হিজাব পরা প্রথম নারী স্কেটার: সাফল্য ও সংগ্রামে

আরব মরুভূমির দেশ হয়েও আরব আমিরাত নাম লেখাল বরফে স্কেটিং খেলায়। মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম কোন দেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কেটিং ইউনিয়ন (আইএসইউ) এর সদস্য হল। এর সাথে আরও গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হল দেশটির প্রথম স্কেটার ২২ বছর বয়সী জাহরা লারি হিজাব পরেই নেমেছেন স্কেটিং-এ।

জাহরা লারি ১০ বছর বয়স থেকে স্কেটিং করে আসছেন। দীর্ঘ অনুশীলনের পর স্কেটিংকেই নিজের ধ্যানজ্ঞান করে নিয়েছেন। নিজ দেশের হয়ে প্রথম স্কেটার হয়ে ইতিহাসের পাতায় ঢুকে গেলেন তিনি। নারী হয়ে এ সাফল্যের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন তিনি আজীবন।

মজার বিষয় হল, ডিজনি সিনেমা আইচ প্রিন্সেস দেখেই তিনি স্কেটিং করার প্রথম অনুপ্রেরণা পান। জায়েদ স্পোর্টস সিটিতে তৈরি করা আবুধাবীর একমাত্র বরফময় স্থানে বাবার হাত ধরে স্কেটিং অনুশীলন করতে যেতেন।

তবে একজন নারী হয়ে পুরুষদের সামনে স্কেটিং করায় নানা সমালোচনা শুনতে হয়েছে আমিরাতি রক্ষণশীল সমাজে। জাহরা সিএনএনকে বলেন, ‘আমার বাবা মনে করতেন একজন নারী হয়ে খেলাতে নাম লেখানো আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে চলে যাবে।’
স্কেটিং এর জন্য অল্পবয়স থাকতে বাবার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেলেও তরুণী হয়ে ওঠার পর তিনি এর বিরোধিতা শুরু করেন। স্কেটিং এর জন্য আঁটসাঁট পোষাক পরতে হয় বলে মেয়েকে কোন প্রতিযোগীতায় তাকে অংশগ্রহণ করতে দিতেন না বাবা। তবে মেয়ের উদ্দীপনা দেখে শেষপর্যন্ত নরম হয়েছেন তিনি। জাহরা বলেন, ‘এখন বাবাই তার সবচেয়ে বড় সমর্থক।’

তবে জাহরা তার পরিবারের ঐতিহ্য রক্ষার্থে স্কেটিং এর নির্ধারিত পোষাকের সাথে হিজাবকেও যুক্ত করেছেন। হিজাব পরেই তিনি এখন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছেন। আঁটসাঁট পোষাক পরলেও সহজে দেহের ভাঁজ বুঝা না যেতে পোষাকের রঙ এবং নকশার মাধ্যমে এতে এনেছেন পরিবর্তন।
তবে প্রথমবারের মত হিজাব পরে ২০১২ সালে ইউরোপিয়ান কাপে অংশগ্রহণ করলে বিচারকরা তার পয়েন্ট কেটে নেন নির্ধারিত নিয়মে পোষাক না পরায়। জাহরা বলেন, ‘আমি অবশ্যই একে নেতিবাচক হিসেবে দেখিনি। বিচারকরা এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন, কারণ আমি ছাড়া পুরো প্রতিযোগিতায় কাউকে এভাবে দেখেননি তারা। অতএব তারা কীভাবে আমাকে পয়েন্ট দিবেন।’
ইতিমধ্যে জার্মানীতেও এক প্রতিযোগিতায় তাকে হিজাব পরে খেলার অনুমতি দেয়া হবে না জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ স্কেটিং এর পোষাকের নিয়মনীতির প্রতি কঠোরতার প্রতি যুক্তি দেখিয়েছেন।
এজন্য হিজাব পরে খেলতে দেয়ার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জাহরা। আপাতত চূড়ান্তভাবে কোন নিয়ম পরিবর্তন হবে না বললেও এ বিষয়ে ভেবে দেখবেন এবং ভবিষ্যতে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল স্কেটিং ইউনিয়ন (আইএসইউ)।

এরপরেও থেমে নেই জাহরা। একের পর এক প্রতিযোগিতায় নাম লেখাচ্ছেন তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ার শীতকালীন অলিম্পিকে জায়গা করে নিতে না পারলেও জাহরা এখন লক্ষ্য চার মহাদেশীয় সেক্টিং চ্যাম্পিয়ন ও স্কেটিং এর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আসরে।
জাহরা সম্প্রতি আবুধাবী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ বিষয়ক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ওপর ডিগ্রি অর্জন করেন। ইতিমধ্যে তিনি নাইকির শুভেচ্ছা দূত হয়েছেন।
সূত্র: দ্য নিউ আরব
আজকের বাজার: সালি / ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭