বহির্বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দা, আমাদের বাজেট ও নির্বাচন

বাজেট হলো এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, যেখানে রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার খাতগুলো, দেশের জনগণের প্রয়োজনে সরকার যেসব বিষয়কে অধিকতর গুরুত্ব দিচ্ছে সেগুলো, রাষ্ট্রের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যে বরাদ্দ নিচ্ছে সরকার, সেটাই হলো জাতীয় বাজেট। আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ বিভিন্ন অগ্রসর-অনগ্রসর পেশার সাথে ও ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। দেশের অর্থনীতির সাথে যারা জড়িত, প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টিই বাজেট আকারে প্রণয়ন করা হয়। দেশের কোন্ জায়গাগুলোতে উন্নয়ন করতে হবে, সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতার হিসাব নিকাশ কী হবে, সেসবই হলো বাজেট। সরকার তার প্রয়োজন অনুসারে ব্যয়ের হিসাবটা সবার আগে করে। যেমন ধরুন আমাদের যে চলমান প্রকল্পগুলো আছে, এই প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। আপনার অর্থ আছে কি নেই, এই বিবেচনার প্রয়োজন নেই। প্রথমে ব্যয়ের বাজেটটা প্রণয়ন করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন, আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প, আমাদের সামরিক খাত, এগুলো আলাদা আলাদাভাবে ভাগ ভাগ করে দেখা হয়। এই অর্থের উৎস কোথায়? অর্থের উৎসগুলো হলো এনবিআর, নন এনবিআর, অভ্যন্তরীণ উৎস এবং আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করা এবং ডোনেশন।

কৃষি খাতের বাজেট: কৃষি আমাদের প্রধান খাত। প্রথম তিনটা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটা হল কৃষি মন্ত্রণালয়। এককভাবে যে সেক্টর থেকে সর্বাধিক পরিমাণে আমাদের জাতীয় ইনকাম যোগ হয়, সেটা হলো কৃষি খাত। কৃষি বলতে মৎস্য, প্রাণী সম্পদ, ফসলের চাষ এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প, এগুলো মিলে কৃষি খাত। সেদিক থেকে বলতে গেলে কৃষি খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। সরকার কৃষকের জন্য প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রণয়ন করেছে। এখানে কৃষকের ভর্তুকিতেই আছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। আরো দেওয়ার সুযোগ ছিল।

বহির্বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দা এবং কোভিডের সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকারের প্রণোদনা দেয়ার কারণে, অর্থনীতিতে মানি সঞ্চালন বৃদ্ধি হয়ে যাওয়াতে এখন ইনফ্লেশন হয়ে গেছে। আমাদের জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ এখনো চলমান। এ সব কিছু বিবেচনা করলে, এই বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আমাদের বাজেটটা সংকুচিত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু বাজেট সে তুলনায় ছোট হয়নি। এটা আমাদের ভালো একটা দিক। কৃষিতে বাজেট আগের চেয়েও বেশি দেওয়া হয়েছে। সেদিক থেকে আমি বলব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য, কৃষকের জন্য, কৃষি উন্নয়নের জন্য, কৃষি গবেষণার জন্য, সম্প্রসারণ এবং শিক্ষার জন্য এ বাজেটটা ঠিক আছে।

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি: বর্তমানে দ্রব্যমূল্যর উর্ধ্বগতির ব্যাপারে যদি বলি, সারা পৃথিবীতে যে দেশেই নির্বাচন হয়, নির্বাচনের বছরে অর্থনীতি চাপের মুখে থাকে। কারণ নির্বাচনকে ঘিরে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এখানে আসবে না। এটা শুধু বাংলাদেশে না, যে কোনো দেশে নির্বাচনের বছরে অর্থনীতিটা একটু স্লথ হয়ে যায়। আমাদের এই বাজেটে যেটা পূর্বাভাস করা হয়েছে। সাড়ে সাত ভাগ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে। ইনফ্লেশন সাড়ে নয় পার্সেন্টের মত ছিল। যেটা জনজীবনের দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি প্রভাব ফেলেছিল। এবার সরকার সেই ইনফ্লেশন সাড়ে ছয় পার্সেন্টে রাখার পূর্বাভাস করেছে। এটা খুব ভালো দিক। যারা অর্থনীতি নিয়ে সাধারণ জ্ঞান রাখে, অর্থনীতির সাথে যারা সংশ্লিষ্ট, তারা বলবে সরকার একটা ভালো বাজেট করেছে। বাস্তবায়নটাতো পরের কথা। বাজেট পূর্বাভাসের সাথে এসব বিষয় সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে। এটা আমি ভালো দিক মনে করি।

রাজনীতি এবং অর্থনীতি একটা আরেকটার সাথে এমন ভাবে সম্পৃক্ত যে, এটাকে বিচ্ছিন্ন করার কোন সুযোগ নেই। যখনই একজন রাজনৈতিক নেতা তার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করবে, তার প্রথম পরিকল্পনা হবে, অর্থনীতিটাকে শক্তিশালী করা, স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, মানুষের দারিদ্রতা বিমোচন করা। আমাদের দেশটা স্বাধীন হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল একটা বৈষম্যহীন অর্থনীতি তৈরি করা। ধনী গরিবের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা একই রকমের জীবন যাত্রা করবো। একটা শোষণ মুক্ত সমাজ কায়েম করার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই কথাটা সংবিধানে নিয়ে এসেছেন। তা নাহলে রাষ্ট্রের কাজ কি? আর রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীরই বা কাজ কি? রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল প্রত্যেক শ্রেনীর মানুষকে মানব শক্তিতে রুপান্তরিত করা। প্রত্যেকের ক্যাপাসিটি ও দক্ষতা অনুযায়ী কাজের ব্যবস্থা করা। জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে, এটা হল একটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। স্বাস্থ্য, শিক্ষা সর্বক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতারা সরকারে যাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতাদের মুল লক্ষ্য হলো, সুন্দর সমৃদ্ধ দারিদ্রবিহীন একটি সমাজ গঠন করা। যাতে সমাজের প্রত্যেকটা মানুষ দৈনন্দিন মৌলিক চাহিদাগুলো রাষ্ট্র নিবারণ করতে পারে, এভাবেই রাজনৈতিক নেতারা দিকনির্দেশনা দেয়। তার মানে হচ্ছে, পুরো জিনিসটাই অর্থনীতির সাথে সম্প্ক্তৃ। অর্থনীতির কোন মানুষ যদি রাজনৈতির সাথে সম্পৃক্ত হয়, তার জন্য বিষয়গুলো সহজ হয়ে যায়। একটা বিনিয়োগকে লাভজনক করার জন্য, নিরাপদ করার জন্য, টেকসই করার জন্য যে অবকাঠামো করা দরকার, সে সমস্ত অবকাঠামো আমাদের সরকার নিজেই করছে। অথচ অন্যান্য দেশে এগুলো বেসরকারি খাতে হয়। পুঁজিবাদী ব্যবস্থাপনায় সমস্ত কিছুই সরকারকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের দেশে যে পরিমাণ ব্যবসায়ী আমরা আছি, এই দেশে যদি উন্নয়ন করতে হয়, তাহলে সমস্ত ভারী অবকাঠামো সরকারকেই প্রথমে করতে হবে। সরকার কিন্তু কাজটা হাতে নিয়েছে। বেসরকারি খাত যাতে আসতে পারে সেজন্য সরকারের পিপিপি নামে একটা ধারণা আছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ এবং বিওটি এই খাতটা মুক্ত রাখা হয়েছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অর্থনীতিতে লিড দিবে। সরকার সেই ব্যবস্থাও রেখেছে। আমাদের এখানে মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সরকারেরও কিছু ইন্টারভেনশন থাকবে, যেমন টিসিবি, বিআরটিসি ও ট্রেন থাকবে। আবার বেসরকারি বাস থাকবে, বেসরকারি ট্রেন এখনো আসে নাই। এগুলো পিপিপির ধারণার মাধ্যমে আসতে পারে।

আমি সম্পূর্ণভাবে একটা রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠেছি। একটা প্রগতিশীল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবারের মধ্যেই আমার বেড়ে ওঠা। আমি যেখানে জন্মগ্রহণ করেছি, আমার বাবা সেখানে ৫২ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আমার বড় ভাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমার বড় ভাই মিরপুর- মোহাম্মদপুর একটা আঞ্চলিক কমিটিতে ছিলেন। আঞ্চলিক কমিটির শ্রমিক লীগের সভাপতি ছিলেন। তার মানে হল আমি একটা রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠেছি।
রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক এবং বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে যদি তুলনা করেন মুনাফার রেটেরও পার্থক্য আছে। সরকারির চেয়ে বেসরকারীদের ভালো। বেসরকারির চেয়ে মাল্টিন্যাশন আরও ভালো। এটা রিকভারি রেটের কথা বলছি। তার মানে অর্থনীতিতে এই সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্প কলকারখানা যারা চালায়। সেই সমস্ত ব্যক্তি যদি একটা নির্দিষ্ট এলাকায় রাজনীতিতে আসে, যদি পার্লামেন্টে যেতে পারে, তাহলে পার্লামেন্টে অর্থনৈতিক বাস্তবায়ন তার প্রধান কাজ হবে।

৩০০ সংসদ সদস্য যারা হবেন, তারা দেশের রোল মডেল, মেধাবী, দেশপ্রেমিক হবেন। মানুষের জীবন যাত্রার মান কিভাবে উন্নয়ন করা করা যায়, সেটা খুঁজে বের করাই হলো এ ৩০০ সংসদ সদস্যদের একমাত্র ও প্রধান কাজ। দেশের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে, শিল্প কলকারখানা আইনের যে বিধিমালা নীতিমালা আছে এগুলো সংস্কার করা তাদের কাজ। সেখানে যদি কারোর ব্যক্তিগত জীবনে এই সমস্ত শিল্প কলকারখানা বা ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যে থেকে, এগুলোর প্রতিবন্ধকতাগুলো দেখার অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে, এই আইন প্রণয়ন করা, সংস্কার করা তখন অনেকটা সহজ হবে। এসব দিক বিবেচনায় আমি মনে করি, আমি রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠার কারণে, অর্থনীতি এবং শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকায় আমার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে সফল ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবো।

আমার নির্বাচনী এলাকা সারিয়াকান্দি সোনাতলা। এখানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। আমাদের যেহেতু নদী ভাঙ্গন এলাকা, সেজন্য এখানে শিল্প কারখানা হয়নি। যেটা খুবই দরকার। ওখানে অনেক কিছু হতে পারে। ওখানে নদী ভিত্তিক শিল্পায়ন হতে পারে। ওখানে চরের মধ্যে সোলার পাওয়ার এনার্জি তৈরি হতে পারে। কৃষিভিত্তিক ব্যাপক শিল্পায়ন হতে পারে। ফার্টিলাইজার প্রতিষ্ঠান হতে পারে। নদী দিয়ে পরিবহন ব্যবস্থা হতে পারে। নদী খনন করে এ ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কারণ নদীর উপর দিয়েই সারিয়াকান্দি সোনাতলা জনপদ গড়ে উঠেছে। অনেক কর্মকাণ্ড আছে যেগুলো অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করবে। সেই দিক বিবেচনায় আমি মনে করি, ওই অঞ্চলে যদি আমার আসার সুযোগ হয়, তাহলে এটা ঐ অঞ্চলের জন্যই ভালো, আমার জন্য ভালো এবং দেশের জন্যও ভালো।

ওয়ান ফার্মা: একটা ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি। মানুষের যে মৌলিক পাঁচটা জিনিস আছে, সেটার মধ্যে স্বাস্থ্য একটা খাত। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় আমরা অনেক বড় কিছু করেছি। সেটা হল এই দেশটা ছিল গরীব। বাংলাদেশ এখন মধ্যম ইনকামের দেশে পরিণত হয়েছে। এই দেশটায় কালো আইন ছিল। সেখানে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত করেছি। এটা হল আমাদের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের অর্জন। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যখনই বাড়বে তখন তার স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়বে। আজকে আমাদের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির মার্কেট প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার। ৩-৪ বছরের মধ্যে এটা হয়ে যাবে এক লক্ষ কোটি টাকার বাজার। আমাদের দেশ থেকে এখন ১৬০টি দেশ ফার্মাসিটিক্যাল প্রোডাক্টস কিনে নিয়ে যায়। এটা বাংলাদেশের পরিচয় হবে। আগে যেমন সোনালী আঁশ, ইলিশ মাছ, মসলিন কাপড় ছিল বাংলাদেশের পরিচিতি। এখন ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিচয়ে পরিচিত হবে সারা বিশ্বে। এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসা আমাদের খুবই দরকার। সেই কারণে আমি ফার্মাসিটিক্যালে এসেছি। ফার্মাসিটিক্যালে আরো ভালো হবে আগামীতে। আমাদের দেশের মানুষ ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে যাতে বিশ্বমানের ফার্মাসিটিক্যাল প্রোডাক্ট পেতে পারে সেটাই হলো আমার কর্মপরিকল্পনা।

বর্তমান পুঁজিবাজার: যেকোনো বাজার তার সরবরাহ এবং চাহিদার উপর নির্ভর করে। এটাই হলো একটা বাজার নিয়ন্ত্রণ করার প্রধান উপায়। ক্রেতার জন্য ভালো হবে যখন সরবরাহকারী বেশি হবে। বিক্রেতার জন্য ভালো হবে যখন সরবরাহকারী বেশি থাকবে। আমাদের পুঁজিবাজারকে আমরা যেখানে নিতে চাই, সেই জায়গায় আমরা নিতে পারিনি। আইনের সংস্কার করে এখানে বড় বড় কোম্পানির শেয়ার আনতে হবে। এখন ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানীগুলো শুধু পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নিজেরা ভোগ করছেন। অথচ রাষ্ট্রের আরো মানুষ আছে যারা তাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে অংশীদার হতে পারেন। সেটা আইনের সংস্কার করে বাজারে আনতে হবে। এ জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদী শিল্প আইন করতে হবে। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে, বছরে বছরে সুদ দিয়ে আপনি একটা ভারী শিল্প গড়ে তুলবেন সেটা সম্ভব না। এখানে পুঁজিবাজার থেকে টাকা আসতে হবে।

এর চেয়ে ভালো হলো বন্ড মার্কেট। রাষ্ট্রীয় বন্ড হবে, বেসরকারি কোম্পানির বন্ড ছাড়বে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোর প্রধান ফাইন্যান্সিয়াল প্রডাক্ট কিন্তু বন্ড। তারা ধান, চাল এগুলো বিক্রি করে না। তাদের মেইন প্রোডাক্ট হল ফাইন্যান্সিয়াল প্রডাক্ট। টাকা ট্রান্সফার করা। সার্ভিস বিজনেস হল ওদের দেশের ব্যবসা। আমাদের দেশের ব্যাংকিং সেক্টরগুলোতে উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশে অনেক ব্যাংক আছে। প্রাইভেট সেক্টরগুলো অনেক ভালো করছে। পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেট ওপেন করলে দীর্ঘ মেয়াদী বা ভারি শিল্পায়ন করা সহজ হবে। আইনের সংস্কারের দরকার আছে। সেই জন্যই বিজ্ঞ, মেধাবী, প্রজ্ঞাবান এবং নীতি-নৈতিকতা-আদর্শ-মূল্যবোধ দিয়ে যে ব্যক্তি জীবনটা গড়েছেন, এরকম ব্যক্তিকে সংসদে আসা দরকার। যেটা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন। সমস্ত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে জনগণ নির্ধারণ করবে কে এসব গুণে গুণান্বিত। শেখ মুজিবুর রহমান অর্থনৈতিক সংস্কারে হাত দিয়েছিলেন, যেটা আমরা করতে পারিনি। রাষ্ট্র অনেক দূর এগিয়েছে। নিম্ন ইনকামের দেশ থেকে মধ্য ইনকামের দেশে পরিণত হয়েছে। আমাদের অনেক অবকাঠামো নির্মাণ হয়েছে। স্বাধীনতার পরে যে বাজেট ছিল শত কোটি টাকার মধ্যে, ১৫ বছর আগে সে বাজেট ছাড়িয়েছে হাজার কোটি টাকার ওপরে। এখন তা লক্ষ কোটি পার হয়ে ট্রিলিয়ন পার হয়ে গেছে। এখন সাত লক্ষ কোটি টাকা আমাদের বাজেট।

আমাদের দেশের উন্নয়ন চোখে পড়ার মত। যারা অর্থনীতির কাজ করে, যারা সমাজ নিয়ে কাজ করে, রাজনীতি নিয়ে যারা কাজ করে, সবাই যদি সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করে, তাহলে কিন্তু দেশটা অর্থনৈতিকভাবে আরো এগিয়ে যাবে। আমাদের পরিবেশের অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা, দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমে গেছে। স্কুলের ড্রপ আউট কমে গেছে, এগুলো কিন্তু একটা ভালো লক্ষণ। অন্যদিকে মৎস্য স্বীকার করে জীবিকা নির্বাহ করা, এটা কিন্তু একটা গরীব দেশের লক্ষণ। সম্পূর্ণ দেশটা কৃষির উপর নির্ভরশীল। এটা কিন্তু গরিব দেশের লক্ষণ। সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সেই কাজগুলো আমাদের দেশে হচ্ছে। শিল্প কলকারখানা থেকে দূষিত বর্জ্য বের হবে না, পাখি থাকবে, সমস্ত প্রাণী থাকবে, বায়ো ডাইভারসিটি থাকবে, জীববৈচিত্র থাকবে, সেটাই হল একটা উন্নত দেশ। এমন একটা দেশের প্রত্যাশাই আমরা করি।

কৃষিবিদ কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান
ব্যবস্থাপনা পরিচালক,
ওয়ান ফার্মা ও ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রুপ