দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির তকমা হারানোর পথে ভারত

আজকের বাজার ডেস্ককালো টাকা ও দুর্নীতি ঠেকাতে গত বছরের ৮ নভেম্বর বাজার থেকে ৫০০ ও ১ হাজার রুপির নোট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় ভারত সরকার। এর ফলে ভারতে প্রচলিত অর্থের ৮৬ শতাংশই বাজার থেকে উঠে যায়। সবচেয়ে বড় মূল্যমানের দুটি নোট বাজার থেকে উঠিয়ে নেয়ায় অসহনীয় হয়ে ওঠে তারল্য সংকট। অন্যদিকে চলতি বছরের জুলাই থেকে একক কর ব্যবস্থা গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি) চালু করে ভারত। এ-যাবৎকালের মধ্যে দেশটির আর্থিক খাতে এটিই সবচেয়ে বড় সংস্কার। নোট বাতিল এবং জিএসটি, অর্থনীতিতে এ ধরনের বড় দুটি সংস্কারের কারণে ভারতের জিডিপি শ্লথ হয়ে পড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক (ডব্লিউবি) ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। অথচ সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে গোটা বিশ্বের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস বাড়িয়েছে আইএমএফ। এ অবস্থায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভারত দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির তকমা হারাতে যাচ্ছে কিনা। পিটিআই ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের খবরে বলা হয়েছে, সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস নামক বিশ্বব্যাংকের দ্বিবার্ষিক অর্থনৈতিক হালনাগাদে বলা হয়, ২০১৫ সালে ৮ দশমিক ৬ শতাংশে থাকা প্রবৃদ্ধি চলতি বছর ৬ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসবে। পূর্ববর্তী দুটি পূর্বাভাসের চেয়ে তা দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কম। এমনকি চীনের ৬ দশমিক ৮ শতাংশের প্রবৃদ্ধির চেয়েও নিচে নেমে আসবে ভারতীয় প্রবৃদ্ধি। মূলত ব্যাংক নোট তুলে নেয়া এবং জিএসটি ঘিরে অনিশ্চয়তার কারণে ভারতের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির ধারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ টানাপড়েনের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে আসায় দেশের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করে বিশ্বব্যাংক। তবে বেসরকারি বিনিয়োগের সঙ্গে সরকারি ব্যয়ের ভারসাম্যপূর্ণ নীতিমালার সুবাদে ২০১৮ সালে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বিশ্বব্যাংক।আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা শুরুর আগে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানের টেকসই প্রবৃদ্ধির সুবাদে দারিদ্র্য বিমোচন অব্যাহত থাকবে, তবে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে সহায়তার বিষয়ে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্বব্যাংক জানায়, ভারতে প্রবৃদ্ধির হার শ্লথ হয়ে পড়ায় দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধিও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পর দ্বিতীয় অবস্থানে নেমে আসবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো।এদিকে সপ্তম কেন্দ্রীয় কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের পর ভারতে সরকারি ও বেসরকারি ভোগ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে স্বাভাবিক বর্ষণ ও কৃষি খাতের উত্তরণে গ্রামীণ চাহিদায় আবারো সুদিন ফিরে এসেছে। অন্যদিকে সরকারি বিনিয়াগ কমতে থাকায় সর্বোপরি চাহিদা শ্লথ হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের দেয়া তথ্যমতে, জিএসটির কারণে ২০১৮ সালের শুরুর সময় পর্যন্ত অর্থনৈতিক কর্মকা- বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এর পর থেকে প্রবৃদ্ধি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ বলছে, জিএসটি আরোপের আগ থেকেই উৎপাদন ও সেবা খাত ধারাবাহিকভাবে সংকুচিত হচ্ছিল। ২০২০ সালে ভারতের প্রবৃদ্ধি ধীরে ধীরে ৭ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ পুনরুদ্ধারের মধ্য দিয়েই এটি অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্যাংকটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি খাতে মূলধন ব্যয় সাম্প্রতিক সময়ে বাড়বে এবং বিনিয়োগ পরিবেশ ত্বরান্বিত হয়েছে। এদিকে ভারতীয় অর্থনীতি নিয়ে একই বার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। চলতি অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশে রেখেছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে আইএমএফের অর্থনীতি-বিষয়ক উপদেষ্টা ও গবেষণা উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মরিস ওবস্টফিল্ড বলেন, চলতি বছরের জন্য প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমানো হলেও দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল ইতিবাচক। এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ভারতীয় অর্থনীতি মোটামুটি ভালো অবস্থায় রয়েছে। সরকার জিএসটির মতো কাঠামোগত সংস্কারের দিকে ছুটছে, যার সুফল দীর্ঘমেয়াদে পাওয়া যাবে।চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বেড়ে যাওয়ার সুবাদে ভারতের মূল্যস্ফীতি ছয় মাসে সর্বোচ্চে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ৩৬ অর্থনীতিবিদের সমন্বয়ে করা এ জরিপে বলা হয়, এক বছরের আগের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৩ দশমিক ৬০ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে। আগস্টে যা ছিল ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর ফলে আগামীতে মুদ্রানীতি শিথিলের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে জানিয়েছে রয়টার্স।