকজনদের ধাওয়া করে। একপর্যায়ে উভয় গ্রুপ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় মেয়র আইভী ও তার লোকজনদের উপর হামলা করে মারধর করা হয়।

পরে আইভীর লোকজনও শামীম ওসমানের লোকজনদের উপর হামলা চালিয়ে মারধর করে। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। পরে পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ একাধিক ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে মেয়র আইভীসহ শতাধিক আহত হন।

আজকের বাজার: সালি / ১৭ জানুয়ারি ২০১৮