দেশের নেতৃত্বই আরো বদলে দিচ্ছে ‘সাইলেন্ট কিলার’কে

তিন অঙ্কে একবারই পৌঁছতে পেরেছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সেই ২০১০ সালের শুরুতে। এরপর সেঞ্চুরি কাছেও যেতে পারছিলেন না তিনি। চট্টগ্রাম টেস্টে সুযোগটা ছিল আবার ছিলও না এমন এক পরিস্থিতিতে ‘গ্ল্যাডিয়েটর’ হয়ে উঠেছিলেন দেশের জন্য বুক চিতিয়ে দিয়ে। হার মানেননি। ওখানে প্রথম ইনিংসে সঙ্গীর অভাবে ৮৩ রানে অপরাজিত থেকেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। দ্বিতীয় ইনিংসেও ছিলেন সাবলীল। এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দূর্ভেদ্য দেওয়াল। কাকতালীয়ভাবে সেই ২০১০ এর সেঞ্চুরির পর মাঝের সময় থেকে এই সময়, মানে প্রায় আট বছরের মধ্যে এটাই মাহমুদউল্লাহর সর্বোচ্চ ইনিংস। টেস্টে আচমকাই যেন বদলে গেলেন রিয়াদ নামের ময়মনসিহের ব্যাটসম্যান। অথচ গত বছর বেশ ক’টি টেস্ট ম্যাচে দর্শক হয়েই ছিলেন তিনি। বদলে যাওয়ার পেছনে অধিনায়কত্বের দায়িত্ববোধকেই উল্লেখ করলেন ‘সাইলেন্ট কিলার’।

জাতীয় দলের ব্যানারে চট্টগ্রাম টেস্টই নেতা মাহমুদউল্লাহকে দেখলেও ঘরোয়া ক্রিকেট দেখে নিয়মিতই। প্রিমিয়ার লিগে তার অধীনে বেশ কয়েকবারই শিরোপা জিতেছে দল। বিপিএলে সাদামাটা দল নিয়েও দারুণ লড়াই। আর প্রত্যেকবারই উজ্জ্বল মাহমুদউল্লাহকে দেখা গিয়েছে। দলের পারফরম্যান্স যেমনই থাকুক তার ব্যাট যেন খাপ খোলা তলোয়ারের মতোই চলে। এমনকি বল হাতে নিলেও সাফল্য আসতে থাকে। বোঝাই যায় নেতৃত্বটা খুব ভালো উপভোগ করেন মাহমুদউল্লাহ। ওটা আছে রক্তে। এরই প্রভাব বরাবর পড়ে আসছে তার পারফরম্যান্সে। প্রমাণিত।

ঘরোয়া ক্রিকেটের সেই ‘নেতা’ মাহমুদউল্লাহকেই কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে জাতীয় দলে। চট্টগ্রাম টেস্ট ড্রয়ে মূল নায়ক মুমিনুল হক হলেও পার্শ্বনায়ক ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে সাকিব আল হাসানের চোট যাকে দৈবচক্রে ডেপুটি থেকে স্ট্যান্ডবাই ক্যাপ্টেন বানিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজে। সৌভাগ্যের শহর চাটগাঁয় প্রথম ইনিংসে তার ব্যাট ওভাবে না জ্বললে লঙ্কানরা হয়তো বেশ বড় লিডই পেত। আর তা হলে ম্যাচ বাঁচানো অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ত স্বাগতিকদের জন্য। নেতৃত্বই যে তাকে বদলে দিয়েছে তা বুধবার স্বীকার করেও নিলেন মাহমুদউল্লাহ, ‘সব সময় এই বলি যে আমি এই জিনিসটা পছন্দ করি। এই চ্যালেঞ্জটা নিতেও পছন্দ করি। হয়তবা পরোক্ষভাবে এটা আমাকে সাহায্য করছে।’

অথচ দলে বেশ কয়েকবার জায়গা হারিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। চ্যালেঞ্জ নিয়েই বারবার ফিরে এসেছেন লড়াই করে। তাই সবকিছুতেই চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন তিনি। লঙ্কানদের বিপক্ষে দেশের দূর্গ রক্ষার সেনানায়কের চ্যালেঞ্জটাও নিয়েছেন ৩২ বছরের এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আমি সব সময় চ্যালেঞ্জ পছন্দ করি। চেষ্টা করি সেরাটা দেওয়ার। খেলোয়াড়দেরও যেন সাপোর্ট করতে পারি। শেষ পর্যন্ত আপনি আপনার পারফরম্যান্স দিয়ে নিজেকে দাঁড় করতে চাইবেন। আমাদেরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় আছে, তাদের সহায়তায় আমার সময়টা উপভোগ্য।’

বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র হলেও এ টেস্টে জয় চায় বাংলাদেশ। তার মানে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট জয়ের ইতিহাস! আর এই খেলাতেও আগেরটির ধারাবাহিকতা রাখতে চান ক্যাপ্টেন মাহমুদউল্লাহ, ‘আমি আমার সেরা চেষ্টাটাই দিতে পারি দলের জন্য। আমার মূল কাজ ওটা, ওটাই করব।’

আজকের বাজার: সালি / ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮