গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা; গুলিতে নিহত ২

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ ঘটনায় অন্তত ২ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭০০ জন।

অপরদিকে গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় বেশ কয়েকজন শিশু আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

কাতারভিত্তিক আলজাজিরা, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এবং মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস-এর খবর থেকে এসব খবর জানা গেছে।

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির প্রতিবাদে শুক্রবার অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় ‘ক্ষোভ দিবস’ পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। এ উপলক্ষে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন। বিক্ষোভ সমাবেশে উত্তাল হয়ে উঠে গাজা উপত্যকা, পূর্ব জেরুজালে, পশ্চিম তীরের হেবরন, বেথেলহেম, নেবুলাস, তুলকার্ম, কালকিলিয়া ও জেরিকো শহর। বিক্ষোভ ঠেকাতে আগে থেকেই বড় ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি বাহিনীর বলপ্রয়োগে ওই বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। শুধু গাজা উপত্যকাতেই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন অন্তত দুইজন।

গাজা সীমান্তের কাছে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে ৩০ বছর বয়সী ও ৫৮ বছর বয়সী আরেকজন নিহত হয়েছেন।

এছাড়া ফিলিস্তিনের গাজা শহরে শুক্রবার রাতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।এ ঘটনায় ছয় শিশুসহ কমপক্ষে ২৫ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে।

গাজা উপত্যকার শাসক দল হামাসের রকেট হামলার জবাবে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।

স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে এ বিমান হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে রাশিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আরটি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে আইডিএফ জানায়, শুক্রবার হামাসের রকেট হামলার জবাব দিতে গাজায় এ হামলা চালানো হয়েছে। হামাসের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও অস্ত্রাগার এ হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল। এ সময় বিমান হামলায় আহতদের জন্য হামাসকেই সম্পূর্ণ দায়ী করে আইডিএফ। ইসরায়েল দাবি করে, শুক্রবার প্রথমে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিনটি রকেট ছোঁড়ে হামাস। তবে ওই রকেট হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কি না, তা জানা যায়নি।

ফিলিস্তিনি নেতারা শুক্রবার ইন্তিফাদার ডাক দেওয়ার সহিংসতার আশঙ্কায় ইসরায়েল পশ্চিম তীরে আগে থেকেই অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছিল। পূর্ব জেরুজালেমে ওল্ড সিটির বাইরে পুলিশ শত শত বিক্ষোভকারীকে হটিয়ে দিতে গেলে ধস্তাধস্তি হয়।

টিভিতে প্রচারিত দৃশ্যে বেথলেহেমে পাথর ছুড়ে মারা ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর ইসরায়েলি সেনাদেরকে জলকামান ব্যবহার করতে দেখা গেছে। সেনাদের টিয়ারগ্যাস আর বিক্ষুব্ধ ফিলিস্তিদের টায়ার পোড়ানোয় ঘন কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় চারিদিক। ইসরায়েলি সেনারা বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেটও ছুড়েছে। অন্যান্য যেসব স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে সেসব জায়গাতেও দেখা গেছে একই দৃশ্য।

জেরুজালেম নিয়ে ট্রাম্পের বিতর্কিত ঘোষণায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। তার নীতির পরিবর্তনকে ইসরায়েল স্বাগত জানালেও আরব এবং মুসলিম বিশ্ব নিন্দা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমা মিত্রদেশগুলোও কয়েকদশকের নীতি বদলে দেওয়ার এ পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছে।

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিশ্বের অন্যান্য জায়গাতেও বিক্ষোভ হচ্ছে। জর্ডান, মিশর, ইরাক, তুরস্ক, তিউনিশিয়া এবং ইরানে ফিলিস্তিনপন্থি হাজার হাজার বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ করেছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়ার মত মুসলিমপ্রধান বিভিন্ন দেশেও বিক্ষোভ মিছিল হচ্ছে।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৯ ডিসেম্বর ২০১৭