প্রস্তাবিত বাজেট কথামালার

২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘কথামালার বাজেট’ বলে মন্তব্য করছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের প্রফেসর ড. আকবর আলি খান। ৪ জুন রোববার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের উদ্যোগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মূল সমস্যা সুশাসনের সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে বাজেটে কোনো নির্দেশনা নেই। বাজেট ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো উচিত। বাংলাদেশের বাজেট অত্যন্ত অস্বচ্ছ। বাজেটে কর থেকে নতুন কর কত টাকা আহরণ হবে তার কোনো হিসাব নেই। ১৯৭২ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত হিসাব থাকলেও এরপর থেকে আর হিসাব নেই। এ বাজেট কথামালার বাজেট।

ড. আকবর আলি খান বলেন, বাংলাদেশে বাজেট একটি আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। বাজেট হলো গণতন্ত্রের মূল চালিকাশক্তি। গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো, নো ট্যাক্সসেশন উইথ আউট রিপ্রেজেন্টেশন। জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো করারোপ করা যাবে না। বাজেটের মাত্র ২০ শতাংশ আলোচনা হয়। আমাদের দেশের সংসদ সদস্যদের বাজেট নিয়ে আলোচনার করার কোনো সুযোগই নেই। অর্থমন্ত্রী তৈরি করেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেন। এতে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের ভূমিকা আছে বলে মনে হয় না। সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সারাবছর ধরে বাজেট নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

ঘাটতি বাজেট সম্পর্কে তিনি বলেন, পৃথিবীর ২৯০টি দেশের মধ্যে প্রায়ই দেশেই ঘাটতি বাজেট থাকে। ঘাটতি বাজেটের মাত্রা বেশি হলে অর্থনীতির ওপর তার প্রভাব পড়ে।

স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বিষয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়েনি অথচ রেলওয়ে খাতে ব্যয় বেড়েছে। রেলওয়ের বিকল্প সড়ক, নৌ ব্যবস্থা আছে। রেলওয়ে একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান। যত চেষ্টাই করা হোক না কেন- আগামী এক দশকে রেলওয়ে থেকে লাভ হবার সম্ভাবনা নেই। এরপরও সরকার ব্যয় বাড়াচ্ছে। অথচ স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ প্রয়োজন, কারণ সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ানো না হলে এসডিজি অর্জন সম্ভব হবে না।

ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিংগুলো জাতীয়করণ করা হয়েছে আদর্শ সেবা দেয়ার জন্য। ব্যাংকের লাভ দিয়ে সরকারের কর্মকাণ্ড চালাবে। ব্যাংকগুলো কোনো সেবা দিচ্ছে না। এসব ব্যাংকের লোকসানের জন্য করদাতাদের কাছ থেকে কর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটা অমার্জনীয় অপরাধ। দুই দশক ধরে শুনছি সরকার এসব ব্যাংক বিরাষ্ট্রীয়করণ করছে। একটি সরকারি ব্যাংক রেখে সব ব্যাংক বিরাষ্ট্রীকরণের জন্য সরকারের উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাংক ছাড়াও সরকারের যেসব লোকসানি প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের লোকসান কমানোর বিষয়েও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ৪ জুন ২০১৭