আঁখি এখন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পাটখোলা গ্রামের মেয়ে আঁখি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাঁত শ্রমিকের ঘরে জন্ম এই কিশোরীর। কিন্তু সেই আখিঁর গলাতেই এখন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ফুটবলারের মালা। সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলের ফাইনালে রোববার ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতে বাংলাদেশের মেয়েরা। এদিন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার উঠেছে আঁখির হাতে। অথচ কদিন আগেই যার দিন কাটতো মায়ের সঙ্গে সুতো বুনে। বালিকা সাফের সেরা খেলোয়াড় হওয়ায় সিরাজগঞ্জে আঁখির গ্রাম পাটখোলাতে আন্দের বন্যা বইছে।

শৈশব থেকেই স্বপ্ন ছিল ফুটবলার হওয়ার। অন্তরে সেই প্রত্যয় নিয়ে পথ চলছে আঁখি। প্রতিবেশী আর স্বজনদের বাঁকা কথা উপেক্ষা করে ফুটবল খেলে কুড়িয়ে যাচ্ছে সুনাম। নিজের অদম্য চেষ্টায় কিশোরী এই ফুটবলার নজর কেড়েছে ফুটবলপ্রেমীদের। সাফ অনুর্ধ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে লিগ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভুটানকে ৩-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের প্রথম দুটি গোলই আঁখির। অথচ তার পজিশন ডিফেন্ডার। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচও নির্বাচিত হয় বিকেএসপির নবম শ্রেণীর এই শিক্ষার্থী। আঁখি এখন দেশের বয়সভিত্তিক ফুটবলে অটোমেটিক চয়েস। তীক্ষ্ন মেধায় সামলায় রক্ষণদেয়াল, যেভাবে সামলেছে নিন্দুকদের।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পাড়খোলা গ্রাম। শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে তাদের বাড়ি। বাবা আক্তার হোসেন। ছোট্ট টিনের ঘরে বসতি আঁখির পরিবারের। অসুস্থ বাবার সংসারের চাকা ঘোরে তাঁত বুনে। যা থেকে প্রতিদিনের খাবার যোগানোই দুঃসাধ্য। সেখানে মেয়েকে ফুটবল খেলতে পাঠানো ছিল বিলাসিতা। শুরুতে তাই তারা রাজি হননি। তাদের রাজি করান স্কুল শিক্ষক মনসুর রহমান। কারণ সবার আগে তিনিই বুঝতে পেরেছিলেন এই মেয়ে একদিন ফুটবল খেলে অনেকদূর যাবে। বাড়ির পাশে মনসুর আহমেদ স্যারের অধীনে অনুশীলন করেছে আঁখি।

২০১৪ সালে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবলের মধ্যদিয়ে আঁখির উঠে আসা। শাহজাদপুর ইব্রাহিম বালিকা বিদ্যালয়ের হয়ে খেলেন আঁখি। খেলায় রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায় পর্যন্ত উঠেছিল স্কুলটি। এরপর ২০১৫ সালে জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক আসে তার। এর আগে তাজিকিস্থানে এএফসি অনুর্ধ-১৪ আঞ্চলিক ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম খেলে আঁখি। সদ্য শেষ হওয়া অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ ছিল তার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট।
পাড়াগাঁয়ের মেয়েটি চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে পেয়েছে সফলতা। টেলিভিশন, পত্রিকায় আঁখির ছবি দেখে পুলকিত হয় মা-বাবা। আর সেই নিন্দুকদের কাছ থেকেও আসে প্রসংসা। আঁখি আজ আদর্শ নিজ গ্রামের মেয়েদের কাছে।
কথা হয় আঁখির বাবার সাথে। তিনি বলেন, ‘আমার সারা জীবনের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে আমার মেয়ে আঁখিকে দিয়ে।’ এই বলে তিনি কেঁদে ফেলেন।
আজকের বাজার: সালি / ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭