সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে এ বছর

বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে এ বছর আরও সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হতে যাচ্ছে। বাড়তি বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য সঞ্চালন লাইনের সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ করছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লি.(পিজিসিবি)। গেল বছর ৩ হাজার ৫৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরিবহনের মতা বেড়েছে। তবে চলতি বছর উৎপাদনে আসা অধিকাংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্রই তরল জ্বালানি নির্ভর। এতে বিদ্যুতের ব্যয় বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে মান সম্মত বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে এ সরকারের। এজন্য বিদ্যুতের দরকার ২৪ হাজার মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ১৬ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ অপরিহার্য। দেশের উন্নয়নের সাথে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, এই চাহিদা পূরণে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারাবাহিক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ বছরে চার হাজার ৬৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করা হবে।
২০১৭ সালে সাতটি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১১৮৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হয়েছে জাতীয় গ্রিডে। এ বছর চারগুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত বছরের জুলাই মাসে সরকারের বছরভিত্তিক পরিকল্পনায়, ২০১৮ সালে নতুন করে ২২৫২ মেগাওয়াট, ২০১৯ সালে ৫০৯৯ মেগাওয়াট, ২০২০ সালে ৩৪১৪ মেগাওয়াট এবং ২০২১ সালে ৪২৬৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কথা বলা হয়। কিন্তু গত গ্রীষ্মের সময় লোডশেডিং পরিস্থিতি দেখে এই পরিকল্পনা পরিবর্তন করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৪৬৭৬ মেগাওয়াট, ২০১৯ সালে ৪৮৩৩, ২০২০ সালে ৪০৭২, ২০২১ সালে ৩০৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। ২৪টি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ২০১৭ সালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ক্রয় চুক্তি করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ১৩টি কেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা।
তবে এসব কেন্দ্রের বেশিরভাগই তরল জ্বালানি-নির্ভর হওয়ায় উৎপাদন খরচ তথা বিদ্যুতের দাম বেশি পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এমনিতেই সরকার পিডিবিকে ভর্তুকি দিচ্ছে। এরপর তরল জ্বালানি নির্ভর এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে ভর্তুকীর পরিমান আরও বাড়বে। তখন গ্রাহক পর্যায়ে আবারও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, লোকসানের দোহাই দিয়ে প্রতি বছর সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। এই দাম বৃদ্ধির আগে নিয়ম রক্ষার প্রহসনের শুনানি করছে বিইআরসি। শুনানীতে যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলেও বিদ্যুতের দাম ঠিকই বাড়ছে। এতে দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
তার মতে, দেশের উন্নয়নে সাশ্রয়ী দামে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ আবশ্যিক। এজন্য কারিগরি বিবেচনায় যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহন ও সঠিক সময়ে তার বাস্তবায়ন করতে হবে। তড়িঘড়ি করে ছোট ছোট তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। ফলে সরকার আবার দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা শুরু করবে। এটা বিদ্যুতের কোন টেকসই সমাধান না।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ২০১৮ সালে উৎপাদনে আসা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ৯টি সরকারি ব্যবস্থাপনার। এতে মোট উৎপাদন হবে ১৬১৯ মেগাওয়াট। এর মধ্যে তিনটি গ্যাসভিত্তিক, তিনটি দ্বৈত জ্বালানি (ডিজেল অথবা গ্যাস দিয়ে চালানো হবে), একটি কয়লা, একটি সৌর এবং একটি ফার্নেস অয়েল দিয়ে পরিচালিত হবে।

বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্টান ১৫ টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে। যার মতা এক হাজার ৬৫৭ মেগাওয়াট। এরমধ্যে সাতটি তেলচালিত, একটি গ্যাস, চারটি সৌর, তিনটি দ্বৈত জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্র (গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকায় এসব কেন্দ্র মূলত তেল দিয়ে চালানো হবে)। এই বাইরে তেলচালিত ৯০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি কেন্দ্র দরপত্র প্রক্রিয়াধীন অবস্থায়। এগুলোও বেসরকারি খাতের। এছাড়া, ভারতের বেসরকারিখাত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করার জন্য ভেড়ামারায় উপকেন্দ্র করা হচ্ছে।

সরকারের পরিকল্পনা বলছে, আগামী এক মাসের মধ্যে সরকারি ৬টি কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। এরমধ্যে রয়েছে ঘোড়াশাল ৩৬৫ মেগাওয়াট, সিরাজগঞ্জ ২২৫ মেগাওয়াট এবং সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট। এগুলোর কাজ ৮৫ থেকে ৯৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। এর বাইরে ভেড়ামারা ৩৬০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি এরইমধ্যে পরীামূলকভাবে চালু করা হয়েছে।
বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর মধ্যে মুন্সীগঞ্জের কমলাঘাট ৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটিও পরীামূলকভাব চালু হয়েছে। কুশিয়ারা ১৬৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ।
এদিকে ২০১৬ সালের তুলনায় গেল বছর বিদ্যুতের সঞ্চালন মতা বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ২০১৭ সালে সারাদেশে পাঁচটি গ্রিড উপকেন্দ্র স্থাপন ও ২০টি গ্রিড উপকেন্দ্র সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সমতা বাড়িয়েছে পিজিসিবি। এ সময়ে নতুন ৩৮৬ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন চালু হয়েছে। এর ফলে গত এক বছরে প্রায় ৩ হাজার ৫৮৫ মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সমতা অর্জন করেছে পিজিসিবি। এতে আসছে গরমে আরও বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ঠরা।

পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম-আলবেরুনী বলেন, জনগনের কাছে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পৌছে দিতে পিজিসিবি ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে আরও প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

আজকের বাজার: এনএল/ ওএফ/ ২২ জানুয়ারি ২০১৮