করোনায় চট্টগ্রামে একদিনেই আক্রান্ত ৯৫৫ জন, মৃত্যু ১০

চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে ৯৫৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সংক্রমণ হার ৩৬ দশমিক ০৫ শতাংশ। এ সময়ে ১০ করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রিপোর্টে আজ এতথ্য জানানো হয়।
এতে জানানো হয়, গতকাল সোমবার এন্টিজেন টেস্ট, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজসহ ১১ টি ল্যাবে চট্টগ্রামের ২ হাজার ৬৪৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নতুন শনাক্ত ৯৫৫ জনের মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৬৩৬ জন এবং চৌদ্দ উপজেলার ৩১৯ জন। জেলায় এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৬৬ হাজার ৭৮৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৫১ হাজার ২৯৭ জন ও গ্রামের ১৫ হাজার ৪৮৭ জন।
উপজেলা পর্যায়ে গতকাল শনাক্ত ৩১৯ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ সীতাকু-ে ৫০ জন, হাটহাজারীতে ৩৬ জন, রাউজানে ৩৫ জন, ফটিকছড়িতে ৩০ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ২৮ জন, মিরসরাইয়ে ২৭ জন, বোয়ালখালীতে ২৬ জন, পটিয়ায় ২১ জন, আনোয়ারায় ১৫ জন, সন্দ্বীপে ১৪ জন, চন্দনাইশে ১১ জন, সাতকানিয়া ও বাঁশখালীতে ৯ জন করে এবং লোহাগাড়ায় ৮ জন রয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে শহরের ৪ জন ও গ্রামের ৬ জন মারা যান। ফলে জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা এখন ৭৯০ জন। এর মধ্যে ৫০৪ জন শহরের ও ২৮৬ জন গ্রামের। সুস্থতার ছাড়পত্র দেয়া হয় ১৩২ জনকে। ফলে মোট আরোগ্য লাভকারীর সংখ্যা ৫১ হাজার ২৩৯ জনে উন্নীত হলো। এদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসায় সুস্থ হন ৭ হাজার ৩২ জন এবং ঘরে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসায় আরোগ্য লাভ করেন ৪৪ হাজার ২০৭ জন। হোম আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনে যুক্ত হন ১৯২ জন এবং ছাড়পত্র নেন ১৬১ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১ হাজার ৭৪১ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংখ্যার বিচারে গতকাল শনাক্ত রোগী চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি। গত বছরের ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রথম করোনার ভাইরাসবাহক শনাক্তের পর এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্তের রেকর্ড। আগের দিন ৮২১ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ে, যা ওইদিন পর্যন্ত সর্বোচ্চ আক্রান্ত ছিল। সংক্রমণ হারে সেদিনই ছিল সবচেয়ে বেশি ৩৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এছাড়া, ৯ জনের মৃত্যু হয়।
উল্লেখ্য, করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় গত বছর ৩০ জুন আক্রান্তের সংখ্যা একদিনে সর্বোচ্চ ৪৪৫ জন পর্যন্ত ওঠেছিল।
এদিকে, গতকাল ১০ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে ৮৩ করোনা রোগীর মৃত্যু হলো। দেশে করোনার প্রকোপ শুরুর পর চট্টগ্রামে একদিনে সর্বোচ্চ ১৪ জন মারা যান গত ১০ জুলাই। এর আগ পর্যন্ত ২৪ এপ্রিল ১১ জনের মৃত্যুই ছিল সবচেয়ে বেশি।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৬৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এখানে শহরের ১৫৭ জন ও গ্রামের ৫৩ জন জীবাণুবাহক চিহ্নিত হন। নমুনা সংগ্রহের বিভিন্ন বুথে ৬৫৪ জনের এন্টিজেন টেস্টে শহরের ৭১ জন ও গ্রামের ১৬৫ জন আক্রান্ত বলে জানানো হয়।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ৪০০ জনের নমুনায় শহরের ১০৭ ও গ্রামের ২৩ জনের রেজাল্ট পজিটিভ আসে।
ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে (সিভাসু) ২২৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে শহরের ৪৭ ও গ্রামের ৩৫ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ল্যাবে ১২৩ টি নমুনার মধ্যে শহরের ৫১ ও গ্রামের ১৮ টিতে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়।
নগরীর বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের রিজিওনাল টিবি রেফারেল ল্যাবরেটরিতে (আরটিআরএল) ৪২ টি নমুনা পরীক্ষার জন্য দেয়া হয়। এতে গ্রামের ৪ টিসহ ২৫ টির রেজাল্ট পজিটিভ আসে।
বেসরকারি ল্যাবরেটরির মধ্যে শেভরনে ১৯৭ টি নমুনা পরীক্ষায় শহরের ৩৬ ও গ্রামের ৮ টি, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ১৫১ নমুনার মধ্যে গ্রামের ৫ টিসহ ৬৮ টি, মা ও শিশু হাসপাতালে ৫২ টি নমুনায় গ্রামের ৩ টিসহ ৩১ টি এবং এপিক হেলথ কেয়ারে ১০২ টি নমুনা পরীক্ষা করে গ্রামের ৫ টিসহ ৬০ টিতে ভাইরাস থাকার প্রমাণ মেলে।
চট্টগ্রামের একটি মাত্র নমুনা এদিন কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হলে পরীক্ষায় এটির রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। বেসরকারি মেডিকেল সেন্টারে কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট বিশ্লেষণে বিআইটিআইডি’তে ৩০ দশমিক ০৮ শতাংশ, এন্টিজেন টেস্টে ৩৬ দশমিক ০৮, চমেকে ৩২ দশমিক ৫০, সিভাসু’তে ৩৫ দশমিক ৮১, চবি’তে ৫৬ দশমিক ১০, আরটিআরএলে ৫৯ দশমিক ৫২, শেভরনে ২২ দশমিক ৩৩, ইম্পেরিয়ালে ৪৫ দশমিক ০৩, মা ও শিশুতে ৫৯ দশমিক ৬১, এপিক হেলথ কেয়ারে ৫৮ দশমিক ৮২ এবং কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ০ শতাংশ সংক্রমণ হার নির্ণিত হয়।