ভ্যাট নিবন্ধন মেলায় ‘সাড়া’

রাজধানীর শ্যামপুরের পঞ্চাধ্বোর্ব ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম। ভ্যাট সচেতন মানুষ। ভ্যাট প্রদান করে দেশের উন্নয়নে অংশীজন হতে চায়। মনস্থির করলেন অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়ার।

গণমাধ্যমে ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়ার বিজ্ঞাপন দেখেছেন। সময় হয়ে উঠেনি নিবন্ধন নেওয়ার। মঙ্গলবার ১৬ মে রাতে অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন মেলার মাইকিং শুনলেন। সাথে হাতে পেলেন লিফলেট। লিফলেট আর মাইকিং জানতে পারলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আরও সহজে ভ্যাট নিবন্ধন করতে ১৬ মে থেকে আয়োজন করছে ‘অনলাইন ভ্যাট নিবন্ধন মেলা’।

নির্দেশনা অনুযায়ী মঙ্গলবার ১৬ মে দুপুরে রাজধানীর জাতীয় ক্রীড়া ভবনে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা পূর্বে এসে মাত্র ৫ মিনিটে হাতে পেয়ে গেলেন নিবন্ধন সনদ।

এত কম সময়ে সনদপত্র পেয়ে আমিনুল ইসলাম অর্থসূচকে জানান, এত কম সময় ও সহজে নিবন্ধন করতে পারবো ভাবতে পারিনি। শুধু আমি নই, মেলায় আগত সবাই সহজে সনদ পাচ্ছে।

নয়াবাজার এলাকার আয়রণ শীট ব্যবসায়ী মো. নান্নু মিয়া। সকাল ১১টায় ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটে অনলাইন ভ্যাট নিবন্ধন মেলায় এসে রীতিমত অবাক হলেন।

মাত্র ২০ মিনিটে অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন নিতে পেরে খুবই খুশি। নিবন্ধনে বেশ কিছু কাগজপত্র লাগলেও কম সময় এবং কর্মকর্তাদের সুন্দর ব্যবহারে মুগ্ধ তিনি।

শুধু আমিনুল ইসলাম আর নান্নু মিয়া নয়, অনলাইন ভ্যাট নিবন্ধন মেলার প্রথম দিন অনেকেই ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়া আর কাঙ্ক্ষিত ভ্যাট সেবা পেয়ে এনবিআরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।

ঢাকা পূর্ব কমিশনারেটের কমিশনার ড. একেএম নুরুজ্জামান বলেন, অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে সেবা দিতে আমরা অনলাইন ভ্যাট নিবন্ধন মেলার আয়োজন করেছি। এই কমিশনারেটে মেলা ১৮ মে পর্যন্ত চলবে। মেলা থেকে ভ্যাট নিবন্ধন নিতে স্টেকহোল্ডারদের চিঠি দেয়া, লিফলেট বিতরণ, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। মেলায় আসতে অভিনব উদ্ভাবন মাইকিং করা হয়েছে। প্রথমদিনই আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আশা করি ৩ দিনে ২ হাজার নিবন্ধন করা যাবে। মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে।

কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের (ঢাকা দক্ষিণ) কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান অর্থসূচককে বলেন, প্রথমদিনই ব্যবসায়ীরা মেলায় বেশ সাড়া দিয়েছেন। তার প্রমাণ সকাল থেকে দীর্ঘ লাইন দিয়ে নিবন্ধন নিয়েছেন। মেলার মাধ্যমে নতুন ভ্যাট আইন ও অনলাইনে নিবন্ধন বিষয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে ভুল ধারণা ছিল তা সহজ হয়ে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা পূর্ব কমিশনারেটে অনলাইন ভ্যাট নিবন্ধন মেলার উদ্বোধন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান। এসময় তিনি ব্যবসায়ীদের হাতে ভ্যাট নিবন্ধনের সনদপত্র তুলে দেন।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এনবিআর ব্যবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন সেবার ব্যবস্থা করেছে। আমরা অতীতে করদাতাদের জন্য আয়কর মেলা, আয়কর সপ্তাহ, ভ্যাট সপ্তাহ, রাজস্ব হালখাতার আয়োজন করেছি। এবার নতুন অনলাইন ভ্যাট নিবন্ধন মেলা যুক্ত হয়েছে।

ভ্যাট নিবন্ধন মেলা সম্পর্কে তিনি বলেন, যেহেতু ভবিষ্যতে আমরা অনলাইনে ভ্যাট সেবা দেব। কিভাবে সে সেবা দেওয়া যায় সেজন্য এ মেলা পরিচিতি লাভ করবে। সবচেয়ে বড় বিষয় মেলা থেকে ব্যবসায়ী করদাতার মূহূর্তেই নিবন্ধন সনদপত্র হাতে হাতে পেয়ে যাবেন। মেলার প্রথম দিনই বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা দেখছি। কর্মকর্তারা হাসি মুখেই এ সেবা দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ব্যবসাবান্ধব এনবিআর ও ভ্যাট বিভাগ স্থাপনের যে প্রয়াস তার প্রমাণ এ ভ্যাট নিবন্ধন মেলা। ব্যবসায়ী ও করদাতারা মেলায় সেবা নিতে ছুটে আসছেন দেখে খুবই ভালো লাগছে। নিয়ে দেশকে ভালোবেসে তারা দেশের জন্য ভ্যাট দেবেন। ‘ভ্যাট দিচ্ছেন জনগণ, দেশের হচ্ছে উন্নয়ন’ এ স্লোগান ভ্যাট মেলার মাধ্যমে বাস্তবে রূপান্তরিত হচ্ছেন।

চেয়ারম্যান বলেন, অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধনে সাড়া বেশ সন্তোষজনক। ২৩ মার্চ ভ্যাট অনলাইন নিবন্ধন শুরুর পর থেকেই এ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ভ্যাটের আকার আমরা যেহেতু বিস্তৃতি করতে চাই সাধারণ মানুষ যত বেশি ভ্যাট সেবা পাবে তত বেশি ভ্যাট দিতে আগ্রহী হবে।

তিনি বলেন, ই-টিআইএন, ভ্যাট নিবন্ধন ব্যবসায়ী সমাজের কাছে এখন অত্যন্ত পরিচিত বিষয়। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে সুবিধা পান। জাতীয় পরিচয়পত্রের পাশাপাশি ই-টিআইএন, ভ্যাট নিবন্ধন দুটো গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধন নম্বর। বিদেশ যাবার সময় বাড়তি পাসপোর্ট নম্বর হলেই যেকেউ পরিপূর্ণ মানুষ। আমরা সে যাত্রা দেখতে পাচ্ছি।

সপ্তাহব্যাপী অনলাইন ভ্যাট নিবন্ধন মেলা ১৬ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত চলবে। ১৬ মে থেকে ১৮ মে ৩ দিন ঢাকার চারটি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট (পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ) ও রংপুর ভ্যাট কমিশনারেট মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এছাড়া ১৮ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত রাজশাহী, যশোর, খুলনা এবং ২১ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট এ মেলার আয়োজন করবে।

ভ্যাট নিবন্ধন মেলায় ব্যবসায়ীদের যেসব কাগজপত্র সঙ্গে আনতে হবে তাহল, ই-টিআইএন নম্বর বা সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক হিসাব নম্বর, লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ই-কর্পোরেশন নম্বর ও পরিচালক বা অংশীদার বা স্বত্ত্বাধিকারীর পদবী, শেয়ার এর কাগজপত্র আনতে হবে।

এছাড়া নিবন্ধনের সময় বার্ষিক টার্নওভারের পরিমাণ, নিজস্ব ই-মেইল ও মোবাইল নম্বর সরবরাহের ঠিকানা, কেন্দ্রীয় নিবন্ধন না শাখা নিবন্ধন গ্রহণ করবেন এ বিষয়ক সিদ্ধান্ত, উৎস কর্তনকারী কিনা, সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য পণ্য উৎপাদন করে কিনা, ব্যবসায় ও অর্থনৈতিক কার্যরক্রমের প্রকৃতির তথ্য দিতে হবে। মেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে বিনামূল্যে ৯ ডিজিটের এ নিবন্ধন করা যাবে।