সৌদির বিদেশি স্ত্রীরা অভিবাসী শ্রমিকদের মতই

সৌদি আরবের ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের রাজ্যে এখন নারীদের স্বাধীনতার গণ্ডি বেড়েছে। গাড়ি চালানো, স্টেডিয়ামে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন নারীরা। কিন্তু সৌদি আরবের নাগরিকদের বিদেশি স্ত্রীদের এখনো অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গেই তুলনা করে উদারপন্থার দিকে এগোনো দেশটির সরকার।

গতকাল সোমবার সৌদি আরবের পাসপোর্ট অধিদপ্তর সেখানে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকদের আকামা নবায়ন করতে অতিরিক্ত তিন দিন সময় দিয়েছে। তবে সেসময়ের মধ্যে নবায়ন না করলে তাকে গুনতে হবে ৫০০ রিয়াল। টাকার অঙ্কে যা দাঁড়ায় ১০ হাজার টাকা। এছাড়া কেউ নিজ দেশে ছুটিতে যেতে চাইলে তার বহি:গমন ও আগমন ভিসার ফি ১০০০ রিয়াল পরিশোধ করতে হয়।

একই নিয়ম সৌদি আরবে বসবাসরত বিদেশি নারীদের জন্যও। যারা সৌদি নাগরিকের সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে দেশটিতে অবস্থান করছেন। এ নারীরা সৌদি স্বামীর সঙ্গে বসবাস করেন। তাদের সন্তানরাও সৌদি আরবের নাগরিকত্ব পান।

কিন্তু সৌদি আরবের বসবাসের অনুমতি বহাল রাখতে তাদের নির্দিষ্ট সময় পরপর নবায়ন করতে হয়। সৌদি আরবের পাসপোর্ট বিভাগে তাদের তুলনা করা হয় অভিবাসী শ্রমিকদের মতই। সৌদি নাগরিকদের পোষ্য হিসেবে বিবেচনা করে না সৌদি সরকার।

বর্তমানে সৌদি স্বামীদেরও তাদের বিদেশি স্ত্রীর বসবাসের ভিসা বা আকামা নবায়নে প্রতিবছর ৫০০ সৌদি রিয়াল ব্যয় করতে হয়। এমনকি বিদেশি নারীদের প্রতিবার নিজ দেশে যেতেও ভিসা ফি দিতে হয়। নিজের পেশা পরিবর্তন করতেও অর্থ ব্যয় করতে হয় তাদের।

সব অধিকারসহ ও আইনগতভাবে সৌদি নাগরিককে বিয়ে করার পরও বিদেশি নারীদের সঙ্গে সৌদি সরকারের এমন বৈষম্যমূলক আচরণ কেন তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। বিদেশি নারীদের সৌদিতে নাগরিকত্ব পেতে বিয়েই যথেষ্ট নয় এমনটাই ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

ইতোমধ্যে সৌদি সরকার তাদের ভিশন ২০৩০ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে। সম্প্রতি সৌদি শ্রমবাজারে সৌদি নারীদের মতোই সমান সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে সন্তান জন্মদানের কারণে নাগরিকত্ব পাওয়া বিদেশি নারীদের। সৌদি নাগরিকদের মধ্যে প্রবাসীদের বিয়ে করার হার বৃদ্ধির কারণে ও একই সঙ্গে সন্তান জন্মের পর সন্তান নাগরিকত্ব পেলেও, মায়েরা নাগরিকত্ব না পাওয়ায় তারা অনেক রাষ্ট্রীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতেন।

গত ৬০ বছরের মধ্যে নাগরিকত্ব নিয়ে দেশটিতে বড় ধরনের কোনো সংশোধন করা হয়নি। ২০০৪ ও ২০০৭ সালে ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন আনলেও গত বছর নভেম্বরে মোট ৩টি অধ্যায়কে সংশোধন করে দেশটির শূরা কাউন্সিল। সংশোধন অনুযায়ী, সৌদি আরবে শিশুর জন্ম দিলে শিশুর পাশাপাশি মায়েরও দেশটির নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন পাশ হয়। তার এক বছর পর গত অক্টোবর মাসে এই আইন করা হয়।

এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। দেশটির স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা অনুমতি পেয়েছে মুঠোফোন চালানোর। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে পরিবারদের স্টেডিয়ামে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার হচ্ছে।

তবে উদারপন্থী সৌদি আরব গড়তে সৌদি যুবরাজের ভিশন ২০৩০ পরিকল্পনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বৈবাহিক সূত্রে দেশটিতে থাকা বিদেশি নারীরা বা সন্তান জন্মদানের সূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়া মায়েদের প্রতিবছর আকামা নবায়ন।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ২০ নভেম্বর ২০১৭