শিশুর লিভারের রোগ-লক্ষণ-উপশম

আজকাল বড়দের তুলনায় ছোটরাও অনেক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে লিভারের রোগ অন্যতম। যদি কোনো বাবা-মা বা পরিবারের কেউ বোঝেন যে তার শিশু ছেলে/মেয়ের পেটে ব্যথা করছে যে কারণে প্রায়ই সে পেটে ব্যাথার কথা বলছে। আবার শিশুর স্বাস্থ্য কমতে থাকে। এছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলতে থাকে। কারণ হিসেবে লিভারে রোগের বাসাবাঁধার কথা ধরে নেয়া বা লক্ষণ বলে অনুমান করা যায়। প্রসঙ্গত, ‘লিভার এক ধরনের ক্ষার জাতীয় রাসায়নিক তৈরি করে, যা খাবারের উপস্থিতিতে এসিডকে নিউট্রালাইজ করে খাবার হজমে সহায়তা করে। রক্ত জমাট বাঁধতে যে কোয়াগুলেশন ফ্যাক্টর প্রয়োজন, তাও লিভারে তৈরি হয়। খাবারের মধ্যে যে টক্সিন পদার্থগুলো থাকে তা লিভারের মাধ্যমে আলাদা হয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে।’
যদি এসব প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় তাহলে শরীরের বিভিন্ন অংশে সমস্যা দেখা দেয়। তাই এ সমস্যায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নিতে হবে।
লিভারের সমস্যা বুঝার উপায় প্রধানত হজমের সমস্যা থেকে লিভারের সমস্যা হতে পারে। তার সঙ্গে আরও আনুষঙ্গিক লক্ষণ দেখা গেলেই নিশ্চিত বলা যায়, লিভারের সমস্যা দেখা দিয়েছে। শরীরে জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয়। ওজন কমতে থাকে। শরীরের ফ্লুয়িড জমে গিয়ে ফুলে যায়। পেটের ব্যথা দিন দিন বাড়তে থাকে। কিছু সময় স্টেজ লিভারের ডিজিজের কারণে নাক-মুখ থেকে রক্ত বের হয়। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইট থেকে লিভার সংক্রমণ হয়ে থাকে। ভাইরাসের মাধ্যমে হেপাটাইটিস এ, বি, সি, নন-এল, নন-বি থেকে লিভারের সমস্যা দেখা দেয়। আর ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে স্যালমোনেলা টাইফি থেকে লিভারের ক্ষতি হয়। অ্যামিবা থেকেও লিভারের ক্ষতি হয়ে থাকে। আমাশয় হলে তা সারাতে ওষুধ খাওয়ানো না হলে অ্যামিবা লিভারে বাসা বাঁধে ও লিভারে ক্ষত সৃষ্টি করে। লিভারে পুঁজ তৈরি হলে বলা হয়, অ্যামবিক লিভার অ্যামথিস। এ ছাড়া ম্যালেরিয়া জ্বর হলেও লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অনেক শিশুর জন্ম থেকেই লিভারের সমস্যা হয়ে থাকে। জেনেটিক কারণেই লিভারের সমস্যা হয়। তবে ছোটবেলায় হলেও অনেক দিন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না। লিভার ডিজিজের মধ্যে বাইলারি আর্টেসিয়া, গ্গ্নাইকোজেন স্টোরেজ ডিজঅর্ডার বেশি দেখা যায়। বাইলারি আর্টেসিয়ায় বাইল ডাক্ট সিস্টেম থাকে না, যা থেকে লিভারের সমস্যা দেখা যায়। গ্গ্নাইকোজেন স্টোরেজ ডিজঅর্ডার হলে লিভার গ্গ্নুকোজ ও গ্গ্নাইকোজেন মেটাবলিজম পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যে কারণে অস্বাভাবিক পরিমাণে গ্লাইকোজেন তৈরি হয়। মাসলে ক্র্যাম্প ধরে যায়। লিভার বড় হয়ে যায়। পেট ফুলে যায়। জিএসডি থেকে লিভার সিরোসিসও হতে পারে।
শরীরে অন্য কোনো ক্যান্সার হলে লিভার প্রভাবিত হতে পারে। লিভারে টিউমার হয়ে যায়। একে হেপাটোব্লাস্টোমা বলে।
থ্যালাসেমিয়া জাতীয় রক্তের অসুখ হলে লিভারের সমস্যা হতে পারে
শিশুরা ফাস্টফুড খেতে খুব পছন্দ করে। অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়ার ফলে লিভারে ফ্যাট জমে যায়। গলব্লাডারেও স্টোন হতে পারে, যার জন্য বাইল (সার জাতীয় রাসায়নিক) ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ফলে লিভারের সমস্যা দেখা দেয়।
ঠিকমতো লিভারের চিকিৎসা না করা হলে লিভার ক্রমেই কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ফলে শরীরে টক্সিন পদার্থ জমে যায়। এর থেকে ব্রেন ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে।
সনাক্ত
সাধারনত শিশুর হজমে সমস্যা থেকেই লিভারে সমস্যার সুত্রপাত হয়। এছাড়াও আনুসাঙ্গিকভাবে দেখা যায় জন্ডিসজনিত নানা লক্ষণ।
আশংকাজনকভাবে এসময় শিশুর ওজন হ্রাস পায়।
লিভারে সমস্যা হলে, শিশুর শরীরে ফ্লুইড জমে শরীর ফুলে যায়।
খুব ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে, ব্যাকটেরিয়া,ভাইরাস ও বিভিন্ন প্যারাসাইট এর সংক্রমনের মাধ্যমে শরীরে হেপাটাইটিস বি, নন এল, নন বি থেকে লিভারে সমস্যা হতে পারে।
অনেকসময় ম্যালেরিয়া জ্বর থেকেও লিভারে সমস্যা হতে পারে।
আজকালকার শিশুরা প্রচুর ফাস্টফুড খেতে পছন্দ করে। অতিরিক্ত ফাস্টফুড থেকেও লিভারে ফ্যাট জমে, লিভার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়া পুরোপুরি নিশ্চিত হতে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে আপনার শিশুর সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। ব্লাড টেস্ট করান। দেখে নিন বিলোরবিনের পরিমাণ কতটুকু। এ ছাড়াও লিভারের এসজিপিটি এবং এসজিওটি (লিভার এনজাইম) অ্যালকালাইন ফসফেটের পরিমাণ নির্ধারণ করেও দেখে নেয়া যায় লিভার ঠিকমতো কাজ করছে কি-না আলট্রাসনোগ্রাফি করে দেখা হয়। এ ছাড়া টিউমার আছে কি-না তাও পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুর শরীরে লিভারের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলতে হবে।
চিকিৎসা
লিভারের সমস্যায় প্রথম চিকিৎসা হলো বিশ্রাম। তাই এ সমস্যা হলে প্রচুর বিশ্রাম নিতে হবে। সহজেই হজম হয় এ ধরনের খাবার খেতে হবে।
অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে।
তেল ও মসলা জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে।
ডাবের পানি, গ্লুকোজ, শরবত বেশি বেশি খেতে হবে।
কার্বো হাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের মাধ্যমে লিভারের সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে।
হেপাটাইটিস থেকে লিভারের সমস্যা হয়। তাই আগে থেকেই হেপাটাইটিসের ভ্যাক্সিন গ্রহণ করতে হবে।
ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বন্ধ করতে হবে।
অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ বেশি খাওয়ানো যাবে না। এতে লিভার অকেজো হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
আজকের বাজার : সালি / ১৫ নভেম্বর ২০১৭