চলে গেলেন বারী সিদ্দিকী

বাংলাদেশের খ্যাতিমান সংগীত শিল্পী, গীতিকার ও বাঁশিবাদক বারী সিদ্দিকীর প্রায় এক সপ্তাহ লাইফ সাপোর্টে থাকার পর চলে গেলেন সব মায়া ছেড়ে। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
তথ্য সুত্রে জানা যায় ২৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল বারী সিদ্দিকীকে।
গত ১৭ নভেম্বর দিবাগত রাত ১টার দিকে হার্ট অ্যাটাক করলে অচেতন অবস্থায় প্রথমে তাকে ঝিগাতলার ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে স্কয়ার হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে লাইফ সাপোর্ট দেন।
দীর্ঘদিন ধরেই তার কিডনির সমস্যা কারণে ২ বছর ধরে ডায়ালাইসিস চলছিল। শুক্রবার রাতে মেজর হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর ডাক্তাররা লাইফ সাপোর্টে নিয়ে যান তাকে। তিনি কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আব্দুল ওয়াহাবের তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও বংশীবাদক বারী সিদ্দিকী। তিনি মূলত গ্রামীণ লোকসংগীত ও আধ্যাত্মিক ধারার গান করে থাকেন। তার গাওয়া ‘শুয়া চান পাখি’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘সাড়ে তিন হাত কবর’, ‘তুমি থাকো কারাগারে’, ‘রজনী’ প্রভৃতি গানগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
বারী সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোণা জেলায় এক সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারের কাছে গান শেখায় হাতেখড়ি হয়। মাত্র ১২ বছর বয়সেই নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষ সহ অসংখ্য গুণী শিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন। ওস্তাদ আমিনুর রহমান একটি কনসার্টের সময় বারী সিদ্দিকীকে অবলোকন করেন এবং তাকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। পরবর্তী ছয় বছর ধরে তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন।
সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হন বারী। ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল মিউজিকের উপর পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন ও বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সাথে ক্লাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন।
দীর্ঘদিন সংগীতের সঙ্গে জড়িত থাকলেও সবার কাছে বারী সিদ্দিকী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পান ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর। এই ছবিতে তার গাওয়া ছয়টি গানই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় প্রথম জানাজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে, দ্বিতীয় জানাজা সকাল সাড়ে ১০টায় রামপুরার বাংলাদেশে টেলিভিশন ভবনে, বাদ আসর তৃতীয় ও শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয় নেত্রকোনা সরকারি কলেজ মাঠে। এরপর গ্রামের বাড়ী নেত্রকোনায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
আজকের বাজার: সালি / ২৫ নভেম্বর ২০১৭